ফেসবুক পেইজে রিচ বাড়ানোর ১১টি অব্যর্থ কৌশল

ফেসবুক পেইজে রিচ বাড়ানোর ১২টি অব্যর্থ কৌশল

ফেসবুক মার্কেটিং বর্তমানে উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের অন্যতম প্রধান বিপণন মাধ্যম। আপনি যদি কোনো উদ্যোক্তা হন বা ফেসবুক পেইজের অ্যাডমিন হন, তাহলে নিশ্চয়ই ফেইসবুক পেইজে রিচ বাড়ানোর এ কৌশলগুলো আপনার খুবই কাজে দেবে।

আর হ্যাঁ, এ কাজগুলো আপনি করতে পারবেন কোনো ধরনের খরচ ছাড়াই। সেজন্য আপনাকে শুধু এই নিবন্ধটি শেষ পর্যন্ত কষ্ট করে পড়তে হবে। তাহলে আসুন শুরু করি…

ফেইসবুক পেইজে যা করবেন না

১. শুধু লিংক বা পণ্যের আপডেট শেয়ার করা

ফেইসবুক পেইজে শুধু লিংক বা পণ্যের আপডেটই শেয়ার করবেন না।

বরং আপনার নিজের ও টিমের ছবি দিন।

পোস্টে বা  বিজ্ঞাপনে রসবোধ নিয়ে আসুন। মোটিভেশনাল কথাবার্তা বা উদ্বৃতি দিয়ে গ্রাফিক্স বা ছবি তৈরি করে ব্যবহার করুন।

এতে করে ইউজার অ্যাংগেজমেন্ট বাড়বে। পেজ ও পোস্টের রিচ বাড়বে।

২. পণ্য বা সেবা বিক্রির পোস্ট দেয়া

ফেইসবুক পেইজে শুধু পণ্য বা সেবা বিক্রির প্রচারই চালাবেন না।

মনে রাখবেন ফেসবুক মূলত মানুষের আগ্রহের ওপর প্রতিষ্ঠিত। মানুষের যে বিষয়ের প্রতি আগ্রহ রয়েছে ফেসবুক সেটাকে প্রাধান্য দেয়। এটা একটি সামাজিক মাধ্যম। সাধারণ ইউজাররা এখানে বেচা-কেনা করতে আসেন না। বরং অবসর-বিনোদনের জন্য আসেন।

তাই আপনার পেইজ বা পোস্টের রিচ বাড়াতে হলে সামাজিক বিষয়কে প্রাধান্য দিন। সর্বোচ্চ ২০ ভাগ পোস্ট রাখুন পণ্য বা সেবা বিক্রির পোস্ট।

আপনার প্রতিষ্ঠানের গল্প বলুন, সাফল্যের গল্প বলুন, কিভাবে কাজ করেন তা জানান। প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা বৃদ্ধির জন্য পোস্ট দিন। ব্যক্তিগত আনন্দ শেয়ার করুন।

এতে করে ইউজার অ্যাংগেজমেন্ট বাড়বে। পেজ ও পোস্টের রিচ বাড়বে।

৩. ফেসবুকের সাথে চালাকি

ফেসবুকের সাথে চালাকি করতে যাবেন না। যেমন- লাইক কেনা, অপ্রাসঙ্গিক চটকদার হেডলাইন বা স্প্যামিং (একের পর পোস্ট দিতে থাকা, কমেন্ট করতে থাকা, শেয়ার করতে থাকা ইত্যাদি) করবেন না। এটা নিছক সময় ও অর্থের অপচয়। ফেসবুকের রুল অনুযায়ী এসব কাজ নিষিদ্ধ।

আপনি হয়তো শুনে থাকবেন, কারো পেইজ ডিজ্যাবল হয়ে গেছে, এক সপ্তাহ বা মাসের জন্য কিংবা চিরদিনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিজ্যাবল করে দিয়েছে ইত্যাদি। এসব কেন হয়?

কারণ যখন কেউ ফেসবুকের নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করতে থাকে তখনই ফেসবুক এ ব্যবস্থা নেয়।

তাহলে ভাবুন তো, অনে সাধনা করে তিলে তিলে গড়ে তোলা একটি পেজ বা অ্যাকাউন্ট চিরতরে হারালে কেমন লাগবে?

তাই সাবধান। নিয়ম মানুন। ভালো থাকুন।

৪. বেশি ফ্যান তৈরি!

