বিদেশে মাইগ্রেশন ও উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ছাত্রছাত্রীদের আইইএলটিএস স্কোর থাকা আবশ্যক। অনেকে আইইএলটিএস পরীক্ষায় স্কোর করা নিয়ে ভয়ের মধ্যে থাকেন। তবে এটা ভয়ের কোনো বিষয় নয় কেননা ছয় মাস বা তিন মাস নয়, এক মাসেরও কম সময়ে মাত্র সাত দিনেই IELTS-এ ব্যান্ড স্কোর-৬ পাওয়া সম্ভব। বিষয়টি জানাচ্ছেন ব্রিটিশ আমেরিকা রিসোর্স সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মো: মারুফ ফিরোজ।
২০১১ সালে বুয়েট থেকে পাস করা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আমেরিকা থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করার প্ল্যান করেছিল। আর এ জন্য প্রয়োজন ছিল আইইএলটিএস-এ কমপক্ষে-৭ স্কোর, যা ইংরেজিতে তাদের ভাষাগত দক্ষতা প্রমাণ করবে। বুয়েট, মেডিক্যাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হোক আর ছাত্র কিংবা শিক্ষক হন সবার ক্ষেত্রে, বিশ্বের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ইংরেজি ভাষার মান যাচাইয়ের পরীক্ষা হিসেবে আইইএলটিএসকে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বুয়েটের সেই ছাত্রদের হাতে সময় ছিল মাত্র ২০ দিন। সবাই বলল, যে করেই হোক আমাদের ব্র্যান্ড স্কোর সেভেন পেতেই হবে, না হলে স্কলারশিপ পাওয়া যাবে না। ব্যাপারটা বেশ গুরুত্বের সাথেই নিলাম। প্রথমে তাদের সবার একটা ইন্টারভিউ নিয়ে তাদের ইংলিশ ল্যাংগুয়েজের কারেন্ট লেভেল যাচাই করে নিলাম। আমি বোঝার চেষ্টা করলাম তাদের রাইটিং স্কিল, গ্রামাটিক্যাল নলেজ, ভোকাবুলারি স্ট্রেন্থ, স্পিকিং স্কিল, রিডিং স্পিড ও আরো কিছু আনুষঙ্গিক বিষয়।
যদিও সবাই বুয়েটের ছাত্র, প্র্যাকটিসের অভাবে, সময়ের সাথে সাথে তারা অনেক কিছুই ভুলে গিয়েছিলেন। তবে ইংরেজি ভাষায় তাদের একেক জনের দুর্বলতা ও বোঝার সামর্থ্য ছিল একেক রকম। তাদের রিডিং স্পিড কিভাবে আরো দ্রুত করা যায় আমি তার ওপর গুরুত্ব দিলাম। এ জন্য প্রথম দশ দিন স্পিড রিডিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিলাম। আর পাশাপাশি গ্রুপ ডিসকাশনের ওপর জোর দিলাম। এতে তারা ইন্ট্যারাক্ট করা শুরু করল। যারা রিডিং প্যাস্যাজ পড়ে শিখত তাদের সামারি বা সারমর্ম লিখতে বলতাম, এতে রাইটিংয়ের ভুলগুলো ধরতে পারলাম। এতে সবাই ইংরেজি শেখাটা এনজয় করা শুরু করল। পরবর্তী দশ দিন আইইএলটিএস-এর টেস্টিং স্কিল নিয়ে কাজ করলাম। অনেক সংক্ষিপ্ত মডেল টেস্টসহ শেষে দুটো ফুল লেন্থ মক টেস্ট পরীক্ষা নিলাম। এরপর সাত দিনের মধ্যে তারা আইইএলটিএস পরীক্ষা দিলো। ফলাফল শেষে দেখা গেল বুয়েটের মাত্র ১ জন ৬ পেয়েছিল, বাকি সবাই ৭ এবং দু’জন ৭.৫।
