সহজেই জনপ্রিয় করে তুলুন নিজেকে

হামিদ সিরাজী : জনপ্রিয় মানেই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হওয়া না। তেমনি সুপারম্যান হওয়া মানে সুপারপাওয়ার হওয়া না। আপনার মাঝে মানবিক দোষত্রুটি ও দুর্বলতা থাকার পরও আপনি সবার চোখে হয়ে উঠতে পারেন একজন নন্দিত ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। এজন্য আপনার থাকা চাই কিছু ইতিবাচক ও জনপ্রিয় গুণাবলি। এসব গুণাবলির চর্চার মাধ্যমেই মানুষের মাঝে পছন্দের ব্যক্তি হয়ে ওঠা সম্ভব। এমন কয়েকটি গুণ নিচে তুলে ধরা হলো—

১. পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দিন
ছোট-বড়, ধনী-গরীব, চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দিন। সবার আগে সালাম দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। স্মরণ রাখুন, আপনি সালাম দিয়ে তার প্রতি অনুগ্রহ প্রকাশ করছেন না। বরং আপনি নিজেই আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের আশ্রয়ের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। প্রিয়নবী সা. -কে তার জীবদ্দশায় কেউ কোনোদিন আগে সালাম দিতে পারেনি।

২. সবাইকে আন্তরিক হাসি উপহার দিন
হাসতে কোনো টাকা লাগে না, কিন্তু হাসির মূল্য অসাধারণ। মিষ্টি হাসির উৎস অন্তর। আন্তরিক হাসি অন্যের অন্তরকে স্পর্শ করে। কেবল অন্তরই পারে অপরের অন্তরের ভাষা বুঝতে। হাসি হৃদয়ের ভাষা। আপনার চারপাশের মানুষের সাথে অন্তরের ভাষায় তথা হাসিমুখে কথা বলুন।

৩. অন্যকে অগ্রাধিকার দিন
খাবারের টেবিলে, আলোচনার আসরে কিংবা গাড়িতে ওঠার লাইনে—সর্বত্র অন্যকে অগ্রাধিকার দিন। অন্যকে অগ্রাধিকার দানের মাধ্যমে আপনি তাদের মনে অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।

৪. অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন
আপনি যখন কারো কথা শুনেছেন, মূলত তখন তাকে সম্মান করছেন। প্রত্যেকের একটা আকুতি আছে, কথা আছে—সে চায় মানুষ তার আবেদনকে সম্মান করুক। ভালো শ্রোতা খুব সহজেই মানুষের মনে দাগ কাটতে পারে।

৫. মানুষকে সহযোগিতা করুন
জীবন সংক্ষিপ্ত। চিরকাল বেঁচে থাকার কোনো সুযোগ এ পৃথিবীতে নেই। যতটা সম্ভব মানুষকে সহযোগিতা করুন—অর্থসম্পদ দিয়ে, বুদ্ধি, পরামর্শ দিয়ে, শিক্ষা দিয়ে। যেভাবে আপনি পারেন, যতটুকু পারেন, সাধ্যের সীমায় সর্বোচ্চটুকু মানুষের জন্য করুন। পরিণামে ধূলির পৃথিবীতে না হোক, মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় আপনি বেচেঁ থাকবেন অনেক কাল।

৬. মানুষের আলোর দিকটা দেখুন
রাত অন্ধকার। আর অন্ধকার রাতের আকাশেই তো লাখ লাখ তারা জ্বলে, জ্যোৎস্নার ফুল ঝরে। অন্ধকার রাতের মতো একজন কালো-মন্দ মানুষের মাঝেও অনেক ভালোগুণ থাকে। আমরা সেই ভালোর, আলোর দিকটাই দেখবো। মানুষের অন্ধকার নয়, আলোর দিকটাকেই ফোকাস করবো। ফলে আলোর উজ্জ্বলতা আরো বেড়ে যাবে এবং সেই আলো আপনাকেও আলোকিত করবে।

৭. অন্যকে কৃতিত্ব দিন
দলগত বা যৌথ কাজে অন্যকে সাফল্যের স্বীকৃতি দান করুন। কৃতিত্ব নিজে না নিয়ে অন্যদের উপহার দিন, তাহলে আপনিও স্বীকৃতি পাবেন।

