মানবসভ্যতার বিকাশে উদ্ভাবনী ভূমিকা রাখতে সহায়তা করেছে ইলেকট্রিসিটি। সভ্যতার বিবর্তনে বিশেষ প্রভাব ছিল এই আবিষ্কারের। নতুন এই উদ্ভাবন মানবজীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। শিল্পপ্রধান উন্নয়নশীল দেশের দিকে ক্রমাগত অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে এদেশে অনেক আগেই। শিল্পায়ন নির্ভর এ সময়ে অন্যতম সম্ভাবনাময় পেশা হলো ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং। তাই অন্যান্য বিষয়ের মতো ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টির চাহিদাও বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে ব্যাপক। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই প্রথম সারির দিকে রয়েছে ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়।
আজকের আলোচনায় আমরা জানবো- ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং কী? কী পড়ানো হয়, বাংলাদেশের কোথায় পড়ানো হয় এবং বিশ্বে এ বিষয়ের চাহিদা ও ক্যারিয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে।
ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং কী?
একবিংশ শতাব্দীতে এসে ইলেকট্রিসিটি ও ইলেকট্রনিক্স ছাড়া আমাদের জীবনকে কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব। আর এই দুটি বিষয় নিয়ে প্রকৌশলবিদ্যার যে শাখায় পাঠদান করা হয় সেটিই ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং; সংক্ষেপে ইইই (EEE)। এটি বেশি পরিচিত ‘ট্রিপল ই’ নামে।
ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বা তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল মূলত ইলেক্ট্রন নিয়ে আলোচনা করে। ইইই আসলে ছোট পরিসরের কোনো সাবজেক্ট না। এর পরিধি ব্যাপক, ক্ষেত্র অসীম। EEE কে বলা হয় “Soul of Engineering” বা “প্রকৌশলবিদ্যার আত্মা”।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে যখন টেলিগ্রাফি ও বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে তখন থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং -এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই সেক্টরে ইলেকট্রিসিটির পাওয়ার হাউস ডিজাইন ও তার রক্ষণবেক্ষণ, ইলেকট্রনিক্স সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়, সার্কিট ডিজাইন ও অ্যাপ্লিকেশন, টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং -এর আলোচ্য বিষয়
ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত বড় ধরনের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বা যন্ত্রপাতি; যেমন- বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চালন, বৈজ্ঞানিক মোটর নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি সম্পর্কিত। অপরদিকে ক্ষুদ্রাকার বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন কম্পিউটার, সমন্বিত বর্তনী ইত্যাদি সংক্রান্ত কার্যাবলী ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং -এর আলোচ্য বিষয়।
বর্তমানে তড়িৎ প্রকৌশলের ব্যাপ্তি বিদ্যুৎশক্তি, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক্স, টেলিযোগাযোগসহ আরও কিছু উপশাখাজুড়ে বিস্তৃত। যখন শুধু তড়িৎ প্রকৌশল বলা হয় তখন মূলত যে শাখা বড় আকারের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বা যন্ত্রপাতি; যেমন- বিদ্যুৎশক্তি সঞ্চালন, বৈদ্যুতিক মোটর নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করে তাকে বোঝানো হয়।
অন্যদিকে ক্ষুদ্র আকারের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন কম্পিউটার, সমন্বিত বর্তনী ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশলের অন্তর্গত। অন্য কথায় তড়িৎ প্রকৌশলীগণ সাধারণত শক্তি সঞ্চালনের জন্য বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাকে কাজে লাগান আর ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল প্রকৌশলীগণ তথ্য আদানপ্রদানের কাজে বিদ্যুতশক্তিকে ব্যবহার করেন।
ইইই সাবজেক্টে ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ইলেক্ট্রনিক দু’টোই আছে। কিন্তু ECE/ETE এগুলোতে কমিউনিকেশন/টেলিকমিউনিকেশন এর সাথে ইলেক্ট্রনিকটা থাকে, ইলেক্ট্রিক্যাল নয়। যদিও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পড়াশুনা কমনই। পরে আলাদা হয়ে যায়। পদার্থবিজ্ঞানের যাবতীয় থিওরেটিক্যালের সর্বোচ্চ অ্যাপ্লাই হয় ইইই ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে। যে কারণে “অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স”, মূলৎ ইইই-এর ইকুইভ্যালেন্ট। ইইই এর সাবডিসিপ্লিনগুলো মূলত ৪ টি-
1. Power
2. Electronics
3. Telecommunication
4. Computers Power
এছাড়াও EEE পড়ালেখা যেসব বিষয় নিয়ে বিস্তৃত সেগুলো হলো-
1. Electronics
2. Software
3. Hardware
4. Signal Processing
5. Communications
6. Computer Engineering
7. Power Electronics
8. Power Systems Engineering (including renewable energy)
9. Nanotechnology
10. Biomedical Imaging
11. Embedded Systems
12. Control
মৌলিক তত্ত্বের দিকটি বিবেচনা করলে বলা যায়, তড়িৎ প্রকৌশলে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশলে অর্ধপরিবাহী এবং অন্তরকের মধ্য দিয়ে প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
ইইই গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানভিত্তিক। যদি আপনি গণিত অথবা পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী হন তবে নিঃসন্দেহে ইইই সাব্জেক্টটি আপনার জন্য ইন্টারেস্টিং হবে। ইইই পড়তে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মেধার পাশাপাশি যে জিনিসগুলো সবচেয়ে বেশি থাকতে হয়; তা হলো- ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য এবং লেগে থাকার ক্ষমতা এবং জানার স্পৃহা। কারণ একটা বিষয়ের প্রতি যদি আপনার আগ্রহই না থাকে তবে আপনি কখনোই ওই বিষয়কে কেন্দ্র করে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন না।
বাংলাদেশের কোথায় ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়?
