দূর হোক অনলাইন বিমার

আপনি কি আপনার ভাই-বোন কিংবা ছাত্র-ছাত্রীকে পড়াতে বসেও মোবাইলের মেসেজগুলোকে দেখে নেন? অথবা যখন আপনি আপনার খুব কাছের বন্ধুর সাথে আনন্দময় সময় কাটান তখনও কি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন? আপনার অন্যসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি রেখে আপনি কি আপনার ই-মেইল চেক করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন? বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া থেকে অনলাইনে থাকতে ভালো লাগে? পরিবারের সাথে সময় কাটানো উপভোগ্য মনে হচ্ছে না? বই পড়ার থেকে অনলাইনে গেমস খেলা ভালো লাগে?

হ্যাঁ, এমনটি হলে আপনি যে অনলাইন রোগে আক্রান্ত তাতে কোন সন্দেহ নেই।  অনলাইন রোগ প্রশমিত করে যদি বাঁচতে চান সুন্দর দেহ আর সুস্থ মন নিয়ে তবে নিচের বিষয়গুলো আপনার জন্য হতে পারে অনুসরণীয়। লিখেছেন এম.ইউ শিমুল

আপনার অনলাইন কাজের রেকর্ড রাখুন
এজন্য প্রথমে আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে কতটুকু সময় আপনি অনলাইনে ব্যয় করছেন এবং এ সময়টুকুতে আপনি কী কী করলেন? কাজগুলো করা আপনার জন্য কতটুকু জরুরি ছিল। সাথে এই নোটটি নিতে ভুলবেন না যে অনলাইনে ঢোকার পূর্বে আপনার অনুভূতি কেমন ছিল এবং এখানে কাজে ডুব দেয়ার পর সে অনুভুতির কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে। কারণ অনেকে আছে যারা এক সময় অধৈর্য ও বিরক্ত হয়েই অনলাইন ছেড়ে উঠে যান।

সাজিয়ে ফেলুন অনলাইন
ইন্টারনেটে যেসব বিষয় ও সাইটে আপনি সময় কাটান সেগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করুন। প্রয়োজনীয়, কম প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয়। প্রথম দিকে অপ্রয়োজনীয়গুলো বাদ দিন, এরপরে কম প্রয়োজনীয়গুলো বাদ দিন। তারপর প্রয়োজনীয়গুলোতেও সময় কমিয়ে আনুন।
যে সময় ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিবর্তে অন্য কিছু করার সুযোগ থাকে তখন নেট ব্যবহার করবেন না। মনে রাখবেন জীবনটা আপনার, সুতরাং আপনার লাইফস্টাইল কী হবে সে সিদ্ধান্তও আপনাকেই নিতে হবে।

ইন্টারনেট ব্যবহারের পূর্বে সময়সীমা নির্ধারণ করুন
আপনি কতটুকু সময় ইন্টারনেটে বসবেন তা আগেই নির্ধারণ করুন। ধরুন- সে সময়টা ১ ঘণ্টা। এখন সময়টাকে আপনি পার্সোনাল ইমেইল-এর জবাব, ফেইসবুকে পোস্ট আপডেট এবং আপনার জন্য পাঠানো মেসেজগুলো চেক করে নিতে পারেন। এগুলো শেষ হলেই কম্পিউটারটি বন্ধ করে ফেলুন। সেই সাথে অফলাইনে কিছু কাজ করতে পারেন।

মাসে অন্তত একদিন অফলাইনে থাকুন
মাসে অন্তত একটি দিন আপনি সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক অর্থাৎ সকল প্রকার প্রযুক্তির বাইরে থাকুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ইন্টারেনেটের সকল প্রকার ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

কাজের মাঝে অন্তত এক ঘণ্টা অফলাইনে থাকুন
এ সময় আপনি আপনার কম্পিউটারের কাজ করুন। যেমন- কন্ট্রোলপ্যানেল/নেটওয়ার্ক সিস্টেম আপডেট এবং ডিজ্যাবল/ডিসকানেক্ট -এ সব জায়গায় আপনার পারদর্শিতার পুন:প্রয়োগ করুন। এছাড়া কোন কিছুর হিসাব বা মনের কথা লিখেও এ সময়টায় ফ্রেশনেস আনতে পারেন। অফলাইনের এই একটি ঘণ্টায় আপনি যথেষ্ট কাজ করতে পারেন। কাজের ফাকে ক্ষণিকের জন্য জানালার বাইরে দৃষ্টি দিন। আর হারিয়ে যান প্রকৃতি ভাবনায়। এটা আপনার মস্তিষ্ককে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রশান্তি দেবে।

