স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা বা transferable skills কী

স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা বা transferable skills কী? এটা চাকরির ক্ষেত্রে কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ক্যারিয়ার পরিবর্তন করতে চান? আপনার স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতাগুলো (transferable skills) লক্ষ্য করুন।
আপনি যদি ক্যারিয়ার বা পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবেন, তবে আপনাকে রিজিউমে-তে উল্লেখ করার মতো স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা বা transferable skills নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা বলতে কী বোঝায়?
হ্যাঁ, এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করবো স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা কী, এর সংজ্ঞা, উদাহরণ, কেন গুরুত্বপূর্ণ, সফল কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা -ইত্যাদি সম্পর্কে।

স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা কী?

স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা হলো এমন দক্ষতা, যেগুলো আপনি আপনার পূর্ববর্তী অবস্থান, বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ জীবনের অভিজ্ঞতা, স্বেচ্ছাসেবা, শখ ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জন করেছেন এবং সেগুলো নতুন কোনো পেশা বা কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারেন।

যেমন- যোগাযোগ দক্ষতা। চাকরিদাতারা সাধারণত এই দক্ষতাটি চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে দেখতে চান। আপনার যদি সহকর্মীদের সাথে বিভিন্ন তথ্য খুব সহজে শেয়ার করার সামর্থ থাকে সেটা চাকরিক্ষেত্রে আপনাকে এগিয়ে রাখবে।

ধরুন, একজন লোক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা লেভেলের কোনো পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করছেন। তাকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করতে হবে। অন্যদের চাহিদা বোঝা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির যোগাযোগ দক্ষতা ভালো হলে, তিনি ওই পদে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন।

এখন তার এই যোগাযোগ দক্ষতা কিভাবে ভালো হবে? হতে পারে তিনি শিক্ষাজীবনে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আয়োজনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। এর মধ্য দিয়ে তার যোগাযোগ দক্ষতা বেড়েছে। ছাত্রজীবনের সেই দক্ষতাটিই তিনি তার পেশাজীবনে ব্যবহার করতে পারছেন।

স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতার সংজ্ঞা (transferable skills definition)

স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতার সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা পাওয়া যায় না। বিভিন্নজন একে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
ক্যামব্রিজ ডিকশনারিতে বলা হয়েছে- ‘skills used in one job or career that can also be used in another.’

অন্য কথায়- স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা হলো- চাকরি বা ক্যারিয়ারে ব্যবহৃত এমন দক্ষতা যা অন্যক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

দ্য ব্যালেন্স ক্যারিয়ার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে- যেসব স্কিল বা দক্ষতা বিভিন্ন পেশায় বা কাজে ব্যবহার করা যায় তাকে স্থানান্তযোগ্য দক্ষতা বলে। যেমন- সময় ব্যবস্থাপনা ও ভাষা দক্ষতা, উভয়কে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।

উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে- A transferable skill is an ability or expertise which may be used in a variety of roles or occupations. মানে- স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা হলো বিভিন্ন ভূমিকা বা পেশায় ব্যবহার করার মতো কোনো সামর্থ বা বিশেষ জ্ঞান।

স্কিল-বিষয়ক ওয়েবসাইট স্কিল ইউ নিড লিখেছে-
Transferable skills are skills and abilities that are relevant and helpful across different areas of life: socially, professionally, and at school.
অর্থ্যাৎ স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা হলো জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্র : সামাজিক, পেশাগত বা স্কুলের জন্য প্রাসঙ্গিক ও দরকারি দক্ষতা।

স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতার উদাহরণ (Example of Transferable Skills)

স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। নিচে উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো।

১. যোগাযোগ দক্ষতা
এটা হতে পারে পাবলিক স্পিকিং, দলগত নেতৃত্ব ও ফোনে বেচাকেনার মতো মৌখিক যোগাযোগের দক্ষতা। এছাড়া লেখালিখি, ক্যামেরার সামনে কথা বলা, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি দক্ষতার কথাও উল্লেখ করা যায়।
বিক্রয় টিমের সদস্য হিসেবে কোনো ব্যক্তি যোগাযোগের যে দক্ষতা অর্জন করেন, তা তিনি মার্কেটিং-এ ব্যবহার করতে পারেন।

২. আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা
শক্তিশালী আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা-সম্পন্ন প্রার্থীরা জানেন- কীভাবে সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি টিমে কাজ করা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরকে নেতৃত্ব দিতে হয়। আবার কোনো সময় অন্যকে নেতৃত্ব প্রদানে উৎসাহিত করতে হয়। শক্তিশালী আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা-সম্পন্ন মানুষেরা দুটোই করতে জানেন।

৩. সময়-ব্যবস্থাপনার দক্ষতা
যেসব কাজে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের দরকার হয়, সেসব ক্ষেত্রে সময়-ব্যবস্থাপনার দক্ষতা খুবই জরুরি। আপনার যদি আগের চাকরিতে নির্দিষ্ট সময়ে টার্গেট পূরণের অভিজ্ঞতা থাকে, আপনি সে অভিজ্ঞতা পরবর্তী চাকরিতে কাজে লাগাতে পারেন। এমনকি দ্বিতীয় কাজটি যদি আগের চাকরির অনুরূপ না-ও হয়।

৪. সাংগঠনিক দক্ষতা
ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট, কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং কাস্টমার কেয়ারে কাজ করার জন্য কোম্পানিগুলির সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন পেশাদারদের প্রয়োজন। একজন ব্যক্তি যদি পুরানো চাকরিতে গ্রাহক ডেটাবেসগুলি মেনটেইনের দায়িত্ব পালন করে থাকেন, তিনি হয়তো নতুন চাকরিতে সোশ্যালমিডিয়া প্লাটফরমে তা কাজে লাগাতে পারবেন।

৫. কারিগরি দক্ষতা
আপনি যদি সফটওয়্যার বা ওয়েব প্রোগ্রামিংয়ে অভিজ্ঞ থাকেন অথবা শুধুমাত্র মাইক্রোসফট অফিস ও গুগল ড্রাইভের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা থাকে- আপনি সে অভিজ্ঞতাও নতুন চাকরি বা কর্মক্ষেত্রে স্থানান্তর করতে পারেন।

৬. প্রবলেম-সলভিং স্কিল বা সমস্যা-সমাধান দক্ষতা
নতুন সমস্যার সৃজনশীল সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষমতা পেশাজীবীদের গ্রাহক সহায়তা (Customer Support), প্রযুক্তি সহায়তা (Technical Support), প্রকল্প পরিচালনা ও কৌশলগত ব্র্যান্ডিংয়ে উন্নতি করতে সহায়তা করে।

৭. নেতৃত্বের দক্ষতা
আপনি একটি প্রতিষ্ঠানে নতুন হলেও পূর্বপ্রতিষ্ঠানের আপনার নেতৃত্ব দানের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সফল হতে পারেন। সহকর্মীদের উৎসাহ প্রদান, সহযোগী দল-গঠন ও পরিচালনা ইত্যাদি নেতৃত্বের দক্ষতার মধ্যে পড়ে।

স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতার তালিকা (list of transferable skills)

সকল স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এখানে অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু দক্ষতার তালিকা দেয়া হলো-
১. প্রবলেম-সলভিং স্কিল
২. বিশ্লেষণাত্মক যুক্তি (Analytical Reasoning)
৩. ক্রিটিক্যাল থিংকিং
৪. নেতৃত্ব
৫. খাপ খাইয়ে নেয়া (Adaptability)
৬. দলগত কাজ
৭. যোগাযোগ
৮. লেখালিখি
৯. শ্রবণ
১০. সৃজনশীলতা
১১. প্রকল্প ব্যবস্থাপনা
১২. সম্পর্ক তৈরি (Relationship Building)
১৩. কম্পিউটার দক্ষতা
১৪. ব্যবস্থাপনা
১৫. গবেষণা ও পরিকল্পনা ইত্যাদি

