তুরস্কে পড়াশোনা

তুরস্কে পড়াশোনা : কিভাবে ফুল ফ্রি স্কলারশিপ পাবেন?

মুহাম্মাদ জাকির হোসাইন : তুরস্কে পড়াশোনা করতে চাই। পূর্ণ বৃত্তি পাওয়া কি সম্ভব? বিমান খরচ, টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া, স্বাস্থ্যবিমা, মাসিক পকেটমানিসহ সবকিছু বহন করে এমন কোনো বৃত্তি কিভাবে পেতে পারি? ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পাওয়া কি খুব কঠিন? এমন স্কলারশিপ পেতে কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে? এমন হাজারও প্রশ্ন আসে প্রতিদিন।

তাই এই বিষয়ের খুটিনাটি নিয়ে আজকের এই লেখা। আপনি যদি তুরস্কে সরকারি বৃত্তি নিয়ে পড়তে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে এই লেখাটি পড়া উচিত।

তুরস্ক সরকার প্রতি বছর সারা বিশ্বের পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। আজ আমি তুর্কি সরকারের এই স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলাপ করবো। এই স্কলারশিপকে তুর্কি ভাষায় ‘তুর্কিয়ে বুরসলারি’ (TÜRKİYE BURSLARI) বলে। যাক, আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি মূল কথায় চলে যাওয়া যাক।

এক নজরে দেখে নিন লুকিয়ে রাখুন

১. কাদের জন্য এই স্কলারশিপ?

বাংলাদেশী শিক্ষার্থীসহ বিশ্বের সকল দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত এই স্কলারশিপ।

২. যা যা থাকছে স্কলারশিপে-

-সম্পূর্ণ টিউশন ফি।
-মাসিক বৃত্তি- অনার্সের জন্য ৭০০ লিরা, মাস্টার্সের জন্য ৯৫০ লিরা এবং পিএইচডির জন্য ১৪০০ লিরা।
-মূল কোর্স শুরু হওয়ার আগে এক বছরের ফ্রি তুর্কি ভাষা শিক্ষা কোর্স।
-সরকারি/বেসরকারি ডর্মিটরিতে বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা (সকাল ও রাতের খাবারসহ)
-প্রথমবার আসা ও কোর্স শেষে নিজদেশে যাওয়ার বিমান টিকেট (তার্কিশ এয়ারলাইন্সে)।
-স্বাস্থ্যবীমা।

তুরস্কে পড়াশোনা

৩. আবেদনকারীর যোগ্যতা

-আপনি তুরস্কের নাগরিক নন।
-তুরস্কের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ভর্তি হননি।
-আপনি স্নাতক, স্নাতকোত্তর, পিএইচডি কিংবা রিসার্চ প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে ইচ্ছুক।
-আপনার এসএসসি/দাখিল, এইএইচসি/আলিম পরীক্ষায় ৭০% মার্ক থাকলে অনার্সের জন্য, আর উল্লেখিত পরীক্ষাগুলো ও অনার্সে ৭৫% মার্ক থাকলে মাস্টার্সের জন্য, আর মাস্টার্সসহ সকল পরীক্ষায় ৭৫% মার্ক থাকে তাহলে পিএইচডির জন্য আবেদন করতে পারবেন, তবে মেডিকেল ছাত্রদের বেলায় ৯০% মার্ক থাকা লাগবে।

*বয়স-

-স্নাতকের জন্য আবেদন করতে বয়স হতে হবে ২১ বছরের নিচে।
-স্নাতকোত্তর জন্য আবেদন করতে বয়স হতে হবে ৩০ বছরের নিচে।
-পিএইচডির জন্য আবেদন করতে বয়স হতে হবে ৩৫ বছরের নিচে।
-রিসার্চ প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে বয়স হতে হবে ৪৫ বছরের নিচে।

বি: দ্র: সাধারণত তার্কিশ স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য IELTS/TOFEL এর দরকার হয় না, তবে আপনি যে সকল ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করবেন, যদি ঐ সকল ইউনিভার্সিটির রিকোয়ারমেন্টে IELTS/TOFEL চেয়ে থাকে তাহলে IELTS/TOFEL স্কোর লাগবে। তবে আপনার যদি ইতিমধ্যে IELTS/TOFEL, GRE, GMAT ইত্যাদি করা থাকে তাহলে তা অবশ্যই আবেদনের সময় তার স্কোর ও সার্টিফিকেট সাবমিট করবেন।

 