শুরু থেকেই সাবধান
নতুন যে কোন কিছুতেই মানুষের ব্যাপক কৌতুহল-উদ্দীপনা থাকে। একটা সময়ে আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। ইন্টারনেটও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কারো উৎসাহ-উদ্দীপনা যদি দিনদিন বাড়তে থাকে তখনই ভাবতে হবে এটা ইন্টারনেট আসক্তির পূর্ব লক্ষণ কিনা। ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাভাবিক সময়সীমা কতটুকু, তা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। কারণ ব্যক্তি বিশেষের পেশা ও প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে তা বিভিন্ন হতে পারে। সুতরাং শুরুতেই ভাবুন আপনি বেশি সময় দিচ্ছেন কিনা?

দিনের একটি সময় ইন্টারনেট/ফোন ফ্রি থাকুন
দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় ফোন বা ইন্টারনেটের ব্যবহার থেকে দুরে রাখুন। ধরুন, সন্ধা ৬ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত আপনি কখনোই এ দুটি কাজে জড়াবেন না।

পরিবারের সাথে সময় দিন
প্রিয়জনদের কন্ঠস্বর একটি অন্য রকম আনন্দ ও ভিন্ন স্বাদের অনুভূতি। তবে কখনো কখনো ইন্টারনেটের কারণে আমরা বঞ্চিত হই সেই আনন্দ থেকে। তাই সেই আনন্দ উপভোগ করতে কম্পিউটারের সামনে বসেই তাদের কল করুন হোক সেটা কয়েক মিনিটের। পরিবারের সাথে দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে আরো বেশী সময় দিন। বন্ধুদের সাথে সপ্তাহে একদিন আড্ডার আয়োজন করুন।

ই-মেইল বিমার কমান
দু’টি ভিন্ন ই-মেইল একাউন্ট চালু করুন। একটি বক্তিগত এবং অন্যটি পেশাগত কাজে ব্যবহার করুন। এন্টি স্পাম ফিল্টারিং চালু রাখুন। তাহলে শুধু প্রকৃত মেসেজই যাবে আপনার ইনবক্সে। ইমেইলের শিরোনাম দেখেই বাছাই করে নিন কোনটা প্রয়োজনীয়।

ইন্টারনেট আবিষ্কারের  আগে বেশী উপভোগ্য জিনিসগুলোর কথা মনে করুন
ইন্টারনেট ভূবনে প্রবেশের পূর্বে হয়তো আপনার বই পড়ার প্রবল নেশা ছিল। নিয়মিত শরীর চর্চা আর বন্ধুদের সাথে জমিয়ে আড্ডা মারতেন আপনি। আবার কখনো সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখা আর দূরে বেড়াতে যেতেন মাঝে মাঝে। অথচ এখন সব কিছুই বিদায় করে দিয়েছেন। এ সব কিছুই আপনি আবার ফিরিয়ে আনতে পারেন সময় সুযোগ করে আপনার ভূবনে। মনে রাখবেন কখনোই সমাজ বিরোধী হবেন না। মনকে কখনো আটকে রাখবেন না সংকীর্ণতার দেয়ালে।

কোন উদ্দেশ্য ছাড়া অনলাইনে যাবেন না
কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে অনলাইনে ঢু মারুন। যেমন ধরুন, আপনি বলছেন ‘আমি ই-মেইল চেক অথবা অমুক বিষয়টা জানতে অনলাইনে যাচ্ছি’। সেই সাইটগুলোই ব্রাউজ করুন যা আপনার জন্য জরুরি। কখনোই আজে বাজে সাইট ব্রাউজ করবেন না।

মনে রাখবেন আপনি একা নন
ইন্টারনেট আসক্তি এখন একটি সাধারণ ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। এটি এখন আর কোন নির্ধারিত বয়স বা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর নয়। সুতরাং আপনার মত অনেককেই পাবেন যারা এই রোগে আক্রান্ত। তাই আপনি আর একা নন। সুতরাং সেই লোকগুলোকে খুঁজে বের করুন। আর সমস্যা সমাধানে পরস্পর পাশে দাঁড়ান।

উপরের নিয়মগুলো মেনে চলতে চেষ্টা করুন। আর ঝেড়ে ফেলুন অনলাইনের অবাঞ্ছিত বোঝা। আপনার জীবন সহজ-সুন্দর হোক। সেই সাথে হোক আরো বেশী গতিশীল।

2 thoughts on “দূর হোক অনলাইন বিমার”

Comments are closed.

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top