পেইজে বেশি ফ্যান তৈরি করবেন না। বেশি ফ্যানসমৃদ্ধ পেইজ সম্পর্কে নির্মম একটি সত্য জেনে নিন। আপনার যত বেশি হবে, রিচ তত কম হবে!

কেন?

তাহলে শুনুন। আমরা আগেই বলেছি, ফেসবুক একটি এলগারিদম মেনে চলে। আর সেটা হচ্ছে পাঠকের আগ্রহ। আপনার যত বেশি ফ্যান, তত বেশি তাদের আগ্রহের পার্থক্য। একজনের হয়তো পছন্দ কলা। আরেকজনের মাল্টা। মানে একেকজনের একেক কনটেন্ট।  সেক্ষেত্রে সবার আগ্রহ মেটাতে গেলে আপনাকে প্রচুর কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। না হয় কিছু লোক সক্রিয় থাকবে, বাকিরা থাকবে নিষ্ক্রিয়। ফলে আপনার পেজের রিচ কমে যাবে।

তাই বেশি ফ্যান না বানিয়ে একই আগ্রহের ফ্যানবেইজ তৈরি করা ভালো।  তাতে একই ধরনের কনটেন্ট দিয়ে ফ্যানদের ধরে রাখতে পারবেন। তারাও সক্রিয় থাকবে। পেজের রিচ বাড়বে। একই আগ্রহের আরো গ্রাহক বা ফ্যান পাবেন।

তাছাড়া অল্প ফ্যান থাকলে তাদের সাথে যোগাযোগ করাও সহজ হবে। ফলে দ্রুত আপনার পণ্য বা সেবা সেল হবে।

ফেইসবুকে অরগানিক রিচ বাড়ানোর উপায়

এবার আসুন জানি কিভাবে ফেইসবুক পেইজের অরগানিক রিচ বৃদ্ধি করবেন।

১. পেইজে নিয়মিত উপস্থিতি ও আস্থা বৃদ্ধি

ফেইসবুকে আপনার নিয়মিত উপস্থিতি বৃদ্ধি করুন। আপনার নিজের ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি করুন।

এক্ষেত্রে-

  • সঠিক ফ্যান তৈরি করুন। হাজারো ফ্যানের চেয়ে ৫০ জন্য যথাযথ ফ্যান উত্তম।
  • আপনার প্রতিষ্ঠান বা সেবার প্রতি আগ্রহী ফ্যান গড়ে তুলুন। এতে করে আপনার পোস্ট বা কনটেন্ট তার নিউজ ফিডে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। বাড়বে আপনার সেল।
  • আপনার বা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড উপস্থিতি তৈরি করুন। যেকোনো পোস্টে আপনার লোগো, ছবি ব্যবহার করতে চেষ্টা করুন।
  • আপনার ফ্যানদের তথ্য বিশ্লেষণ করুন। তাদের আগ্রহ কিসে? সমস্যা কী? আপনার ব্যবসায়, সেবা বা ইন্ড্রাস্ট্রি সম্পর্কে তাদের মনোভাব কী? তাদের অভিযোগ কী? -তা ভালোভাবে জানুন।
  • ফ্যানদের সমস্যা বা অভিযোগের সমাধান কিভাবে করবেন তার পরিকল্পনা করুন, সে অনুযায়ী পোস্ট দিন।
  • আপনার পেইজ ভালোভাবে সাজান। প্রয়োজনীয় তথ্য আপডেট করুন। লোগো ও সুন্দর কভার ফটো ব্যবহার করুন। দরকারি ট্যাব সংযুক্ত করুন। ইমেইল কালেকশন ফরম, পডকাস্ট, ভিডিও প্লেয়ার, কুইজ, ইকমার্স ট্যাব ইত্যাদি সংযুক্ত করে পেজটিকে সাজিয়ে নিন।

বি:দ্র: আপনার পেইজটি ভালোভাবে সাজাতে GTFC Web Solution – এর সেবা নিতে পারেন।

২. চিরসবুজ কনটেন্ট

‘চিরসবুজ কনটেন্ট’ প্রকাশ করুন। চিরসবুজ মানে যেই কন্টেটের আবেদন চিরস্থায়ী। যা কোনো দিন পুরনো হয় না। যেমন ধরুন- একটি উদ্বৃতি বা বানী।

