এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ- এর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে বুধবার (৪ জানুয়ারি) উদযাপিত হয়েছে। ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় এইউবি’র সুবিশাল স্থায়ী ক্যাম্পাসে জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
সকাল ১০টায় এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে শান্তির প্রতীক কবুতর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম খচিত ফেস্টুনসহ বর্ণিল রঙের বেলুন উড়ানো হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য র্যালি, সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
‘শিক্ষায় নব দিগন্ত’ স্লোগান নিয়ে ১৯৯৬ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকার ওসমানী মিলনায়তনে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের উদ্বোধন ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে অনেক যোগ্য, নিবেদিতপ্রাণ ও আলেকিত মানুষদের চেষ্টা-সাধনায় ২৬ বছরের দীর্ঘপথ গর্বিত পদভারে পাড়ি দিয়ে এইউবি আজ এক মহিরুহে পরিণত হয়েছে। আজও শিক্ষার মান, অবকাঠামো এবং ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যার দিক থেকে দেশের অন্যতম সেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি ‘মানসম্মত শিক্ষা, মানসম্মত সেবা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল আয়োজনে এইউবি’র প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক, উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহজাহান খান, বুয়েট’র সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম নজরুল ইসলাম, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নুরুল ইসলাম, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ জাফার সাদেক, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অন্যতম সদস্য মিসেস সালেহা সাদেক, রেজিস্টার একেএম এনামুল হক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. তারেক কুদ্দুসসহ সকল অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধানসহ শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা-কর্মচারী, অতিথিবৃন্দ, অভিভাবকমন্ডলী, শুভানুধ্যায়ী ও বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।
মিজানুর রহমান ভূইয়ার সঞ্চালনায় কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ২৬ বছর। তবে প্রস্তুতি চেষ্টা চলেছে ১০ বছর। তার আগে স্বপ্ন দেখার ১০ বছর। গ্রামের মানুষ ও আমজনতাকে উচ্চশিক্ষা না দিলে সোনারবাংলা গড়া যাবে না। মানুষ হতে হবে দেশপ্রেমিক, সৎ ও যোগ্য।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি আমজনতার ইউনিভার্সিটি। এখানে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বিনামূল্যে পড়ানো হয়। নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চা হয়। আমরা চাই না এখানকার গ্রাজুয়েটরা শুধু প্রথাগত বিদ্যা শিখুক। চাই ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করে সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে, সামনে এগিয়ে যাবে এবং জাতি ও সমাজের জন্য অবদান রাখবে।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের শুধু তাত্ত্বিকতা শিখাচ্ছে না। দেশ সমাজ ও মানুষের জন্য কাজ করে অবদান রাখার মানসিক-শারীরিক-বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি অর্জন করবে। দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়টি টিচিং ইউনিভার্সিটি থেকে রিসার্চ ইউনিভার্সিটিতে রূপান্তরিত হবে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এইউবির ভিসি প্রফেসর ড. শাহজাহান খান। তিনি উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং তাকে এইউবির ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, `এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের গ্রাজুয়েটরা সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ব্রান্ডিং করছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বল্প আয়ের পরিবারের সন্তানেদেরও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতকরণে কাজ করছে। বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এইউবি অ্যালামনাই।’
স্বনামধন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ক্ষুদ্র পরিসরে যাত্রা শুরু করেছিল। আজ বহু শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত দেশের অন্যতম বৃহত্তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি উচ্চতর দক্ষজ্ঞান সম্পন্ন মানব সম্পদ তৈরীর এক অনন্য প্রতিষ্ঠান। স্বল্প খরচে মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে এই বিদ্যাপীঠের সাবেক শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনে দেশের আনাচে কানাচে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে সুনাম-দক্ষতার সাথে কাজ করছেন। পেশাগতভাবে দক্ষ ও নৈতিকতায় উন্নত গ্রাজুয়েটরা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
সু পরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন শিক্ষা প্রদান, মানসম্মত শিক্ষা প্রদান, দক্ষ ও উচ্চতর ডিগ্রী সম্পন্ন শিক্ষক দ্বারা শিক্ষা প্রদান, স্বল্প শিক্ষাখরচে আপামর জনগোষ্ঠিকে উচ্চ শিক্ষিত করে তোলা এশিয়ান ইউনিভার্সিটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও উন্নত মানবসম্পদ রুপে গড়ে তোলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ধরণের প্রতিযোগিতা, নিয়মিত সেমিনার, ওয়ার্কশপ, শিক্ষাসফরসহ সহশিক্ষা নানান কার্যক্রম। অনেক বিদেশি শিক্ষার্থীরাও বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে।
আশুলিয়া থানার টংগাবাড়ি এলাকার স্থায়ী ক্যাম্পাসটি ‘সবুজ ক্যাম্পাস’ হিসাবে পরিচিত; যেন এক টুকরো সবুজ স্বর্গ। বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত সবুজ গাছ-ঘাসে ঘেরা, ছায়া সুনিবিড়, শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে ১০ একরের বেশি জায়গার ওপর সুবিশাল এই ক্যাম্পাস। রয়েছে সুবিস্তৃত মাঠ, আছে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার আলাদা মাঠ, ফ্রি ওয়াই-ফাই, শিক্ষাবান্ধব ও শান্তিপূর্ণ মনোরম পরিবেশ, অফিসিয়াল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য হল রুম, ইনডোর ও আউটডোর গেমস এবং বিনোদনের ব্যবস্থা। এ ছাড়া অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে পরিবহন-সুবিধা, ক্যাফেটেরিয়া, গলফ কোর্স, মেয়েদের ও ছেলেদের হোস্টেল এবং অন্যান্য সুবিধা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে বিশ্বমানের সিলেবাস ও শিক্ষাকার্যক্রম, যোগ্য ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, উচ্চমানের কম্পিউটার ল্যাব, সিসিটিভিসহ ক্লাস মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা, নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার পাশাপাশি জীবনঘনিষ্ঠ সব বিষয়ে সাধারণ জ্ঞানের ব্যবস্থা। রয়েছে সুবিন্যস্ত শিক্ষার্থী কার্যক্রম। কোনো সেশনজট না থাকায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন শেষ করে সরাসরি কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারেন।
এইউবিতে ৫টি অনুষদের অধীনে মোট ১২টি বিভাগ রয়েছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলো হলো-বিবিএ, এমবিএ, সিএসই, ইংলিশ, ইকোনমিকস, গভর্নমেন্ট অ্যান্ড পলিটিকস, সোশ্যাল ওয়ার্ক, সোশোলোজি অ্যান্ড অ্যানথ্রোপলজি, ইসলামিক স্টাডিজ।
অল্প আয়ের মানুষেরও আন্তর্জাতিক মানের উন্নত শিক্ষার সুযোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষা ব্যয় কম রাখা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ছাত্রবৃত্তি ও বেতন মওকুফের ব্যবস্থা, এসএসসি ও এইচএসসি ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে শতভাগ পর্যন্ত বেতন ছাড়ে লেখাপড়ার সুবিধা, সেমিস্টার ফলাফলের ভিত্তিতে স্কলারশিপের ব্যবস্থা। টিউশন ফি কম থাকায় সাধারণ পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি খুবই শিক্ষাবান্ধব।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়টির চ্যান্সেলর। আর শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ক্যামব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল বায়োগ্রাফিক সেন্টার কর্তৃক ঘোষিত ম্যান অব দ্য ইয়ার ২০০১ ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক এর প্রতিষ্ঠাতা।