চাকরির প্রস্তুতি : গুরুত্ব দিন গণিত ও ইংরেজিতে

নিজেকে চাকরির বাজারে যোগ্যতর হিসেবে হাজির করার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে চাকরির পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা। চাকরির বাজার এখন আগের তুলনায় অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। চাকরির বাজারে নিজেকে যোগ্যতর করে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান সময়ে যেকোনো চাকরিতেই অল্প পদের বিপরীতে প্রচুর আবেদন জমা পড়ছে। আর তখন কর্তৃপক্ষ যোগ্যতা বিচার করতে নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাসহ একাধিক ধাপে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। লিখেছেন সুমনা শারমিন

examinee-1

চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দৃঢ় মনোবল, মানসিক প্রস্তুতি ও অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের ওপর আস্থা বাড়ানো। সাধারণত যেকোনো চাকরিতে লিখিত পরীক্ষায় যারা ভালো ফলাফল করে থাকে, পরবর্তী ধাপগুলোতে তাদের মূল্যায়ন একটু ভালোভাবেই হয়ে থাকে। তাই চাকরির পরীক্ষায় ভালো করা চাকরির বাজারে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের অন্যতম প্রধান উপায়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষার ধরন কিছুটা আলাদা হয়ে থাকে। পরীক্ষার বিষয়াবলিতেও থাকে বৈচিত্র্য। তবে কিছু কিছু বিষয় সব ধরনের চাকরির পরীক্ষাতেই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে গণিত ও ইংরেজিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকলে কম-বেশি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষাতেই ভালো করা সম্ভব।

গণিত
চাকরির পরীক্ষায় গণিতের দক্ষতাও যাচাই করা হয় প্রার্থীদের। আর তাই গণিতে যত ভীতিই হোক, এটি রপ্ত না করতে পারলে ভালো চাকরি আপনার হাতছাড়া হতে পারে। অবশ্য বেশি ভয় পাওয়ার কারণ নেই। চাকরির পরীক্ষায় গণিতে অনেক বেশি জটিল প্রশ্ন তেমন একটা আসে না। শিক্ষাজীবনে তাই গণিত নিয়ে যত মেধা ব্যয় করতে হয়েছে, চাকরির জন্য অতটা হয়তো পরিশ্রম করতে হবে না। সাধারণত মাধ্যমিক পর্যায়ের সমমানের প্রশ্নই এসে থাকে চাকরির পরীক্ষাগুলোতে। সে ক্ষেত্রে সরল, সুদকষা, ঐকিক নিয়ম, শতকরা, লাভ-ক্ষতি প্রভৃতি বিষয়ে প্রশ্ন হয় পাটীগণিত থেকে। আর বীজগণিত অংশ থেকে উৎপাদকে বিশ্লেষণ, সমীকরণ, সমাধান-জাতীয় সমস্যা এসে থাকে। কাজেই এসব বিষয় ধরে ধরে চর্চা করা শুরু করুন। জ্যামিতি থেকেও মৌলিক বিষয়গুলোর প্রশ্নই করা হয় চাকরির পরীক্ষায়। ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম আর নবম-দশম শ্রেণীর গণিত বইয়ের পাটীগণিত ও বীজগণিত অংশগুলো ভালোভাবে চর্চা করলে আপনার চাকরির প্রস্তুতি অনেকটাই এগিয়ে যাবে। জ্যামিতির ক্ষেত্রেও মৌলিক সংজ্ঞা ও উপপাদ্যগুলো জানা এবং সেগুলো চিত্রসহ যথাযথভাবে উপস্থাপন করা আয়ত্তে থাকলে এই অংশে ভালো করতে পারবেন।
গণিতে নিজের দখল বাড়াতে শুরুতেই প্রয়োজন পড়বে গাণিতিক সূত্রগুলো আত্মস্থ করা। সূত্রগুলো কেবল মুখস্থ করবেন না, সূত্রগুলো বোঝার চেষ্টা করুন এবং সেগুলোকে নিজে নিজে ব্যাখ্যা করতে শিখুন। গণিতের অনেক সমস্যাই সরাসরি সূত্রে বসিয়ে সমাধান করা যায় না। এসব সমস্যা সমাধান করতে হলে সূত্রকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করতে হয়। কাজেই গাণিতিক সূত্রের ওপর আপনার স্পষ্ট দখল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করবে। গাণিতিক সমস্যা সমাধানের আরেকটি উপায় হচ্ছে সমস্যাকে বুঝতে পারা। সঠিকভাবে সমস্যাটি বুঝতে পারলে সমাধান করা সহজ হবে। সমস্যাটি বুঝতে পারার পাশাপাশি সমস্যাকে ক্ষুদ্রতম আকারে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করুন। এতে করে সমাধান পেতে সময় লাগবে অনেক কম।

ইংরেজি
আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি জানার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের পাঠ্যক্রমেও ছোটবেলা থেকেই ইংরেজিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। তার পরও আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইংরেজি বিষয়ে সাধারণ দুর্বলতা রয়েছে। ইংরেজি নিয়ে ভীতিও রয়েছে অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যেই। তবে চাকরির জন্য ইংরেজিতে দক্ষ হয়ে ওঠার বিকল্প নেই। ইংরেজিতে দক্ষ হয়ে ওঠার অর্থ অবশ্য ছোটবেলায় পড়ে আসা ইংরেজি গ্রামারের বিষয়গুলো শেখা নয়। মূলত ইংরেজিতে সহজভাবে যেকোনো বিষয়ে কয়েক কলম লেখার দক্ষতাতেই গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে ইংরেজি গ্রামারে একেবারেই গুরুত্ব না দিলে চলবে না। এখনকার চাকরির পরীক্ষায় সরাসরি গ্রামার থেকে প্রশ্ন না এলেও বাক্য থেকে ভুল চিহ্নিত করা এবং বাক্য সংশোধনের বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রিপোজিশনের ব্যবহার, ক্রিয়াপদের সঠিক ব্যবহার, টেনস, বাক্যের বিভিন্ন ধরনের মধ্যে পারস্পরিক পরিবর্তন এবং এ ধরনের বিষয়গুলো নিয়মিত আসে চাকরির পরীক্ষায়। ইংরেজিতে ভালো করার জন্য প্রতিদিন ইংরেজি পত্রিকার আর্টিকেলগুলো পড়ুন। প্রশ্নে কী জানতে চেয়েছে, সে বিষয়টা আগে বোঝার চেষ্টা করুন। এরপর নিজের মতো করে প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে ফেলুন। পড়ার সময় কঠিন শব্দ দেখে ভয় পাবেন না। কঠিন অংশগুলোতে সাধারণত মূল কথা দেয়া থাকে না। মূল কথা কোথায় কোথায় আছে সেটি বের করুন।
আপনার অনুশীলনকে সহজ করতে অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নারস ডিকশনারি, লংম্যান ডিকশনারি অব কনটেম্পোরারি ইংলিশ, মাইকেল সোয়ানের প্রাকটিক্যাল ইংলিশ ইউজেজ, রেইমন্ড মারফির ইংলিশ গ্রামার ইন ইউজসহ আরো কিছু প্রামাণ্য বই রাখতে পারেন।
গণিত ও ইংরেজিতে ভালো করার সবচেয়ে স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য উপায় হচ্ছে চর্চা। আপনি যত বেশি চর্চা করবেন, ততই ভালো করতে পারবেন। বারবার গাণিতিক সমস্যাগুলো চর্চা করুন। যে সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেন, সেগুলোরও বারবার সমাধান করুন।

সূত্র : নয়া দিগন্ত

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top