প্রিন্ট মিডিয়ায় চ্যালেঞ্জিং ৫ ক্যারিয়ার

ভালো একটি পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে যে কোনো তরুণ তরুণীই সব সময় থাকেন উৎসুক। মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা চিন্তা করেন কোন পেশায় গেলে ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময়। চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসাবে বর্তমান সময় প্রিন্ট মিডিয়াতে তারণ্যের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। নিজেকে একজন প্রিন্ট মিডিয়ার কর্মী হিসেবে দেখতে অনেকেই এক্সাইর্টিং ফিল করেন। প্রিন্ট মিডিয়া বা সংবাদপত্রে ক্যারিয়ার গড়ার প্রস্তুতি পর্ব এবং এ মিডিয়ায় কাজ করার আনন্দটাই বা কী ? সংবাদপত্রের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন কাদের বাবু

যে কোনো পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে হলে সে পেশা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরি। সংবাদপত্রে যারা কাজ করতে আগ্রহী তাদের এ মিডিয়ার বিভিন্ন দিকের ওপর যথেষ্ট পড়াশোনা করে তবেই আসা উচিত।
যারা সাংবাদিকতায় হাতে খড়ি দিতে চান তাদের জেনে রাখা ভালো যে, ইচ্ছে করলেই আপনিও একজন সাংবাদিক হতে পারবেন কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে এগুতে পারলে। শুরুটা কন্ট্রিবিউটিং দিয়ে; পর্যায়ক্রমে রিপোর্টার কিংবা ফটোজার্নালিস্ট এমনকি এক সময় পত্রিকার সম্পাদকও হওয়া যায়। তবে দেখার বিষয় হলো- আপনি সাংবাদিকতার কোন দিকটা পছন্দ করেন। ছবি তুলতে ভালো লাগলে কিংবা আগ্রহ থাকলে হতে পারেন ফটোজার্নালিস্ট। লেখালেখিতে হাত থাকলে কন্ট্রিবিউটিং দিয়ে শুরু করতে পারেন, পরবর্তীতে হতে পারেন রিপোর্টার।

শুরুটা কন্ট্রিবিউটিং দিয়ে
সংবাদপত্রে যারা কাজ করতে চান তারা শুরু করতে পারেন কন্ট্রিবিউটিং দিয়ে। মেধাবী হলে পড়াশোনার পাশাপাশি একজন ছাত্র বা ছাত্রী কন্ট্রিবিউটিং করে ভালো উপার্জন করতে পারে। তৈরি করতে পারে নিজেকে রিপোর্টার বা ফটোগ্রাফার হিসেবে। বাংলাদেশের স্বনামধন্য সব দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক পত্রিকায় ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে কন্ট্রিবিউটিং সিস্টেম। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত পত্রিকায় লিখে উপার্জন করেছেন। বিভিন্ন দৈনিকে কন্ট্রিবিউটিং করছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংবাদপত্রের প্রতি ভালোবাসা, নেশা থেকেই পত্রিকা লেখালেখির সঙ্গে জড়িত হন সবাই। এছাড়া ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার হিসেবে সাংবাদিকতাকে নেয়ার জন্য ছাত্রাবস্থায় লেখালেখির সঙ্গে জড়িত হন। সাংবাদিকতায় পড়াশোনার সঙ্গে ইন্টার্নিও হয়ে যায় (মানে হাতে কলমে শিক্ষা) কন্ট্রিবিউটিংয়ের মাধ্যমে। নিয়মিত লেখালেখি করে মাসে ৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা উপার্জন করা সম্ভব।