৪. আবেদনের সময়কাল

প্রতি বছর জানুয়ারিতে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়। ২০১৯ সালে জানুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখ পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে।

বিদেশে পড়াশানার সব তথ্য দেখুন এখানে

৫. আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

-জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট বা জন্ম সনদের ইংরেজি কপি। (আমি পাসপোর্টকে প্রাধান্য দিবো)
– প্রাতিষ্ঠানিক সকল পরীক্ষার সনদপত্র।
-প্রাতিষ্ঠানিক সকল পরীক্ষার ট্রান্সক্রিপ্ট।
-সদ্যতোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
-IELTS/TOFEL, GRE, GMAT ইত্যাদির সার্টিফিকেট। (যদি আপনার আবেদনকৃত বিশ্ববিদ্যালয় সেগুলো চেয়ে থাকে)
-দুইটি রেফারেন্স লেটার।
উপরোক্ত সকল ডকুমেন্ট স্ক্যান করে পিডিএফ ফাইল বানিয়ে আপলোড করতে হবে।
– এবং Statement of Purpose (SOP) এবং কিছু প্রশ্নের উত্তরের উপর ভিত্তি করে Letter of Intent. (এগুলো আবেদনের সময় সরাসরি লিখতে হবে, আলাদা কাগজে লিখে আপলোড করতে হবে না)

৬. আবেদন পদ্ধতি

আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে। এই প্রক্রিয়া খুবই সহজ, তবে একটু দীর্ঘ সময়ের কাজ। তুর্কিয়ে বুরসলারির ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার সচল একটি ইমেইল দিয়ে একাউন্ট খুলে একে একে সকল তথ্যাবলি দিয়ে পূরণ করতে থাকুন। এক স্টেপ শেষ করে সেভ দিয়ে আরেক স্টেপে চলে যাবেন। খুবই সহজ পদ্ধতি।

আর হ্যাঁ, আপনাকে কিন্তু একবারেই সমস্তটা পূরণ করতে হবে না। যখনই সময় হবে, ঠান্ডা মাথায় একাউন্টে লগ ইন করে একে একে সমস্ত তথ্য পূরণ করতে পারেন। যত খুশি ততবার লগ ইন করতে পারবেন। সুতরাং খুব জলদি করতে হবে, একদিনেই করতে হবে এমন কিন্তু না। সকল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেফারেন্স লেটার, অন্যান্য সার্টিফিকেট পিডিএফ করে আপলোড করবেন।

হাতে সময় নিয়ে করুন, আবেদনের শেষ সময়ে করবেন না। ওখানে Statement of Purpose এবং Letter Intent লেখার অপশন থাকবে, ধীরে ধীরে এগুলো পূরণ করবেন। আপনার Extra-Curricular Activities, Social Works, Award কিংবা Volunteering কার্যক্রমের সার্টিফিকেট থাকলে তা আপলোড করার অপশন থাকবে এবং সেগুলোর ছোট বর্ণনাও লিখতে হবে।

সকল ডকুমেন্ট আপলোড করার পর আপনার আপলোডকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আপনাকে সাবজেক্ট ও ইউনিভার্সিটির লিস্ট দেয়া হবে। আপনি সেখান থেকে সর্বোচ্চ ১২টি ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করতে পারবেন। অবশ্যই আপনি গুগল করে সরবাহকৃত ইউনিভার্সিটিগুলোর র‍্যাঙ্কিংসহ বিস্তারিত জেনে নিবেন। মনে রাখবেন আপনি প্রথম পছন্দ যে ইউনিভার্সিটি দিবেন, সেটাকেই অথোরিটি বেশি প্রায়োরিটি দিবে। তবে ব্যতিক্রমও হয়। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রমটিই হয়েছে।

সম্পূর্ণ পূরণ করার পর আপনি ফাইনাল চেক করার সুযোগ পাবেন এবং প্রয়োজনীয় এডিট করে সাবমিট করবেন।

৭. স্কলারশিপ প্রাপ্তির জন্য সহায়ক কার্যক্রম:

এখানে একটা বিষয় পরিষ্কারভাবে জেনে রাখুন, তার্কিশ স্কলারশিপ কেবলমাত্র রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে দেয়া হয় না। রেজাল্ট অবশ্যই একটা বিবেচ্য বিষয়, তবে স্কলারশিপ কমিটি আপনার রেজাল্টের পাশাপাশি আপনার এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস, ভলেন্টিয়ারিং কার্যক্রমের উপর বেশ নজর দিবে। এখানে Extra-Curricular Activities বলতে কনফারেন্স, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, সোশ্যাল ওয়ার্ক, সামার ক্যাম্প, ভলেন্টিয়ারিং কার্যক্রম ইত্যাদিতে অংশগ্রহণে কথা বলছি।

