১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন বিল গেটস। সে হিসাবে ৬১ বছর পূর্ণ করে ৬২ তে পদার্পণ করেছেন তিনি। শুরুতে ক্ষুদ্র পরিসরে যাত্রা হলেও কর্মস্পৃহা আর সৃজনশীল উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রযুক্তিবিশ্বে গেটস তার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। বুদ্ধিদীপ্ত ও প্ররিশ্রমী বিল গেটস মাইক্রোসফটের কল্যাণে এখন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। বর্তমানে মাইক্রোসফটের চেয়ে মানবকল্যাণমূলক কাজকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি।
শৈশবের দিনগুলো
সাফল্য যাকে আষ্টেপৃষ্ঠে আবদ্ধ করে রাখে তেমনি একটি নাম বিল গেটস। অধ্যবসায় এবং তপস্যা মানুষকে কি এনে দিতে পারে তা বিল গেটস শিখিয়েছেন আজকের তরুণ প্রজন্মকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের সিয়াটল এলাকায় ১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর বাবা উইলিয়াম হেনরি গেটস সিনিয়র ও মা মেরি ম্যাক্সওয়েল গেটসের কোলে জন্ম নিয়েছিলেন বিল গেটস। বাবা তাদের বংশানুক্রম অনুসারে ছেলের নামও রাখলেন উইলিয়াম হেনরি গেটস। বিল গেটসের বাবা ছিলেন সে সময়কার প্রখ্যাত ল ইয়ার। ছোটবেলা থেকেই বিল গেটসের বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল বাবার মতো ছেলেও বড় হয়ে ল ইয়ার হবে। অনেক নাম কামাবে। ১৩ বছর বয়েসে বিল গেটসকে ভর্তি করা হয় বাড়ির কাছের লেকসাইড স্কুলে। যখন গেটস স্কুলে উন্নীত হন তখন স্কুলের বিভিন্ন বাতিল মালপত্র বিক্রয় করে কম্পিউটার সেকশনের ছাত্রদের জন্য কয়েকটি কম্পিউটার কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এর ফলে গেটস তার কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের ওপর পারদর্শিতা দেখানোর একটি সুযোগ পান।
কম্পিউটার নিয়ে কাজ করার সময় বিল গেটসের একটি জিনিস কখনোই মাথায় ঢুকতো না যে কম্পিউটারে কিভাবে সফটওয়্যারগুলো এত সহজে ইন্সটল হয়ে যায় বা কম্পিউটার সফটওয়্যারগুলোর প্রোগ্রামিং কোড কিভাবে এত সহজে পড়তে পারে। এরপরে বিল গেটসের আবিষ্কৃত ডেমো অপারেটিং সিস্টেম নীতিবিরুদ্ধ হওয়ায় এবং কাউকে কিছু না জানিয়ে এটিকে কম্পিউটারে ব্যবহার করায় গেটস ও তার তিন বন্ধু পল অ্যালেন, রিক ওয়েইল্যান্ড এবং কেন্ট ইভানসকে স্কুল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। বিল গেটস তার লেকসাইড স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন ১৯৭৩ সালে। তবে তার মন ওই কম্পিউটারেই পড়ে থাকতো।
উত্থান ও প্রসার
ডেস্কটপ কম্পিউটারকে কেন্দ্র করে আশি ও নব্বইয়ের দশকে মাইক্রোসফটের উত্থান ও প্রসার। বিগত এক দশকে বৈশ্বিক কম্পিউটার প্রযুক্তি বাজারের চিত্র আগের তুলনায় যথেষ্ট বদলে গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের কল্যাণে প্রযুক্তি বাজারে এখন স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বর্তমান বাজারের গুরুত্ব অনুযায়ী, সম্প্রতি ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কম্পিউটারের পাশাপাশি স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের বাজারে ব্যবসা প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে মাইক্রোসফট।
জনপ্রিয় উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমকে এরই মধ্যে ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কম্পিউটারের পাশাপাশি মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছে। বর্তমান প্রযুক্তি বিশ্বের প্রভাবশালী সফটওয়্যার নির্মাতা শুরুতেই খুব একটা সাফল্য পাননি। কিন্তু গেটসের ব্যক্তিগত চেষ্টা আর সৃজনশীল উদ্ভাবনের মাধ্যমে কয়েক বছরের মধ্যেই কম্পিউটার প্রযুক্তি খাতে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে ৬১ বছর বয়সী গেটসের মোট সম্পদের পরিমাণ আট হাজার ১৯০ কোটি ডলার। গেটস ও পল অ্যালেন ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় গেটস ও অ্যালেনের বয়স ছিল যথাক্রমে ১৯ ও ২২ বছর।
