ক্রিয়েটিভ পেশা : অ্যানিমেটর

একটি সময় ছিল যখন আমাদের দেশে কম্পিউটারের সাহায্যে শুধু টেক্সট কম্পোজ করা হতো আর কিছু গদ বাঁধা সফটওয়্যারের ব্যবহার করে হিসাব করা, অফিসিয়াল কাজ চালানো অথবা কিছু মাত্রায় বিনোদনে ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে পিসি হয়ে ওঠেছে সম্পূর্ণ সিনেমা বানানোর কারিগর।

মাল্টিমিডিয়ার প্রধান বাহন হলো কম্পিউটার। আর আমাদের দেশে মাল্টিমিডিয়ায় বিস্তারটাও ছিল সীমিত। কিন্তু দিন বদলের সাথে সাথে এর বিস্তৃতি এত মাত্রায় বেড়েছে যে অ্যানিমেটেড কার্টুন ছবি তৈরি করে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে এবং আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।

মাল্টিমিডিয়া কী? : মাল্টিমিডিয়া জগতটাকে আপাত অর্থে বিশ্লেষণ করা সহজ নয়। কারণ এর বিস্তৃতি ব্যাপক। টেক্সট থেকে শুরু করে গ্রাফিক্স, স্টিল ফটোগ্রাফি, অডিও, ভিডিও, এডিটিং, অ্যানিমেশন, ওয়েব পেজ এবং আরো অনেক কিছু রয়েছে মাল্টিমিডিয়ার আওতায়।

অ্যানিমেশন : অ্যানিমেশনের প্রথম ধাপ শুরু হয় একটা সাধারণ ড্রইং থেকে। তারপর টু ডাইমেনশন, থ্রি ডাইমেনশন অথবা মাল্টি ডাইমেনশন আকার দিয়ে তাকে চলতি ফিরতি ক্যারেক্টার বানানো হয়। অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রটা খুবই মজার। কেননা ডামি দিয়েই এর সাহায্যে সকল কাজ করা সম্ভব।

চারুকলার ছাত্র হলে ভালো, না হলেও অসুবিধা নেই। আঁকাআঁকিতে যাদের হাত আছে তারা সকলেই ভালো করতে পারেন এ পেশায়। সঙ্গে লাগবে সফটওয়্যারের ধারণা। ভালো হয় যদি সাউন্ড, অভিনয় সমপর্কেও ধারণা থাকে। ছোট ছোট ফিল্ম, কার্টুন, কাহিনিচিত্র ও বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে আজকাল অ্যানিমেশনের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। যারা সৃজনশীল, তাদের এই পেশায় ভালো করার সম্ভাবনা বেশি।

টুডি-থ্রিডি

কোনো একটি অবয়ব দ্বিমাত্রিকভাবে তৈরি করলে তাকে টুডি ডিজাইন বলে। আর ত্রিমাত্রিকভাবে তৈরি করলে তাকে থ্রিডি বলে। এমনিতে টুডি ও থ্রিডির পার্থক্য খুব একটা ধরা পড়ে না। তবে কাজ করতে হয় আলাদাভাবে। টুডি থেকে থ্রিডি কাজের দাম অনেক বেশি। লোকেরও খুব অভাব। অ্যানিমেশনের একদম প্রথমে টুডি ডিজাইন শিখতে হয়।

গ্রাফিক ডিজাইনার , না অ্যানিমেটর

অ্যানিমেশন শিখে নিজেই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেন। এছাড়া ইন্টারনেটে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করা যায়। বিজ্ঞাপনি সংস্থা এবং টিভি চ্যানেলেও কাজের সুযোগ রয়েছে। কার্টুন অ্যানিমেশন আর গ্রাফিক্সের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। তবে দুটোরই বেসিক এক। বেসিক জানার পর নিজের ইচ্ছেমতো যেকোনোটি বেছে নেওয়া যায়। টিভি চ্যানেল কিংবা বিজ্ঞাপনি সংস্থায় গ্রাফিক্স ডিজাইনারেরও চাহিদা প্রচুর।

অ্যানিমেটরের কাজ

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অ্যানিমেটরের চাহিদা বাড়ছে। দেশে এখনো ভালো অ্যানিমেটরের সংখ্যা হাতেগোনা। কার্টুন বা গেইম তৈরির কাজও করেন অ্যানিমেটররা। এছাড়া মোবাইল কনটেন্ট, ওয়েব ডিজাইনের কাজেও অ্যানিমেটরদের দরকার হয়।