  • ফেসবুক পেজ দিয়ে আপনার লক্ষ্য বিক্রি বা কন্টেন্ট ভিউ যা-ই হোক না কেন এ ধরনের চিরস্থায়ী আবেদনসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরি করুন। এতে করে আপনি একই কনটেন্ট দিয়ে অনেক ভিজিটর ও ভিউ পাবেন। দেখবেন পোস্টটি প্রচুর শেয়ার হচ্ছে, লাইক বা কমেন্ট পাচ্ছে। ফলে ক্রমেই রিচ বাড়বে আপনার পোস্টের।
  • আপনি বুস্ট করলেও এ ধরনের কনটেন্ট বুস্ট করুন। এতে ফলাফল অনেক বেশি পাবেন।
  • কোনো কনটেন্ট মানুষ পছন্দ করলে সেটি পুনর্নির্মান করে পোস্ট করুন। একটু ভিন্নতা আনুন, নতুন ফ্লেভার যোগ করুন। ভিন্ন সময়ে পোস্ট দিন। এতে নতুন কিছু ভিজিটর পাবেন।
  • অন্যদের চিরসবুজ কনটেন্ট থেকে আইডিয়া নিন। সেটিকে সরাসরি শেয়ার না করে আপনার পেইজে আপলোড করে কিছু লিখে শেয়ার করুন।
  • আপনার সেক্টর বা পেইজের সাথে সম্পর্কযুক্ত কোনো বিশেষ কনটেন্ট অন্য কোথাও শেয়ার হলে সেটিকে আপনার পেইজেও শেয়ার করতে পারেন। বিশেষ করে আপনার সেক্টরের টপ কোনো ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার, বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ইত্যাদি। তবে মনে রাখবেন, কনটেন্টটি আপনার কনটেন্ট স্ট্রাটেজির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হলেই কেবল তা শেয়ার করবেন।

যেকোনো কনটেন্ট তৈরি ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন-

  • ভালো ছবি বা ফুটেজ ব্যবহার করুন
  • খুব বেশি ফরমাল হবেন না
  • কনটেন্ট সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্ট রাখুন
  • প্রাসঙ্গিক কোনো প্রশ্ন রাখুন
  • মানবিকতা বজায় রাখুন
  • পরিষ্কারভাবে কোনো কিছু করার আহ্বান (Call to action) রাখুন। (যেমন- লাইক-কমেন্ট বা শেয়ার করতে বলা, লগইন বা সাইন আপ করা, ফোন বা মেসেজ করতে বলা ইত্যাদি।

৩. ফেইসবুক গ্রুপ

একটি ফেইসবুক গ্রুপ তৈরি করুন। যেখানে আপনার পেইজ থেকে সক্রিয় সদস্যদের ইনভাইট করুন। বর্তমানে ফেসবুক কমিউনিটি ভিত্তিক তৈরিতে উৎসাহ দিচ্ছে। পেইজের রিচ কমে গেলেও গ্রুপ গুলোতে পোস্ট করলে তা সদস্যদের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি।

গ্রুপে পোস্ট করার ক্ষেত্রেও পেইজে পোস্টের কৌশলগুলো মনে রাখুন।

এক্ষেত্রেও সদস্য সংখ্যার দিকে মনোযোগ না দিয়ে বরঞ্চ আগ্রহীদের দিকে নজর দিন।

৪. পোস্ট টার্গেটিং

পোস্ট টার্গেটিং ফিচার ব্যবহার করুন। বিজ্ঞাপন বা বুস্টের মতো আপনি পেইজের যেকোনো পোস্টে অডিয়েন্স টার্গেট করতে পারেন। সেটা হতে পারে বয়স বা লোকেশনের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে আপনার পোস্টটি কাঙ্খিত গ্রাহক দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। ফলে রিচ বাড়বে। বাড়বে অ্যাঙ্গেজমেন্টও।

তবে এই ফিচারটি পেতে হলে আপনার পেইজে কয়েক হাজার ফ্যান থাকতে হবে।

প্রথমে এই অপশনটি আপনার পেজ সেটিংস-এ গিয়ে এনাবল করতে হবে। তারপর পোস্ট করার সময় অডিয়েন্স সেটিংসে গিয়ে বয়স ও লোকেশন সেট করে দিতে পারবেন।

যেসব স্থানীয় বিজনেস বিভিন্ন বয়সের গ্রাহক নিয়ে কাজ করেন, তাদের জন্য এ অপশনটি ভালো কাজে দিতে পারে….

