সিলিকন ভ্যালি। মার্কিন মুলুকের এই তল্লাটে পা রাখলে অর্থের হাতছানি থেকে মাথা ঘোরানো মুশকিল। কর্মস্থলের নাম যদি গুগুল হয় তাহলে কথাই নেই। ঈর্ষণীয় বেতন, নিশ্চিত চাকরি। সুযোগের শেষ নেই। এসবের মায়া কাটিয়ে নিজে কিছু করার লক্ষ্যে ভারতে ফিরে আসেন গুগলের কর্মী মুনাফ কাপাডিয়া৷ মুম্বইয়ে খুলে ফেলেন শিঙারার দোকান। এক্ষেত্রে তার পুঁজি ছিল মায়ের পরামর্শ। মাত্র ২ বছরে মুনাফের ‘দ্য বোহরি কিচেন’ মুম্বইয়ের অন্যতম আলোচিত খাবারের ঠিকানা। বছরে শিঙারা বেচে মুনাফের মুনাফা প্রায় ৫০ লাখ রুপি।
ছেলে এমবিএ। গুগুলে মোটা মাইনের চাকরি করেন। মা নাসিফা পায়ের ওপর পা তুলে কাটিয়ে দিতে পারতেন। পেশায় রাঁধুনি নাসিফা টিভিতে বিভিন্ন রকম রান্না দেখতেন। তার প্রয়োগ করতেন বাড়িতে। গুগলে চাকরির সময় মায়ের এই দুর্বলতা আরো বেশি করে টের পান মুনাফ কাপাডিয়া। কয়েক বছর চাকরির পর মুনাফের মনে হতে থাকে ১০টা-৫টার জীবন তার জন্য নয়। বরং তিনি এমন কিছু করবেন, যা তাকে গোটা বছর ধরে ভালো থাকার রসদ দেবে। মুম্বই ফিরে মায়ের নিজস্ব ফর্মুলার শিঙারা দিয়ে দোকান খুলে ফেলেন। মায়ের পরামর্শে শিঙারার মধ্যে ছিল ছাগলের গোশতের পুর। কয়েকজন পরিচিতকে পরীক্ষামূলকভাবে শিঙারা খাওয়ান মুনাফ। তারপরের ঘটনা ইতিহাস। মুম্বইবাসী এখন মুনাফের ‘দ্য বোহরি কিচেন’-এর সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়াতেও বিরক্ত হয় না।
খাদ্যরসিকদের আগ্রহ দেখে এই উদ্যোগপতি মুম্বইয়ের একাধিক জায়গায় দোকান খুলেছেন। তার বোহরি কিচেনের শিঙারার নিয়মিত খদ্দের শহরের সেলব্রেটি এবং কয়েকটি পাঁচতারা হোটেল। শিঙারা দিয়ে শুরু। মুনাফের রেস্তরাঁর চেনে এখন নার্গিস কাবাব, ডাব্ব ঘোস্টের মতো সাত ধরনের পদ রয়েছে। প্রত্যেকটার দারুণ কদর। এসবের সুবাদে বছর অন্তত ৫০ লাখ রুপির শিঙারা বিক্রি হয়। মুনাফের টার্গেট লেনদেন পাঁচ কোটি রুপিতে নিয়ে যাওয়ার। এজন্য মুম্বই লাগোয়া এলাকাগুলি তার নজরে। গুগলের প্রাক্তন কর্মী নন, নিজেকে শিঙাড়ার সেলসম্যান বলতে মুনাফ বেশি পছন্দ করেন।
মুনাফের এই উত্থান ফোর্বস ম্যাগাজিনের চোখে পড়েছে। প্রখ্যাত এই মার্কিন প্রকাশনা সংস্থা দুনিয়ার সেরা ৩০টি স্টার্ট আপ হিসেবে মুনাফের ‘দ্য বোহরি কিচেন’-কে বেছেছে। শুধু শিঙারার স্বাদ নয়, এযুগের চাহিদা অনুযায়ী নতুন ধরনের খাবারের খোঁজ দেয়ার জন্য মিলিছে এই স্বীকৃতি।