উল্লেখ্য, এই দক্ষতাগুলো আপনার রিজিউমি’র জন্য স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন।

স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা কেন গুরুত্বপূর্ণ? (why are transferable skills important)

স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতার সুবিধা বা উপকারিতা কী?
স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা সকলক্ষেত্রেই অপরিহার্য। এগুলো আপনার ব্যক্তিগত সাফল্য এবং দলীয়, গ্রাহক বা প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
তদুপরি কর্মজীবনে আপনার গতিপথের নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং ক্যারিয়ারে পদোন্নতি ও পেশা পরিবর্তনের সময়ও চাপ কমাতে সাহায্য করে।


৮টি চাকরি দক্ষতা যা অবশ্যই আপনার থাকা উচিত


স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা নিয়োগ-কর্তার জন্যও সমানভাবে উপকারী। কারণ নিয়োগের প্রথম দিন থেকেই আপনি এই দক্ষতা ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারবেন। সেজন্য এই দক্ষতাসম্পন্ন মানুষগুলোকেই নিয়োগকর্তারা বেছে নিতে চাইবেন।
তাছাড়া প্রতিবছর অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয় শিক্ষানবীশদের প্রশিক্ষণে। কিন্তু স্থানান্তর যোগ্য দক্ষতা সম্পন্ন মানুষদের বেছে নিলে প্রশিক্ষণ-খরচ বাবদ অনেক অর্থ সাশ্রয় হয় নিয়োগদাতার।

চাকরিতে স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতা
কোন দক্ষতাগুলো আপনার কাঙ্খিত চাকরির ক্ষেত্রে কাজে লাগবে সেগুলো বাছাই করে সিভি বা রিজিউমি-তে উল্লেখ করুন।

রিজিউমি-তে কিভাবে স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতাগুলো হাইলাইট করবেন?

আপনি যখন কোনো চাকরির জন্য সিভি তৈরি করবেন তখন প্রথমেই আপনার স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতাগুলোর তালিকা করুন। তারপর সেখান থেকে প্রাসঙ্গিক দক্ষতাগুলো বাছাই করুন।
অর্থ্যাৎ কোন দক্ষতাগুলো আপনার কাঙ্খিত চাকরির ক্ষেত্রে কাজে লাগবে সেগুলো বাছাই করে সিভি বা রিজিউমি-তে উল্লেখ করুন। বিশেষ করে আপনার যদি কাঙ্খিত চাকরির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে অবশ্যই এ দক্ষতাগুলো হাইলাইট করুন।
আর যদি সংশ্লিষ্ট কাজে আপনার অভিজ্ঞতা থাকে তা সিভি বা রিজিউমি-এর অভিজ্ঞতা সেকশনে আলাদাভাবে উল্লেখ করুন।
অনেকে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে একই সেকশনে উপস্থাপন করেন। আপনি এটা করবেন না। কারণ এতে নিয়োগদাতাদের চোখে আপনার সিভিটি ভালো না-ও লাগতে পারে।


সিভিতে দক্ষতা সেকশনে যে ১০ দক্ষতা অবশ্যই সংযুক্ত করা উচিত


আপনার স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতাগুলো সুন্দরভাবে বিন্যস্ত করুন। যাতে এগুলো নিয়োগকর্তার চোখে পড়ে।
অনেক সময় আপনার মনে হতে পারে চাকরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অনেক দক্ষতাই আপনার নেই। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। তার চেয়ে আপনার যে দক্ষতাগুলো আছে তার ব্যাপারে মনোনিবেশ করুন। কাভার লেটারে সেগুলোকে হাইলাইট করে নিয়োগদাতাকে বোঝাতে চেষ্টা করুন যে, কাজটির ব্যাপারে আপনি অনেক আত্মবিশ্বাসী।

সূত্র : ১. উইকিপিডিয়া   ২. SkillTypes.com  ৩. thejobnetwork

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top