অনেকে জানতে চান এমন সহায়ক কতটি সার্টিফিকেট লাগবে? আমি উত্তরে বলি- এর কোনো লিমিটেশন নাই। বাঁধাধরা নিয়মও নাই। আপনি যতগুলোতে অংশগ্রহণ করেছেন সকল সার্টিফিকেট আপলোড করবেন। তবে এখানে বলে রাখা ভালো আপনি যে সাবজেক্টের জন্য আবেদন করেছেন সেই সাবজেক্ট রিলেটেড প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সার্টিফিকেট দিতে পারলেই বেশি ভালো।

তবে আপনার যদি কোনো সার্টিফিকেটই না থাকে তাহলে কি আপনি এপ্লাই করবেন না? আমি বলবো তবুও এপ্লাই করুন। তবে অবশ্যই এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস আপনাকে স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে।

৮. Letter of Intent কী?

তুর্কি সরকারি স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই লেটার অফ ইন্টেন্ট। এবার আসুন জেনে নিই আসলে লেটার অফ ইন্টেন্ট কী জিনিস। লেটার অফ ইন্টেন্ট চাকরির ক্ষেত্রে এক রকম আর স্কলারশিপের ক্ষেত্রে আরেক রকম। তবে তার্কিশ স্কলারশিপের ক্ষেত্রে LoI বলতে বুঝায়, এই অপশনে ৫/৬টি প্রশ্ন থাকবে। যেগুলো আপনি কি নিয়ে থিসিস করতে চান এই সম্পর্কিত।

প্রতিটি প্রশ্নে আপনার বিষয় সম্পর্কিত কিংবা আপনার পছন্দের টপিকে থিসিসের বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। এই যেমন আপনার থিসিসের নাম, অবজেক্টিভ, রিসার্স মেথড, লিটারেচার রিভিউ, কন্ট্রিবিউশন ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। অবশ্যই প্রতিটা প্রশ্নের উত্তরের জন্য শব্দের সীমাবদ্ধতা (Word Limit) থাকবে। (এটা অবশ্য মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য আবেদনকারীদের জন্য প্রযোজ্য)

৯. Statement of Purpose (SOP) -এ কী লিখবেন?

তুর্কি স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে SOP। এখানে বলে রাখা ভালো অনার্সের আবেদনের ক্ষেত্রে লেটার অব ইন্টেন্ট (Letter of Intent) বা পার্সোনাল এসে ( Personal Essay) মানেই SOP। তাই সকল আবেদনকারীর জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কী কী বিষয় লিখবেন এই লেটারে তা স্কলারশিপ অথোরিটি আপনাকে হিন্টস দিয়ে দিবে।

যেমন- আপনি যে বিষয়ের জন্য আবেদন করছেন সে বিষয় সম্পর্কিত আপনার একাডেমিক এবং সামাজিক অভিজ্ঞতা, উচ্চশিক্ষার জন্য তুরস্ককে পছন্দের কারণ, আপনার ডিগ্রি বা শিক্ষা এবং তুরস্কের বৃত্তির জন্য আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ে একটি রচনা লিখবেন।

আপনাকে নির্দিষ্ট কোনো ফরম্যাট ফলো করে লিখতে হবে না। নিজের মতো করে লিখবেন, তবে তা যেন আবার আপনার সমগ্র জীবনের বৃত্তান্ত না হয়ে যায়। তাহলে লেখা খুব বেশি বড় হয়ে যাবে। আবার একেবারে ছোটও লিখবেন না। মোটামুটি ৫০০ শব্দ/৩০০০ ক্যারেক্টারের মধ্যে লিখে ফেলবেন।

এখানে একটা কথা ভালোভাবে মাথায় রাখুন, কখনোই এটা আপনি আপনার কোনো বন্ধু, বড় ভাই, শিক্ষক বা অন্য কাউকে দিয়ে লিখিয়ে নিবেন না। খুব শক্ত, কঠিন ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করবেন না। আপনার নিজের ভাষায় সহজ করে লিখুন। এটাই সেরা অপশন। মনে রাখবেন আপনি স্কলারশিপ অথোরিটিকে ফাঁকি দিতে পারবেন না।