কাজ যখন অনুসন্ধান
নতুন কিছু জানার আগ্রহ, পরিশ্রম করার মানসিকতা, মেধার সঙ্গে শ্রমের সদ্ব্যবহার ও ডিটারমাইন্ড থাকলে পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসলে সাংবাদিকতা পেশায় আসা যায়- বললেন সাপ্তাহিক এর সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা। তিনি রিপোর্টার হিসেবে সাপ্তাহিক ২০০০ এ যোগদান করে পরবর্তীতে নিজ যোগ্যতায় সেই পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি সাপ্তাহিক এর সম্পাদক।
রিপোর্টিংয়ে ক্যারিয়ার সম্পর্কে তিনি বলেন, সাংবাদিকতায় তরুণরা বেশ ভালো করছে। তবে যারা শুধু চাকরির জন্য সাংবাদিকতা করতে চান, তাদের জন্য এ পেশা নয়। সমাজ বদলে ভূমিকা রাখার জন্য, সমাজকে নাড়া দেয়ার জন্য, ভালো বোধকে জাগ্রত করার মানসে সাংবাদিকতায় আসাই কাম্য।
সাংবাদিকতা পেশায় ঝুঁকি মেনে নিয়েই আসতে হবে। এ পেশায় সম্মান, ভালো স্যালারি পেয়ে জীবনধারণের পাশাপাশি দু:খ ক্ষোভ, বেদনা, সর্বোপরি ভাব প্রকাশের সুযোগ আছে। এছাড়াও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যাওয়ার, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার, সান্নিধ্য পাবার ও অনেক কিছু শেখার সুযোগ রয়েছে। খবরের পেছনের খবর বের করে আনার জন্য অনুসন্ধানী রিপোর্টংয়ে যেমন মজা আছে তেমনি কষ্টসাধ্যও বটে। সব মিলিয়ে একজন রিপোর্টারকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিনোদনসহ সব বিষয়ে ধারণা রাখতে হয়। তাহলে সাংবাদকিতায় পরিপক্বতা আসে, ভবিষ্যৎও হয় উজ্জ্বল।

কাজ যদি হয় ফিচারে
ফিচার ডেস্কে কাজ করতে হলে অবশ্যই একজন লেখককে অনেক বিষয়ে ধারণা রাখতে হয়। এক্ষেত্রে জার্নালিজমে পড়া ছাত্রছাত্রীরা ভালো করতে পারেন। তবে অন্য মাধ্যমে পড়াশোনা করেও যে সাংবাদিকতায় ভালো করা সম্ভব তার উজ্জ্বল উদাহরণ প্রথম আলোর উপ-সম্পাদক, কবি, সাহিত্যিক আনিসুল হক। বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ার পরও তিনি একজন সফল সাংবাদিক। সংবাদপত্রের ফিচারে ক্যারিয়ার গড়ার বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘যার কোনো দিকে সম্ভাবনা নেই, সে-ই সাংবাদিকতায় আসে’- আগের যুগের এই ধারণা বর্তমান যুগে অচল। বরং সাংবাদিকতা যে চ্যালেঞ্জিং পেশা, তা সবারই জানা। মেধাবীরাই এই পেশায় আসছে। যারা ক্রিয়েটিভ কিছু করতে পারছে। ভালো লেখা পাঠককে দিতে পারছে তারাই টিকে যাবে। অন্য পেশায় যেমন ভালো পারফরমেন্স প্রদর্শন করলে করলে উন্নতি করা যায়, তেমনি সাংবাদিকতায় যারা ভালো করেন তারাই লাইম লাইটে আসেন সবসময়। কোয়ালিটির ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই সংবাদপত্রে।

হতে পারেন ফর্টোর্জানালিস্ট
ছবি একটি লেখাকে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য করে তোলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছবিই একটি সংবাদ। যারা চ্যালেঞ্জিং পেশাকে ভালোবাসেন, আছে ক্রিয়েটিভিটি, আত্মবিশ্বাস ও যে কোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়ার যোগ্যতা তিনিই পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন ফটোজার্নালিজমকে। ফটোজার্নালিজম পেশা যেমন আনন্দময় তেমনি কষ্টকরও। কেননা এ পেশায় চাকরির নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যখনই খবর, যেখানেই খবর- সেখানেই তাদের ছুটে যেতে হয় ছবির জন্য। ছবি তুলে ফটোগ্রাফার হওয়া গেলেও ফটোজার্নালিস্ট হতে অবশ্যই ক্রিয়েটিভিটি, কালার কম্পোজিশন, ছবি দিয়েই সংবাদ বোঝানোর মতো দক্ষ হতে হয়। শিক্ষা সব জায়গার মতো এখানেও জরুরি। কেননা শিক্ষাই কাজের মানোন্নয়ন ও সৃজনশীলতার প্রতিফলন ঘটায়। বিশ্বজুড়ে ফটোজার্নালিস্টের কাজের বিশাল ক্ষেত্র আছে। ভালোভাবে কাজ করলে এ সেক্টরে সফল হওয়া যায় অল্প সময়েই। অনলাইনে ছবি বিক্রি করেও বিশ্বের মাঝে পরিচিতি ও অর্থ দুুটোই অর্জন করা সম্ভব ফটোজার্নালিস্ট হয়ে। বেতন স্ট্যাটাসও অন্য পেশার চেয়ে এখানে খারাপ নয়। যোগ্য মনে করলে নিজেকে তৈরি করতে পারেন এ পেশার উপযোগী করে। হয়ে যেতে পারেন ফটোর্জানালিস্ট।