৫. ফেসবুকে পোস্ট করার সঠিক সময়

আপনার কম্পিটিটর যখন ঘুমায় তখন পোস্ট করুন।

ফেইসবুকে পোস্ট করার সঠিক সময় কখন? এই প্রশ্নের সহজ কোনো উত্তর নেই।

এক্ষেত্রে আপনাকে বিবেচনা করতে হবে-

  • আপনার লোকেশন এবং অডিয়েন্সের লোকেশন
  • আপনার অডিয়েন্সের প্রোফাইল (বয়স, আগ্রহ, পেশা ইত্যাদি)
  • আপনার তৈরি করা কনটেন্টের ধরন ইত্যাদি

CoSchedule এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বেলা ১টা থেকে ৪টার মধ্যে পোস্ট করা সবচেয়ে ভালো।

তবে ছুটির দিনে দুপুর ১২ থেকে ১ টাই ভালো।

তবে আপনি আপনার পেইজ ইনসাইট দেখতে পারেন। দেখুন, অতীতে কোন সময় আপনার পেইজে সবচেয়ে বেশি ভিজিটর এসেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন- অফ-পিক আওয়ারে পোস্ট করতে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিজিটর অনলাইনে থাকেন। তবে এই সময়ে অন্যান্য ফেসবুক পেইজে পোস্ট সাধারণত কম হয়। ফলে এ সময়ে পোস্ট করলে সেটি দর্শকদের সামনে বেশি পড়ার কথা। ফলে পোস্টে অ্যাঙ্গেজমেন্ট বাড়বে। আর অ্যাঙ্গেজমেন্ট বেশি হলে ফেসবুক পোস্টটিকে বেশি গ্রাহকের কাছে দেখাবে।

সুতরাং যখন অন্যরা পোস্ট না করে সেই সময়টিকে আপনি বেছে নিতে পারেন। পোস্টের রিচ বাড়বে।

৬. ফেইসবুক পেইজে কোন ধরনের পোস্ট করবেন?

আপনার পেইজের ফ্যান বা ফলোয়ারদের পছন্দসই পোস্ট দিন।

ফেইসবুকে কোন ধরনের পোস্ট করবেন? ফটো, টেক্সট, লিংক নাকি অন্য কিছু। আসলে বিষয়টা নিয়ে আপনাকে একটু গবেষণা করতে হবে।

আমি এক কথায় কোনো একটার কথা বলে দিলে সেটা আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই আপনার ফেসবুক পেইজ ইনসাইট দেখুন। আপনার পেইজের ফলোয়াররা কোন ধরনের পোস্ট পছন্দ করে।

ফ্রেড আলবার্টির এক গবেষণায় দেখেছেন- লিংক বা ফটোসহকারে কোনো পোস্ট দেয়ার চেয়ে বা ছবির ক্যাপনে লিংক দেয়ার পরিবর্তে শুধু লিংক শেয়ার করলে ৮২% বেশি পেইজ ভিউ হয়েছে।

যদিও লিংক শেয়ার করলে অরগানিক রিচ কম হয় বলে এই টাইপের পোস্ট অনেকেই এখন করেন না।

তবে আমার পরামর্শ থাকবে আপনার ফ্যানদের কাছে মূল্য থাকলে যেকোনো ধরনের পোস্ট আপনি করতে পারেন। সেটা হতে পারে লিংক, ইমেজ, পোল বা জরিপ, ফেসবুক লাইভ, ফেসবুক স্টোরি এমনকি ফেসবুক ভিডিও।

কোনো এক ধরনের পোস্টে আটকে থাকবেন না। কারণ ফেসবুক নিয়মিত এলগারিদম পরিবর্তন করে। ফলে আজকের পদ্ধতি কালকে ভালো কাজ না করে অন্য পদ্ধতি ভালো করতে পারে।

আপনার ফ্যানরা কোন ধরনের পোস্ট বেশি পছন্দ করে তা জানতে ফেসবুক পোল ব্যবহার করতে পারেন।

৭. সরাসরি ভিডিও পোস্ট

ফেসবুকে বিভিন্ন ভিডিও শেয়ার করুন। আপনি হয়তো জানেন ফেসবুকের যে কোনো পোস্টের চেয়ে ভিডিও বেশি রিচ হয়। তাই আপনার পণ্য বা সেবার ভিডিও করে পোস্ট করুন।