১০. Reference Letter কার থেকে নিবেন?

এই স্কলারশিপের জন্য দুইটি রেফারেন্স লেটার বা রিকমেন্ডেশন লেটার বাধ্যতামূলক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কাদের থেকে নিবেন এই রেফারেন্স লেটার? সবচেয়ে ভালো হচ্ছে আপনার শিক্ষক থেকে নিলে, যেখানে আপনার শিক্ষক আপনার সম্পর্কে লিখবে, আপনার আবেদনকৃত বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কোনো শিক্ষক থেকে নিবেন।

অথবা যিনি আপনার থিসিসের এডভাইজার ছিল কিংবা আপনার সম্পর্কে ভালো জানে। তাঁদের থেকেই নিন। মনে রাখবেন আপনি যাদের থেকে রেফারেন্স লেটার নিয়েছেন, তাদের নাম্বার ও ইমেইল আবেদনের সময় একটা অপশনে জমা দিতে হবে। স্কলারশিপ অথোরিটি তাদের সাথে পরবর্তীতে যোগাযোগ করবে। সাধারণত তারা রেফারিকে মেইল দেয়।


[প্রিয় পাঠক, আপনিও লিখতে পারেন ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সে। শিক্ষা, ক্যারিয়ার বা পেশা সম্পর্কে যে কোনো লেখা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন। পাঠাতে পারেন অনুবাদ লেখাও। তবে সেক্ষেত্রে মূল উৎসটি অবশ্যই উল্লেখ করুন লেখার শেষে। লেখা পাঠাতে পারেন ইমেইলে অথবা ফেসবুক ইনবক্সে। ইমেইল : [email protected]]

১১. ইন্টারভিউ

তুর্কি স্কলারশিপ প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ। আবেদন করার প্রায় ২ থেকে ৩ মাস পর ভাইভার জন্য ডাকে। অবশ্য এর কারণও আছে। প্রতি বছর প্রায় লক্ষাধিক এপ্লিকেশন জমা পড়ে, সেখান থেকে খুবই সতর্কতার সাথে স্কলারশিপ কমিটি বাছাইকৃতদের ভাইভাতে ডাকে। মনে রাখা দরকার ভাইভাতে ডাক পাওয়া মানেই চান্স পাওয়া নয়। ভাইভায় তার্কিশ প্রফেসররা আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবে এবং আবেদনের সময় আপনার সরবরাহকৃত সকল ডকুমেন্টসের মূলকপিগুলো দেখবে। ভাইভা স্বাভাবিকভাবে ইংরেজিতেই হবে, তবে আপনি চাইলে বাংলাতেও দিতে পারবেন, সেখানে দোভাষী থাকে।

ইন্টার্ভিউ দিতে যাওয়ার আগে আপনি যে সকল সাবজেক্টের জন্য এপ্লাই করেছেন সেগুলো সম্পর্কে মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন। আপনাকে আপনার আবেদনকৃত সাবজেক্ট সম্পর্কে এবং তুরস্ক সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে। কেন তার্কিতে পড়তে চান? কেন এই সাবজেক্টে আপনার আগ্রহ? তুর্কি ভাষায় পড়তে চান কিনা? অন্য কোথাও আবেদন করেছেন কিনা? আপনার এই সাবজেক্ট আপনার দেশের কী উপকারে আসবে? আপনার ফিউচার প্লান কী? দেশে ফিরে আসবেন কিনা? ইত্যাদি প্রশ্ন করবে।

এক্সাক্ট আপনাকে কী জিজ্ঞেস করবে সেটা কেউ বলতে পারবে না। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। উনারা খুবই আন্তরিক ও হেল্পফুল। আপনার সাথে খুব মজা করে কথা বলবে, খুব সহজ ইংরেজিতে। আপনার কেবল কনফিডেন্স রাখলেই হবে।

১২. তুর্কি ভাষা শেখা কি বাধ্যমূলক?

আপনি যে স্তরের জন্যই তুর্কি স্কলারশিপ পান, আপনাকে প্রথমে এক বছরের ভাষা কোর্স করতে হবে। এটা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। এমনকি আপনি যদি ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার জন্য স্কলারশিপ পান তবুও। তবে কিছু ব্যতিক্রম আছে, যদি আপনি যে ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ পেয়েছেন, সে ইউনিভার্সিটির সাথে স্কলারশিপ অথোরিটির (YTB) চুক্তি থাকে যে ইংরেজি মাধ্যমে হলে ভাষা কোর্স করা লাগবে না, তাহলে আপনি সরাসরি মূল কোর্সে চলে যেতে পারবেন।