৮. কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন
কেউ কোনোভাবে সামান্যতম সহযোগিতা করে থাকলে স্পষ্ট ভাষায় আন্তরিক উচ্চারণে ‘জাযাকাল্লাহ’ বলুন বা কৃতজ্ঞতা জানান। আপনার চেহারায় কৃতজ্ঞতার ভাব ফুটিয়ে তুলুন। আপনার সাফল্যের পেছনে কারো অবদান থাকলে তাকে ‘থ্যাংকস লেটার’ লিখুন।

৯. ক্ষমা প্রার্থনা করুন
কোনো ভুলত্রুটি হলে, আপনার দ্বারা কারো অধিকার ক্ষুন্ন হলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন। অথবা কোনো মানবিক ব্যাপারে সাহায্যপ্রার্থীকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে অসমর্থ হলে বিনয়ের সাথে অপারগতার কথা বলুন। ক্ষমা প্রার্থনা করুন, সেইসাথে আপনার সামর্থ হলে তার জন্য কিছু করতে চেষ্টা করবেন বলে আশ্বস্ত করুন।

১০. ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা বলুন
মরুভূমির কথা শুনলে দৃষ্টি হাহাকার করে ওঠে। ঝর্ণার কথা শুনলে চোখ শীতল হয়—যেন চোখের সামনে দুপাশ ছাপিয়ে ঝর্ণার জল বয়ে যাচ্ছে। আমাদের কথাগুলোরও এমন প্রভাব আছে। তাই মানুষকে ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা বলুন, সুসংবাদ দিন। ঝরাপাতার কান্না ভুলে সবুজ পাতার আগমনী গান শুনিয়ে দিন। সমস্যার কথা না বলে সমাধানের কথা বলুন। মানুষের মনে আশার আগুন জ্বালিয়ে তুলুন।

১১. বিনয়পূর্ণ আচরণ করুন
বিনয় চারিত্রিক অলংকার। বিনয় ছাড়া অন্যান্য চারিত্রিক গুণ মলিন, আলোহীন। যতটা সম্ভব মানুষের সাথে সুন্দর আর বিনয়পূর্ণ আচরণ করুন। বিনয় চারিত্রিক দুর্বলতা নয়, বিনয় চারিত্রিক শক্তির ধারক।

১২. ক্ষমা করুন
মানুষের ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করুন। ক্ষমাশীলতা মহোত্তম চারিত্রিক গুণ। আল্লাহ্ তায়ালার একটি সুন্দর নাম আল-গাফুর—তিনি অসীম ক্ষমাশীল। আল্লাহ্‌র ক্ষমার গুণ নিজের মধ্যে লালন করুন—ফলে মানুষও আপনাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে।

১৩. মানুষকে আপ্যায়ন করুন
বলা হয়ে থাকে— হৃদয়ে পৌঁছার সহজতম পথ উদরে প্রবেশ করা। সাধ্যমতো বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের সুযোগ বুঝে আপ্যায়ন করুন।

১৪. সামাজিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা করুন
হাজার ব্যস্ততার মাঝে আশপাশের মানুষকে কিছুটা সময় দিন—সৌজন্য সাক্ষাত করুন, সৌজন্য কল করুন। যোগাযোগ সামাজিক সম্পর্কের প্রাণ। সামাজিক সম্পর্কের মাধ্যমে আমরা একে অপরকে মূল্যায়ন করার ও মূল্যায়িত হওয়ার সুযোগ লাভ করি।

১৫. মানুষের নাম মনে রাখুন
পরিচিত ব্যক্তির নাম মনে রাখুন—সমবয়সী হলে নাম ধরে সম্মোধন করুন। অন্যদের নাম উচ্চারণের সময় সুন্দরভাবে, স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করুন। প্রত্যেকেই তার নিজের নামকে ভালোবাসে। তাই নাম ধরে সম্বোধনের মধ্য দিয়ে আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করুন।

শেষ কথা
সস্তা জনপ্রিয়তা পরিহার করুন। আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আপনি কেন জনপ্রিয় হবেন?’ ভালো কাজে জনমত তৈরি, উদ্যোগ গ্রহণ ও মানবসেবার নেতৃত্ব দিতে আপনার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগান।

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top