আপনার যেই পোস্ট গুলো বেশি ভিউ হয়েছে, সেগুলোই সামান্য পরিবর্তন করে ভিডিও আকারে প্রকাশ করতে পারেন। তাছাড়া বেশ কিছু ছবি দিয়ে স্লাইড শো তৈরি করে প্রকাশ করুন।

ইন্টারেস্টিং যে কোনো ভিডিও যেগুলো আপনার ফ্যানেরা পছন্দ করতে পারে সে ধরনের ভিডিও প্রকাশ করুন।

দেখুন আপনার পেইজের রিচ কত দ্রুত বাড়ে…

আর হ্যাঁ, অবশ্যই ভিডিওর শুরুটা এমনভাবে করতে হবে যেন, ভিডিওটা শেষ পর্যন্ত দর্শক দেখেন। সাধারণত ফেসবুক ভিডিওগুলো ক্লিক করার আগ পর্যন্ত কোনো সাউন্ড ছাড়াই ভিজিটরের ফিডে চলতে থাকে। সেজন্য দর্শককে আকৃষ্ট করতে ভিডিওর শুরুতেই এক্সক্লুসিভ কিছু রাখুন। যাতে তিনি িডওতে ক্লিক করতে বাধ্য হন।

ভিডিওর শেষে ওয়েবসাইট ভিজিট অথবা ফোন বা করতে বলা অবশ্যই দরকার। আহ্বান করতে পারেন আপনার পণ্য বা সেবা গ্রহণ করতেও।

বুস্ট করা বা অ্যাড দেয়ার ক্ষেত্রেও ভিডিওকে প্রাধান্য দিন।

আরেকটি কথা ভিডিও অবশ্যই ফেসবুকে আপলোড করুন। সার্চ ইঞ্জিন জার্নালের গবেষণা মতে, ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করলে, তা শেয়ার করা ইউটিউব ভিডিও -এর চেয়ে দ্বিগুন রিচ হয়। আর রিচ বেশি হওয়ার কারণে দ্বিগুন লাইক, তিনগুন শেয়ার আর ৭ গুন বেশি কমেন্ট পাওয়া যায়।

৮. প্রতিদিন কয়বার পোস্ট করবেন?

আপনার পেইজে দৈনিক কতবার পোস্ট করবেন?

এটা আসলে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।

বড় ওয়েবসাইট যেমন- হাফিংটন পোস্ট, টেলিগ্রাফ বা নিউইয়র্ক টাইমসের মতো প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন অসংখ্য কনটেন্ট প্রকাশ করে। তারা তাদের কনটেন্ট ব্যাপক প্রচার করে ফেসবুকে।

তবে সাধারণ ব্র্যান্ডের জন্য এটা বাস্তবসম্মত না।

অনেক বেশি পোস্ট করবেন না। এতে ইউজার অ্যাঙ্গেজমেন্ট সাধারণত কম হয়। ফলে রিচও কমে।

প্রচলিত নিয়ম হচ্ছে- আপনার ফলোয়ারদের প্রতি লক্ষ্য রেখে দৈনিক ১টি থেকে ৩টি পোস্ট করা।

এ ক্ষেত্রে বেলা ১টা থেকে চারটার মধ্যে একটি পোস্ট করতে পারেন। এরপর সন্ধ্যার পর সেটিকে আরেকটু মডিফাই করে বা ভিন্ন ফরমেটে আবার পোস্ট করতে পারেন।

ফেইসবুক পেইজে পোস্ট করা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • দৈনিক ১-৩ বারের বেশি পোস্ট করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এর বেশি পোস্ট আপনার অডিয়েন্সের বিরক্তির কারণ হতে পারে।
  • আপনার দেশের বাইরের অডিয়েন্স থাকলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর পোস্ট করতে পারেন। এটা বিভিন্ন দেশের অডিয়েন্সকে রিচ করতে সাহায্য করবে।
  • সব সময় ভালো মানের কনটেন্ট প্রকাশ করুন। রসাত্মক, উদ্দীপনা ও শিক্ষামূলক কনটেন্ট দিয়ে অডিয়েন্সের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন।
  • বেশি বেশি পোস্ট করেও আপনি সফলতা পেতে পারেন যদি আপনার কনটেন্টগুলোর ভিন্নতা থাকে।
  • আপনার পেইজে পোস্ট করে পরীক্ষা চালান। পেইজ ইনসাইটে দেখুন- আপনার ফলোয়াররা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।

৯. ওয়ার্ড অব মাউথ মার্কেটিং

ওয়ার্ড অব মাউথ মার্কেটিং পদ্ধতি এপ্লাই করুন। এ পদ্ধতির মানে হলো মানুষই আপনার পণ্য বা সেবার প্রচার করবে।

আপনি হয়তো শুনে থাকবেন আপনার এলাকার কোন প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের কথা। এলাকার লোকজন বলাবলি করছে এই কিনবি নাকি অথবা যাবি নাকি ওই প্রতিষ্ঠানে?