উদাহরণসরূপ বলা যায়- আমি আংকারা ইউনিভার্সিটিতে The Sea and Maritime Law ডিপার্টমেন্টে ইংরেজি মাধ্যমে মাস্টার্সে পড়ি। আমার ডিপার্টমেন্টের সাথে স্কলারশিপ অথোরিটির চুক্তির কারণে আমার জন্য তুর্কি ভাষা কোর্স শেখা বাধ্যতামূলক নয়। তবে ইংরেজি মাধ্যমে চান্স পাওয়া একটু কঠিন ও ভাগ্যের ব্যাপার। আমার ব্যাচে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র আমিই ইংরেজিতে চান্স পেয়েছি।

তবে আপনি ফ্রিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে নতুন একটি ভাষা শিখবেন, নতুন এক অভিজ্ঞতা হবে, এটা মন্দ কিসের? বিশ্বাস করুন- সত্যি উপভোগ করবেন, তার্কিশ ভাষা অনেক মজার।

১৩. কোনো এজেন্টের সহয়তা নিবেন কি?

এখানে একবাক্যে বলবো ‘না’। আপনি কোনো এজেন্টে থেকে কোনো প্রকার সহায়তা নিবেন না। সব নিজে নিজে করবেন। এপ্লাই করার জন্য কোনো টাকা লাগে না। অনেকে অফার করবে এত টাকা দিলে এপ্লাই করে দিবো, নিশ্চিত স্কলারশিপ পাইয়ে দিবো, এমন কোনো ফাঁদে পা দিবেন না। তাহলে আপনি আবেদনের সময় কোনো সমস্যায় পড়লে হেল্প পাবেন কোথায়? নিম্নে আমি একটি গ্রুপ লিংক দিবো, সেখানেই সকল সহায়তা পাবেন।

১৪. বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর স্কলারশিপ পাওয়ার হার কেমন?

২০১৯ সালে বিশ্বের ১৭৫টি দেশের ৫০০০ জন শিক্ষার্থী এই স্কলারশিপ পেয়েছে। তারমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৬৩জন চান্স পেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬০০০ আবেদনকারীর মধ্যে ১৫৩ জন ভাইভা দিয়েছিলো। প্রতিবছরই ৫০+ শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে এই স্কলারশিপ পেয়ে আসছে। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে যেমন তীব্র প্রতিযোগিতা হয় তেমনই স্কলারশিপ পাওয়ার হারও খারাপ নয়।

১৫. স্কলারশিপ আবেদনের সংবাদ পাবেন কোথায়?

তার্কিশ স্কলারশিপ এপ্লিকেশনের খবরাখবর বিভিন্নভাবে পাওয়া যায়। প্রথমত তুর্কিয়ে বুরসলারির ওয়েবসাইটে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায়। আমি নিম্নে তিনটি লিংক দিচ্ছি। নিয়মিত নজর রাখলে সকল আপডেট পেয়ে যাবেন।
ক. তুর্কিয়ে বুরসলারির ওয়েবসাইট- www.turkiyeburslari.gov.tr/
খ. তুর্কিয়ে বুরসলারির ফেসবুক পেজ- www.facebook.com/turkiyeburslari/
গ. বাংলাদেশীদের সহযোগিতা করার জন্য ফেসবুক গ্রুপ- Turkey Burslari Scholarship for Bangladeshi Students

১৬. স্কলারশিপ সংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্নের উত্তর পাবেন যেখানে?

তুর্কি স্কলারশিপ সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের উত্তর পাবেন নিম্নের গ্রুপে। গ্রুপে জয়েন করে প্রথমে গ্রুপের ফাইল সেকশনের লেখাগুলো ভালোভাবে পড়বেন এবং আগের পোস্টগুলো দেখবেন। এবং আপনার কোনো কিছু জানার থাকলে পোস্ট করবেন।
সকল প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার লিংক- www.facebook.com/groups/331137687085930/

১৭. স্কলারশিপ আবেদনের লিংক:

https://tbbs.turkiyeburslari.gov.tr/

তুরস্ক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য খুব পছন্দের একটি গন্তব্য। আমার মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দেশের মানুষ এখানে পড়ালেখা করে। সব ধরনের মানুষের আনাগোনা এখানে। তাহলে আর কী? আপনার উচ্চশিক্ষার ঠিকানাও হোক তুরস্ক। সুতরাং এখন থেকেই শুরু করুন প্রস্তুতি। অবশ্যই আপনি সফল হবেন।

(Special Thanks to Md Syful Islam for these precious information in a well arranged manner.)

 

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top