১০ কোটিপতি যারা প্রথম জীবনে গরিব ছিলেন

ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : গরিব থেকে কোটিপতি হওয়াটা অনেকের কাছেই দুঃস্বপ্নের। কেউ কেউ হয়তো হেসেই উড়িয়ে দেবেন। তবে প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে তা করে দেখিয়েছেন যারা; তাদের মধ্যে থেকে ১০ জনের গল্প সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সের পাঠকদের জন্য।

১৯ বছরেই শতকোটি টাকার মালিক অক্ষয়
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও গণিত নিয়ে পড়াশোনার করা সুযোগ পেয়েছিলেন উত্তর লন্ডনের ভারতীয় বংশোদ্ভূত অক্ষয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে নেমে পড়েন ব্যবসায়। নামমাত্র মূল্যের বিনিময়ে সম্পত্তি কেনাবেচায় মানুষজনকে সাহায্য করতে অক্ষয় তৈরি করেন ‘ডোরস্টেপস ডট কো ডট ইউকে’ নামে ওয়েবসাইট। শুরুতে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা কম থাকলেও অল্প সময়ের মধ্যে বাড়তে থাকে গ্রহীতা। মাত্র ১৬ মাসের মধ্যেই তার সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় একশ কোটিরও বেশি। বর্তমানে ব্রিটেনের বৃহত্তম সংস্থাগুলোর মধ্যে ১৮ নম্বরে রয়েছে তার কোম্পানি। অক্ষয়ের ব্যবসার পদ্ধতি খানিকটা আলাদা। তার ব্যবসায় কর্মী হিসেবে রয়েছেন মধ্যবয়সী গৃহিনীরা। তারাই ক্রেতাদের ঘর-বাড়ি দেখাতে নিয়ে যান। এই মুহূর্তে তার সংস্থায় কাজ করেন ১২ জন কর্মী।

হকার থেকে শীর্ষ ধনী ওয়ারেন বাফেট
ওয়ারেন বাফেটের জন্ম আমেরিকার নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের ওমাহাতে ১৯৩০ সালে। কিশোর বাফেট টাকা আয়ের জন্য বাড়ি বাড়ি চুইংগাম, কোল্ড ড্রিংকস এমনকি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনও বিক্রি শুরু করেন। আরও টাকা আয়ের জন্য দাদার মুদি দোকানে কাজ শুরু করেন তিনি। একদিকে দোকানে কাজ অন্যদিকে পত্রিকার হকারি, গলফ বল বিক্রি। শৈশবেই শেয়ার বাজার বিনিয়োগে আগ্রহ জন্মায় বাফেটের। দশ বছর বয়সে বাফেট নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ দেখার জন্য নিউইয়র্ক শহরে আসেন। তার জীবনের প্রথম তিনটি শেয়ার কেনেন ১১ বছর বয়সে। হাইস্কুলে থাকাকালে তিনি তার বাবার কিছু সম্পত্তি বিনিয়োগ করেন এবং একটি খামার কেনেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে তিনি আয়কর রিটার্ন জমা দেন। সেখানে তিনি নিজেকে সংবাদপত্র বিলিকারী হিসেবে পরিচয় দেন। ১৯৫১ থেকে ’৫৪ পর্যন্ত বাফেট-ফক অ্যান্ড কোম্পানিতে ইনভেস্টম্যান সেলসম্যান হিসেবে চাকরি করেন। ১৯৬২ সালে বাফেট মিলিয়নিয়ারে পরিণত হন। ফোর্বসের হিসেবে ২০০৮ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার। ওয়ারেন বাফেট বর্তমানে ৬৩টি কোম্পানির মালিক। এ পর্যন্ত ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার দান করেছেন বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায়। তারপরও তিনি ৪ হাজার কোটি ডলারের মালিক।