ওরা এই দিচ্ছে , এত টাকা ছাড় দিচ্ছে, এটা ওটা ফ্রি দিচ্ছে ইত্যাদি। মানুষের এই যে আলোচনা, এটাই হলো ওয়ার্ল্ড অব মাউথ মার্কেটিং।

এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় এপ্লাই করতে পারেন।

  • আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কোনো বিশেষ সুবিধা দিন। দেখবেন আপনার প্রচার প্রতিষ্ঠান কর্মীরাই করবে।
  • কাস্টমারদের রেওয়ার্ড দিন।
  • রেফারেল বোনাস পেতে পারেন। মানে কেউ যদি আপনার পণ্য বা সেবা বিক্রি করে দিতে পারে তাকে বিশেষ কমিশন।
  • সর্বোচ্চ মানের গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করুন।
  • আপনার পেইজের কোনো পোস্ট শেয়ার করলে পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে পারেন।
  • কিংবা আপনার ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে মেসেজ করলে বিশেষ কমিশন দিতে পারেন।
  • পেইজের নির্দিষ্ট পোষ্টের আকর্ষণীয় কমেন্টের জন্য পুরস্কার দিতে পারেন।

এ ধরনের উদ্যোগ নিলে আপনার পেইজের অর্গানিক রিচ বাড়বে ইনশাআল্লাহ।

১০. প্রতিযোগিতার আয়োজন

ফেইসবুক পেইজের রিচ বাড়াতে প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারেন।

খুব অল্প সময়ে ফেসবুকে আপনার অবস্থান তৈরি করতে এটা আপনাকে সহায়তা করবে।

তবে এটা ফ্রি গিফট দেয়ার চেয়ে একটু আলাদা। আসুন জেনে নিই এটা আয়োজনের প্রক্রিয়া।

প্রথম ধাপ : প্রথমে প্রতিযোগিতার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আপনি কি অ্যাঙ্গেজমেন্ট নাকি ফ্যান বাড়াতে চান? নাকি পটেনশিয়াল কাস্টমার পেতে চান?

আপনি যা-ই চান না কেন আগে সেটা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করুন।

দ্বিতীয় ধাপ : কোন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করবেন তা নির্ধারণ করুন।

আপনি লিড জেনারেশন বা সম্ভাব্য কাস্টমার বাছাই করতে চাইলে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের ইমেইল বা ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে পারেন।

আপনার টার্গেট ফ্যান তৈরি হলে, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদেরকে আপনার পেইজ ফলো ও লাইক করার শর্ত দিতে পারেন।

এভাবে আপনার প্রতিযোগিতার লক্ষ্য অনুযায়ী পদ্ধতি সেট করুন।

তৃতীয় ধাপ : প্রতিযোগিতার নিয়ম নির্ধারণ করুন। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ফেসবুকের এ সংক্রান্ত নীতিমালাগুলো খেয়াল রাখুন।

কিভাবে বিজয়ী নির্ধারণ করা হবে তা উল্লেখ করে দিন। কারা অংশ নিতে পারবেন, কী প্রাইজ দেবেন তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন।

চতুর্থ ধাপ : কিভাবে বিজয়ী নির্ধারণ করবেন তা ঠিক করুন। অনেক ক্ষেত্রে দৈব চয়নের ভিত্তিতে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়।

কখনো কখনো প্রতিযোগিতার পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে বিচারক নির্ধারণও দরকার হতে পারে। আবার ভোটিং সিস্টেমেও বিজয়ী নির্ধারণ করতে পারেন।

পঞ্চম ধাপ : পুরস্কার নির্ধারণ ও প্রচারণা কৌশল। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়।

আপনি যদি সতর্কভাবে পুরস্কার নির্ধারণ না করে প্রচারণা শুরু করেন, সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাটি ফ্লপ হওয়ার আশংকা রয়েছে।

