উচ্চশিক্ষায় ইউরোপের দেশগুলোর খ্যাতি অনেক আগে থেকে। তবে দিন দিন বিশ্বে জার্মানির জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় স্বল্প খরচে মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার জন্য জার্মানির জুড়ি নেই। শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তিতে তাদের এই সুযোগ-সুবিধার জন্য বিশ্বের নানা প্রান্তের হাজারো শিক্ষার্থী প্রতিবছর জার্মানিতে পাড়ি জমান। জার্মানির মার্টিন লুথার ইউনিভার্সিটির ফার্মাসিউটিক্যালস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি বিভাগে পড়ছেন বাংলাদেশের কাশফিয়া জলিল। তিনি জার্মানির উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন–
বিনা খরচে উচ্চশিক্ষা
জার্মানিতে স্বল্প খরচে পড়া গেলেও তারা সম্পূর্ণ বিনা খরচেও শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকেই জার্মান সরকার তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। জার্মানির মোট ১৬টি স্টেটের মধ্যে বাদেন-ইয়ুর্তেমবার্গ ছাড়া বাকি ১৫টি স্টেটেই উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো টিউশন ফি নেই।
খরচের তারতম্য
পড়াশোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কেবল ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে প্রতি ছয় মাসে একবার সেমিস্টার ফি নেয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে বিভিন্ন পরিমাণের হয়ে থাকে। তবে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের নিজে থেকেই করে নিতে হয়। মাসে প্রায় ৭০০ থেকে ১০০০ ইউরো এর পিছে খরচ হয়ে থাকে। শহরভেদে এই পরিমাণে তারতম্য দেখা যায়।
যথেষ্ট বৃত্তির সুযোগ
ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য জার্মানিতে যথেষ্ট পরিমাণে বৃত্তির সুযোগ আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগঠন হচ্ছে জার্মান একাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিস বা ডাড। কোর্সের ওপর ভিত্তি করে মাস্টার্সের মেয়াদ এক থেকে দুই বছর ও পিএইচডির মেয়াদ ৩৬ থেকে ৩৮ মাস পর্যন্ত হয়। ছয় মাসের অধিক মেয়াদের বৃত্তির আওতায় জার্মান ভাষা শেখার জন্য ডয়েচে ইউনি-অনলাইন (ডিইউও) মডিউলগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে।
দেশ ও বয়সের সীমাবদ্ধতা নেই
আবেদনের জন্য এখানে কোনো দেশ ও বয়সের সীমাবদ্ধতা নেই। এই বৃত্তির আওতায় স্বাস্থ্যবিমার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাচেলর কোর্সে প্রতি মাসে ৭৫০ ইউরো এবং মাস্টার্সে ১০০০ ইউরো দেওয়া হয়। বৃত্তির অন্তর্ভুক্ত অনুদানে যাবতীয় খরচও মিটে যায়। স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই স্নাতক পাস হতে হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় বছর একাডেমিক পিরিয়ড দেখানো যায়। ভাষাগত দক্ষতার ব্যাপারটি বাছাইকৃত কোর্সের ওপর নির্ভর করে।
ভাষাগত দক্ষতা
আইইএলটিএস স্কোর ন্যূনতম ৬ হতে হবে। টোফেল এখন গ্রহণ করা হয় না। আর জার্মান ভাষার জন্য বি-১ লেভেলের প্রশংসাপত্র প্রয়োজন। তবে জার্মান ভাষা সব ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়। জার্মানিতে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির ক্ষেত্রে জার্মান জানা থাকলে সুবিধা হয়। মাস্টার্সের জন্য স্কলারশিপের আবেদন করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এখানে অন্যান্য প্রয়োজনীয় একাডেমিক ডকুমেন্টের পাশাপাশি অন্তত দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা দেখাতে হয়। তবে এটি শুধু ডাড স্কলারশিপের জন্যই।
জনপ্রিয় স্কলারশিপ
অন্যতম জনপ্রিয় স্কলারশিপ হলো ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশিপ। ইউরোপীয় কমিশন এই স্কলারশিপটি প্রদান করে থাকে। বিমান টিকিট থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ হয়ে যায় এই একটি স্কলারশিপে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের জন্য এই স্কলারশিপে আবেদন করা যায়। সাধারণত আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশিপের আবেদন নেওয়া হয়। কৃষি ও ভেটেরিনারি, প্রকৌশল, উৎপাদন ও নির্মাণ, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ, মানবিক ও শিল্প, বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটিং এবং সোশ্যাল সায়েন্সেস, বিজনেস অ্যান্ড ল ইত্যাদি বিষয় এই স্কলারশিপের আওতাধীন।
সূত্র : আজকের পত্রিকা