অনুবাদকের চাহিদা আছে
পত্রিকায় শুধু-গতানুগতিক ধারার লেখা পড়তে পাঠক বিরক্ত বোধ করেন। তাই অন্য ভাষা থেকে মজার এবং এক্সক্লুসিভ লেখাগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরতে পারেন একজন দক্ষ অনুবাদক। পত্রিকায় শুধু আক্ষরিক অনুবাদের কোনো মূল্য নেই বরং ভাবানুবাদ জরুরি। অনুবাদ করতে পারলে দৈনিক কিংবা যে কোনো ম্যাগাজিনেও সেই ব্যক্তির চাহিদা থাকে অনেক বেশি। এছাড়া প্রত্যেক পত্রিকায় প্রয়োজন ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদের জন্য দক্ষ লোক। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে ডেস্কে বসেই লিখতে পারেন মজার মজার ফিচার, সংবাদ ও সাক্ষাৎকার। অনুবাদকের বেতন অন্যদের তুলনায় কম নয়। বরং কাজ অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে বেশি।

সম্পাদনা সহকারী হিসেবে ক্যারিয়ার
প্রতিদিন নির্ভুল বানানে আমরা যে পত্রিকাগুলো পড়ি, এর পেছনে আছে একদল সম্পাদনা সহকারীর দক্ষ হাতের ছোঁয়া। বাংলা ভাষা এবং বানানরীতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে, এই পরিবর্তনগুলো নিয়মিত অনুসরণ করেন সম্পাদনা সহকারীরা। পত্রিকাগুলোর নির্ধারিত বানানরীতিও অনুসরণ করতে হয় তাদের। বাংলা ভাষা সম্পর্কে যাদের দক্ষতা আছে, আগ্রহ আছে পরিশুদ্ধ বানান চর্চার, তারা ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারেন সম্পাদনা সহকারী পেশাকে। একজন সম্পাদনা সহকারী মূলত পত্রিকার প্রাণ, তারা দক্ষ হলে নির্ভুল পত্রিকা পাওয়া যায়। বাংলা একাডেমীর প্রমিত বানানরীতি অনুসরণ করে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন সম্পাদনা সহকারী। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব। বেতনও সম্মানজনক।

সিদ্ধান্ত নিন এখনই
রিপোর্টার, ফটোজার্নালিস্ট, অনুবাদক কিংবা ফিচার লেখক- যাই হতে চান না কেন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিয়ে সামনের দিকে এগুতে হবে। ছোট পত্রিকা থেকেই শুরু করতে পারেন লেখালেখি কিংবা ছবি তোলার কাজ। পরবর্তীতে সেই রেফারেন্স কাজে লাগবে ভালো দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক পত্রিকায় লেখালেখি, ছবি তোলা ও ছাপানোর ক্ষেত্রে। পত্রিকায় যারা লেখালেখি করেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শ নিয়ে লেখা শুরু করতে পারেন। সংবাদপত্রে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে সিরিয়াসলি লেখালেখিতে আসা দরকার। যে বিষয়ে আগ্রহী সে বিষয়ে শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে রাখুন। পরে লেখার সময় তা কাজে দেবে। সংবাদপত্রে ফেলনা বলে কিছু নেই। ছোট তথ্যও অনেক সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে এবং তা কাজে লেগে যেতে পারে। অতএব প্রিন্ট মিডিয়ার যে ক্ষেত্রে আপনি আগ্রহী নিজেকে গড়ে তুলুন ঠিক তেমনটি করে। আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে নি:সন্দেহে।

1 thought on “প্রিন্ট মিডিয়ায় চ্যালেঞ্জিং ৫ ক্যারিয়ার”

  1. Mohammad Tauhid Hasan

    I want to take career in this sector……
    please,help me…..
    I’m a student of Journalism in Stamford University……..

Comments are closed.

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top