সব সময় আপনার ব্যবসায়ের সাথে প্রাসঙ্গিক জিনিসকে পুরস্কার হিসেবে নির্ধারণ করুন। না হলে এমন মানুষ হয়তো আপনার প্রতিযোগিতায় আকৃষ্ট হবেন, যাদেরকে দিয়ে আপনার কোনো লাভ হবে না।

বোনাস টিপস : আরো মানুষকে অংশগ্রহণ করাতে উৎসাহী করতে প্রতিযোগিতায় রেফারেল বোনাস পয়েন্ট রাখতে পারেন।

১১. পেইজের পোস্ট নিজের প্রোফাইলে শেয়ার

আপনার পেইজের পোস্ট নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করুন।

এতে করে আপনার পেইজের অর্গানিক রিচ বাড়বে। তবে কাজটি বারবার না করাই ভালো। কারণ এতে আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ডরা বিরক্ত হতে পারেন।

আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ডরা পছন্দ করতে পারেন এমন পোস্ট শেয়ার করুন।

এ প্রক্রিয়াটি কাজে লাগতে পারে যদি আপনার অন্তত এক হাজার ফেসবুক ফ্রেন্ড থাকে।

আর আপনার পেইজের ফলোয়ার সংখ্যা যদি একশ’র নিচে থাকে তাহলে আপনি পেইজের ইনভাইট অপশন ব্যবহার করে আপনার ফ্রেন্ডদের কাছে নোটিফিকেশন পাঠাতে পারেন।

১২. ফেইসবুকের নতুন ফিচারগুলো ব্যবহার

ফেইসবুকের নতুন নতুন ফিচারগুলো ব্যবহার করুন। আপনার পেইজের পোস্টগুলোর রিচ বাড়াতে ফেসবুকের নতুন ফিচারগুলো ব্যবহার করুন। পোস্টের বাইরে ফেসবুক স্টোরি, ৩৬০ ডিগ্রি ছবি ও ভিডিও, মেসেঞ্জার বট, ফেসবুক অফার, ফেসবুক ওয়াচ, ফেসবুক মার্কেটপ্লেস, ফেসবুক জবস ইত্যাদি সেবাগুলো ব্যবহার করুন।

এতে করে আপনি বহু লোকের কাছে পৌঁছতে পারবেন।

বোনাস টিপস : সর্বোপরি কথা হচ্ছে রিচের পরিবর্তে আপনার গ্রাহকদের ভ্যালু দিতে চেষ্টা করুন। এটাই একটা সময়ে আপনার রিচ বাড়িয়ে দেবে। আপনার কনটেন্ট যদি মানুষের উপকার করতে পারে তাহলেই মানুষ আপনার কাছে আসবে।

প্রিয় বন্ধু, আমাদের এ সিরিজটি এ পর্বেই শেষ করতে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে নতুন কোনো কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো ইনশাআল্লাহ। তাই ফলো করুন সাথে থাকুন। আশা করছি উপকৃত হবেন।

আরেকটি বোনাস টিপস

বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত হোন। পোস্ট বা মন্তব্য করে মানুষের সাথে পরিচিত হোন। এরপর তাদেরকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান।

নিজের প্রোফাইলে মাঝে মাঝে আপনার ব্যবসা বা সেবার কথা বলুন। তবে ব্যবসায়িক পোস্ট শুধু দিতেই থাকবেন না। বরং আপনার ছবি, বিভিন্ন বানী, উদ্ধৃতি, কৌতুক ইত্যাদি শেয়ার করুন।

৫/৭টি পোস্টের মাঝে একটি বিজ্ঞাপনী পোস্ট দিন। আশা করা যায় আপনার সেবা বা পণ্যের বিক্রি বেশি হবে।

লেখক : উদ্যোক্তা, ওয়েব ডেভেলপার ও ডিজিটাল মার্কেটিং পরামর্শক


এধরনের আরো চমৎকার লেখা পড়তে আপনার ইমেইল সাবমিট করুন-


লেখা প্রকাশের সাথে সাথেই আপনার কাছে তা পাঠিয়ে দেবো।

2 thoughts on “ফেসবুক পেইজে রিচ বাড়ানোর ১২টি অব্যর্থ কৌশল”

  1. খুব দরকারী নিবন্ধ, যদি আপনার রেফারেন্সের প্রয়োজন হয়, আপনি এটি এখানে পরীক্ষা করতে পারেন
    https://e-journal.unair.ac.id/

Comments are closed.

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top