আমরা CEFR অর্থাৎ কমন ইউরোপিয়ান ফ্রেমওয়ার্ক রেফারেন্সের সমন্বয় ও অনুসরণ করা শুরু করলাম। এতে সফলতার হার বেড়ে গেল। ২০১৫ সালে আমার সাজানো সাত দিনের কোর্স শেষে ১২ জন থেকে ১০ জন আইইএলটিএস পরীক্ষা দেয়। এতে ৪ জন ৬ এবং ৬.৫ স্কোর পায়, আর বাকি ৬ জন ৫ এবং ৫.৫ স্কোর পায়। এর মাসখানেকের মধ্যে পুরো কোর্স প্ল্যান, আউটলাইন নতুন করে করলাম। যাতে শিক্ষার্থীদের ডেভেলপমেন্ট হয়। ২০১৬ সালের শুরুতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সুপার ইন্টেনসিভ সেভেন ডেইজ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম, করলাম টানা সাত দিন। ফলাফল ৯ জনের মধ্যে ৮ জনই আইইএলটিএস-এ সিক্স এবং সিক্স প্লাস পায়। তবে এদের কেউই ভালো স্টুডেন্ট ছিল না। ৭ দিনে আইইএলটিএস স্কোর-৬ পাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। যদি আপনার ইংলিশ ল্যাংগুয়েজের বেসিক নলেজ ভালো থাকে তাহলে ৭ দিনে শুধু ৬ না ৭ পাওয়াও সম্ভব। এজন্য আপনার একটা পরিকল্পনা থাকা জরুরি।
যদি আপনার হাতে ৭ দিন সময় থাকে, তাহলে পুরো সময়টা দুভাগে ভাগ করুন। প্রথমভাগে অবশ্যই বেসিক জ্ঞানটুকু ঝালাই করে নিন। যেমন- টানা ২ মিনিট ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন কি না যাচাই করুন। লিখতে গিয়ে কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে সেটা জানার চেষ্টা করুন। গ্রামার নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। বিভিন্ন ধরনের Sentence গঠনের স্ট্রাকচার পড়ুন। বিশুদ্ধ বানান এবং ভিন্ন ভিন্ন বাক্য গঠন, সিম্পল, কমপ্লেক্স, কম্পাউন্ডের স্ট্রাকচারগুলো পড়বেন ও কিভাবে সিম্পল থেকে কমপাউন্ড Sentence ও কমপাউন্ড থেকে কমপ্লেক্স Sentence করা যায় তা জানতে হবে। Article, number, preposition, spelling, tense গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন। এই বিষয়গুলো ভালো পারলে আপনি লেখায় বা রাইটিংয়ে স্কিলড হতে পারবেন।
১৫০০ থেকে ২০০০ শব্দের কোনো ইংরেজি আর্টিকেল পড়তে কত সময় নিচ্ছেন এবং সেটা কতটুকু বুঝতে পারছেন, কিভাবে অপরিচিত বা লেস ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ ট্যাকল করতে পারছেন, তা যাচাই করুন। সেইসাথে বিবিসি, সিএনএন নিয়মিত শুনবেন আপনার লিসেনিং স্কিল ভালো করার জন্য।
আইইএলটিএস পরীক্ষার আগে যদি ১৫ দিন সময় থাকে, তার প্রথম ৭ দিনে আপনার ইংলিশ নলেজ ব্রাশআপ করুন, আর পরের দিনগুলোয় আইইএলটিএস টেস্টিং স্কিল নিয়ে কাজ করুন। যেমন- কিভাবে টাইম সেভ করবেন, কী ধরনের প্রশ্ন আসে, কোনটা আগে আর কোন প্রশ্নটি পরে উত্তর করবেন ও অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়। ভয় পাবার কিছু নেই, আপনিও আইইএলটিএস-এ ৬-এর বেশি স্কোর করতে পারবেন ৭ দিনেই। নিজের ওপর আস্থা রাখুন।