২০ হাজার পুঁজি থেকে কোটিপতি তনুজা রহমান
শখের বসে ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন গৃহবধূ তনুজা রহমান মায়া। নিরলস প্রচেষ্টা আর অক্লান্ত পরিশ্রমে তিনি এখন দেশের একজন শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তা। ৩ হাজারের অধিক নারী-পুরুষকে হস্তশিল্প পণ্য তৈরি করে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ করে দিয়েছেন। তারা কাপড়ে সুই-সুতা দিয়ে নকশি কাঁথা, নকশি চাদর, হাতের কাজের শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টুপিসহ ৪০ ধরনের পণ্য তৈরি করছে। প্রতি মাসে এসব শ্রমিকের বেতন দেয়া হয় ১২ লাখ টাকার ওপর। তনুজার হ্যান্ডিক্র্যাফট ব্যবসায় এখন বিনিয়োগ তিন কোটি টাকা। উচ্চমাধ্যমিক পাস তনুজার বিয়ে হয় কিশোরী বয়সে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায়। ১৯৯৮ সালে তার স্বামী মারা যান। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জননী তনুজা। বড় ছেলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরি করছে। মেয়ে ক্যান্টনমেন্ট কলেজে বিবিএ পড়ছে। উদ্যোক্তা হিসেবে তনুজার যাত্রা শুরু ১৯৯৬ সালে। তখন ঘরে বসেই সেলাইয়ের কাজ করতেন। ১৯৯৬ সালে হ্যান্ডিক্র্যাফটের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। যশোর শহরে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে, চাহিদা বাড়তে থাকে তার তৈরি পণ্যের। দারিদ্র্যবিমোচন ও কর্মসংস্থানে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে তিনি পেয়েছেন জাতীয় এসএমই নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার। ২০১৩ সালে পেয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের কোয়ালিটি অ্যাঙ্গেলিন্ট অ্যাওয়ার্ড।

পিয়ন থেকে কোটিপতি অ্যান্ড্রু কার্নেগি
অত্যন্ত গরিব ঘরের সন্তান ছিলেন আমেরিকার একসময়ের অন্যতম ধনী ব্যক্তি অ্যান্ড্রু কার্নেগি। ১৮৩৫ সালের ২৫ নভেম্বর স্কটল্যান্ডের এক অখ্যাত গ্রামের এক নগণ্য পরিবারে অ্যান্ড্রু কার্নেগির জন্ম হয়। কার্নেগির বয়স তখন মাত্র ১৩ বছর। পোশাক-আশাক একেবারেই ভালো ছিল না। একে তো নোংরা তার ওপর বিভিন্ন জায়গায় ছেঁড়া ছিল। এ অবস্থাতেই একদিন খেলার জন্য একটি পাবলিক পার্কে ঢুকতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় দারোয়ান তাকে পার্কে প্রবেশ করতে দেননি। তখন বালক কার্নেগি দারোয়ানকে বলেন, এই পার্ক কিনেই তিনি ভেতরে ঢুকবেন। পরে ঠিকই তিনি ওই পার্ক কিনেই ভেতরে ঢোকেন। একটি সুতার কলে মাসে সাড়ে বার টাকা বেতনে মজুর হিসেবে যোগ দেন কার্নেগি। এর প্রায় এক বছর পর টেলিগ্রাফ অফিসে পিয়নের কাজে নিয়োগ পান। পিয়নের কাজ করতে করতেই নিজের মেধা দিয়ে টেলিগ্রাফের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন কার্নেগি। তারপর পিয়নের চাকরি ছেড়ে যোগ দেন স্থানীয় রেলস্টেশনের টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে। চাকরির পাশাপাশি তিনি রেলগাড়ি ও খনির তেলের ব্যবসা শুরু করেন। খুব অল্পদিনের মধ্যেই এই ব্যবসা থেকে অনেক টাকা লাভ হতে থাকে। লাভের টাকা আরও নতুন নতুন ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে থাকেন কার্নেগি।

মায়ের সঙ্গে রাগ করে ঘরছাড়া জেনিফার লোপেজ
অভিনেত্রী, গায়িকা জেনিফার লোপেজের গল্পটা একটু অন্যরকম। লেখাপড়া আর ভবিষ্যৎ নিয়ে মায়ের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া হওয়ায় রেগেমেগে ঘর ছাড়েন জেনিফার। কিন্তু চলবেন কী করে? ড্যান্স স্টুডিওতে কাজ করার সুযোগ এলো। লুফে নিলেন সেই সুযোগ। হলিউডের এই আবেদনময়ী তারকার আয় এখন ১১০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

আশ্রয় শিবিরে থেকেছেন হেলি বেরি
২১ বছর বয়সে নিউইয়র্কে জীবনযুদ্ধ শুরুর সময় গৃহহীনদের আশ্রয় শিবিরেই থাকতে হয়েছিল মারিয়া হেলি বেরিকে। হলিউড এ সুপারস্টার ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রাসাদোপম অট্টালিকায় বাস করেন। ১৯৯১ সালে ‘স্পাইক লি’ ছবির মাধ্যমে তারকারাজ্যে প্রবেশের পর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। জেমস বন্ড সিরিজে অভিনয় করেছেন। অস্কার জিতেছেন। একসময়ের গৃহহীন হেলি বেরির আয় ইতিমধ্যে ৭০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