আয় কেমন

দেশে এখন পর্যন্ত যে কয়টি অ্যানিমেশন প্রতিষ্ঠান আছে তাদের কাজের মান উন্নত। আয়ও ভালো। বিদেশ থেকে অনেক কাজ পায়। প্রথম প্রথম একজন অ্যানিমেটরের মাসিক বেতন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা হয়। আর দক্ষতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকাও হয়। এখানে কাজের কোনো অভাব নেই। তবে দক্ষ অ্যানিমেটরের যথেষ্ট অভাব আছে।

কোথায় শিখবেন

শুধু অ্যানিমেশন শেখানোর জন্য দেশে এখনো তেমন ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান শিখিয়ে নিয়ে চাকরি দেয়। এদের মধ্যে টুন বাংলা, ড্রিমার ডংকি, অগ্নিরথ, ক্লিক স্টুডিও, অ্যানিমিডিয়া অন্যতম। চাইলে এসব প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে আগ্রহের কথা জানাতে পারেন।

যেসব বিষয় জানতে হবে

ছবি আঁকার পাশাপাশি কমিপউটারেও দক্ষতা প্রয়োজন। পেগ বার, পাঞ্চ মেশিন, লাইট বক্স ও কমিনেটর ইত্যাদি সফটওয়্যার সমপর্কে ধারণা থাকতে হবে। এ ছাড়াও টুডির জন্য টুন বুন, ওপাস, হারমনি, রিটাচ এবং থ্রিডির জন্য ব্লেন্ডার, মায়া, থ্রিডি ম্যাক্স ইত্যাদি সফটওয়্যারগুলো জনপ্রিয়। তবে কমিপউটারের সঙ্গে পেন ট্যাবলেট না থাকলে অ্যানিমেশন করা সম্ভব না। কারণ এ পেন ট্যাবলেট দিয়েই কার্টুনের অবয়বগুলো আঁঁকা হয়। এ ছাড়া ক্লায়েন্টের পছন্দ অনুযায়ী নকশা করতে আরো সফটওয়্যার লাগতে পারে। আর বেসিক ধারণা থাকতে হবে ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, ফ্ল্যাশ, এডবি প্রিমিয়ারের ওপরও।

যোগ্যতা

মাল্টিমিডিয়া জগতে কাজ করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতাকে কোনো সঠিক মাপকাঠিতে মাপা সম্ভব নয়। কারণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যার যত জ্ঞানের পরিধি যত বিস্তৃত, সে তত কাজের বিস্তার ঘটাতে পারবে। তবে ন্যূনতম এইচএসসি পাশ করা জরুরি। কেননা কম্পিউটারের বিভিন্ন অপশন ইংরেজিতে বুঝে কাজ করতে হয়। তবে মাল্টিমিডিয়ায় কাজ করার জন্য প্রধান বিষয় হলো সৃজনশীলতা এবং নান্দনিকতা। শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি এ কাজের উত্কর্ষতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। সেই সাথে নিজে শেখার প্রবল আগ্রহ আর চর্চা থাকা চাই। নিজেকে আপডেটেড রাখতে হবে প্রযুক্তির সাথে। দক্ষতা বাড়াতে হবে মাল্টিমিডিয়ার সফটওয়্যারগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে। মাল্টিমিডিয়ায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে চাই অনেক বেশি চর্চা আর নতুন নতুন আবেদন। তাহলেই প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অ্যানিমেটরের পেশাটা আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে নতুন বলা যায়। এই পেশার ক্ষেত্রে তাই আমাদের সম্ভাবনার ক্ষেত্রটাও অনেক বড়। সৃজনশীলতা, চর্চা আর নিজের জ্ঞানের সঠিক ও সর্বোচ্চ ব্যবহার করে একজন মানুষ এ শিল্পে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন অনায়াসে। এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করার এখনই সময়।

সূত্র : ইত্তেফাক  | ১১ এপ্রিল ২০১২, বুধবার

1 thought on “ক্রিয়েটিভ পেশা : অ্যানিমেটর”

Comments are closed.

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top