বিল গেটস মাইক্রোসফটের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বেশ আগেই। ২০১৪ সালে স্টিভ বলমার মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহীর (সিইও) পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ভারতীয় বংশোদ্ভূত সত্য নাদেলার হাতে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে সিইওর দায়িত্ব দেয়া হয়।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন
বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তি তিনি, যার মোট সম্পদের পরিমাণ আট হাজার ১৮০ কোটি ডলার। কিন্তু নিজ চেষ্টায় অর্জিত এ বিপুল সম্পদ সন্তানদের জন্য রেখে যাবেন না বিল গেটস ও তার স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস। গেটস দম্পতি বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যক্তি। ব্যক্তিগত সম্পদ মূলত এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই ব্যয় করা হয়। ২০১২ সালে বৈশ্বিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ১৯০ কোটি ডলার দান করেন এ দম্পতি। বিশ্বব্যাপী মানুষকে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করাসহ জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরো জোরদারে দাতব্য সংস্থা হিসেবে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের পরিচিতি। গেটস পরিবার গত কয়েক বছরে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার দাতব্য কাজে ব্যয় করেছেন।
গেটস দম্পতির মতে, সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বিপুল ধন-সম্পদ রেখে যাওয়ার কোনো অর্থ হয় না। এটি তাদের জন্য উপকারী নাও হতে পারে। ধনসম্পদ নিজের মতো করে পথ চলতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বর্তমানে গেটস দম্পতির বড় মেয়ে জেনিফার ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছেলে রোরি ও ছোট মেয়ে ফোয়েবি এখন স্কুলে পড়ছে। বাবা-মায়ের সাথে তারা সিয়াটলে থাকবে। গেটসের সম্পদ দাতব্যকাজে দানের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে তাদের তিন সন্তান। বাবা-মায়ের এমন মহৎ সিদ্ধান্তের কারণে তারা গর্বিত। বিশ্বের অসংখ্য মানুষকে চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করতে সম্পদ দানের পক্ষেই তারা।
বিল গেটসের আফসোস!
বিল গেটস প্রচুর অর্থকড়ি থাকলেই যে সবকিছু করা যায়, তা ঠিক নয়। অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক হতে পারেন মাইক্রোসফটের সাবেক প্রধান নির্বাহী বিল গেটস, এরপরও একটি বিষয়ে তার আফসোস থেকেই গেছে।
এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, ‘আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে কোনো বিষয়ে আমার আক্ষেপ বা দুঃখবোধ আছে কি না বা আমি করতে পারিনি এমন কোনো বিষয় আমাকে কষ্ট দেয় কি না, তবে আমি বলব যে আরো বেশি বিদেশী ভাষা শিখতে না পারার আক্ষেপ আমাকে বেশি পোড়ায়।
আপনিও লিখুন
প্রিয় পাঠক, আপনিও লিখতে পারেন ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সে। শিক্ষা, ক্যারিয়ার বা পেশা সম্পর্কে যে কোনো লেখা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন। পাঠাতে পারেন অনুবাদ লেখাও। তবে সেক্ষেত্রে মূল উৎসটি অবশ্যই উল্লেখ করুন লেখার শেষে। লেখা পাঠাতে পারেন ইমেইলে অথবা ফেসবুক ইনবক্সে। ইমেইল : [email protected]