বাসের সিটে রাত কাটিয়েছেন স্ট্যালোন
সিলভেস্টার স্ট্যালোন একসময় বাসের সিটে রাত কাটিয়েছেন। নিউইয়র্কে তখন তার থাকার জায়গা নেই। বাসের সিটে শুয়ে শুয়েই পত্রিকার বিজ্ঞাপন পড়লেন। ছবিতে অভিনয়ে আগ্রহীদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। একদিন কাজ করলে ১০০ ডলার পাওয়া যাবে। স্ট্যালোন পরের দিনই চলে যান অভিনয় করতে। বাকিটা ইতিহাস। ‘র্যাম্বো’ ছবির স্ট্যালোন এখন ৩৪০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পত্তির মালিক।

রাস্তায় ঘুমাতেন ভ্যান ডাম
‘ব্লাডস্পোর্ট’, ‘ইউনিভারসাল সোলজার’ এবং ‘সাডেন ডেথ’-এর মতো অ্যাকশন ছবির জনপ্রিয় নায়ক ভ্যান ডাম জীবিকার সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেস শহরে এসে প্রথমদিকে রাস্তায় ঘুমাতে বাধ্য হয়েছেন। সে সময় খাবারও জুটত না তার প্রতিদিন। ‘মি. বেলজিয়াম’ খেতাব জেতা সাবেক এ বডি বিল্ডার এখন ৩০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পদের মালিক।

রেলস্টেশনের টয়লেটে ঘুমায়েছেন ক্রিস গার্ডনার
ক্রিস গার্ডনার একসময় ছিলেন নিঃস্ব, গৃহহীন। ফুটপাত ও রেলস্টেশনের টয়লেটে রাত কাটিয়েছেন। নিজ চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, শেয়ার ব্যবসা করে কামিয়েছেন মিলিয়ন ডলার। একসময় ব্যবসা ছেড়ে হয়েছেন পুরোদস্তুর অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তা ও লেখক। সর্বাধিক বিক্রিত তালিকায় উঠেছে তার বই, জীবন নিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াওকি শহরে তার জন্ম। থাকতেন মা আর সৎ বাবার সাথে। পড়াশোনা শেষে চার বছর মার্কিন নেভিতে কাজ করেন গার্ডনার। ১৯৭৪ সালে চাকরি ছেড়ে সানফ্রান্সিসকো চলে আসেন। সেখানে চিকিৎসা উপকরণ বিক্রির ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে লোকসান দিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। আশির দশকের গোড়ার দিকে তার বয়স তখন ২৭ বছর। চাকরি নেই, পকেটে টাকা নেই, নেই কোনো থাকার জায়গা। বাধ্য হয়ে ছেলেকে নিয়ে বসবাসের জন্য শহরের ফুটপাতকে বেছে নেন গৃহহীন গার্ডনার। ৬২ বছর বয়সে তার সম্পদের পরিমাণ ৬ কোটি ডলার। মোটিভেশনাল বক্তা হিসেবে বিশ্বের ৫০টি দেশ ঘুরেছেন। বক্তব্য দিয়েছেন হাজারো আয়োজনে। বছরে ২০০ দিন বরাদ্দ রেখেছেন এ কাজে।

পিকআপ ভ্যানে রাত কাটিয়েছেন উইলিয়াম শ্যাটনার
‘স্টারট্রেক’ ছবিতে ক্যাপ্টেন কার্ক চরিত্রে অভিনয় করে প্রায় অমরত্ব পেয়ে যাওয়া উইলিয়াম শ্যাটনারকে একসময় পিকআপ ভ্যানে রাত কাটাতে হয়েছে। ১৯৬৯ সালে স্টারট্রেকের শুটিং বন্ধ করা হয়। স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়িও হয় তখন। দুঃসময় বেশি দিন থাকেনি। কিছুদিন পর আবার স্টারট্রেকের শুটিং শুরু হয়। শুটিং শেষে প্রচার শুরুর পরই রাতারাতি তারকা হয়ে যান শ্যাটনার। এখন তার মোট আয়ের পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন ডলারের মতো।

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top