বাংলাদেশের প্রায় সব পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েই বিএসসি অনার্স কোর্সে ইইই পড়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও ডিপ্লোমা করে পরবর্তীতে বিএসসি করার সুযোগ রয়েছে। যদিও ডিপ্লোমা ক্ষেত্রে ইইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স বিভাগ আলাদা হিসেবে পড়ানো হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিন দিন এই বিষয়ের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে অন্যান্য প্রকৌশল বিষয়ের মতো ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চাহিদা প্রথম সারির দিকে।
সাধারণত, চারবছর মেয়াদি ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। ভর্তি পরীক্ষায় নির্বাচিত হলে এবং মেধাতালিকায় নাম এলে পছন্দ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইইই সাব্জেক্ট নিয়ে পড়া যায়।
তবে, ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন পূর্বশর্ত থাকে। যেমন, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এসএসসি এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় নির্ধারিত জিপিএ-সহ গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে নির্দিষ্ট জিপিএ চেয়ে থাকে। অথবা কোথাও মেধাতালিকা প্রথম সারির দিকে যারা থাকে তারা নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসারে এই বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করতে পারেন।এছাড়াও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইইই নিয়ে পড়া যায়। তবে সেটি ব্যয়বহুল হতে পারে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ ভিত্তিতে স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগও রয়েছে। চারবছর অনার্স শেষ করে মাস্টার্স করারও সুযোগ রয়েছে এই বিষয়ে। সিএসই অথবা অন্যান্য প্রকৌশল বিভাগ থেকে অনার্স করেও ইইই-তে মাস্টার্স তথা এমএসসি করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অধিকাংশই এমবিএ কোর্সের দিকে আগ্রহী হয়।
বাংলাদেশে ডিপ্লোমা সিস্টেমেও ইইই নিয়ে পড়া যায়। সেক্ষেত্রে এসএসসির পর স্বীকৃত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে অধ্যয়ন করা যায়। ৪ বছরের কোর্স শেষে ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিএসসি করা যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট চাহিদা ও মূল্যায়ন কম।
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইইই পড়ার সুযোগ রয়েছে। এগুলো হলো :
১. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
২. রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)
৩. চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)
৪. খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)
৫. ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট)
৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৭. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৮. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৯. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
১০. খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
১১. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
১২. বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
১৩. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৪. শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৫. হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৬. যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৭. পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৮. বঙ্গবন্ধু শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
এছাড়াও বেশকিছু প্রাইভেট তথা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইইই পড়ার সুযোগ রয়েছে। সেগুলো হলো :
১. ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
২. ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
৩. স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি
৪. ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
৫. ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক
৬. ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
৭. গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ
৮. ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
৯. আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ
১০. ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ
১১. নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
১২. ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি
১৩. ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ
১৪. চট্টগ্রাম ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি
১৫. প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম
১৬. পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
১৭. নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ
১৮. ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
১৯. ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ
২০. ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ
২১. মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সিলেট
২২. বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি
২৩. প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি
২৪. ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
২৫. ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
২৬. ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সাইন্স
২৭. সিটি ইউনিভার্সিটি
২৮. সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি
২৯. লিডিং ইউনিভার্সিটি
৩০. প্রাইম ইইউনিভার্সিটি
৩১. গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
৩২. সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
৩৩. মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
৩৪. বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি
৩৫. পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
৩৬. বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
৩৭. কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় (বাংলাদেশ)
৩৮. গণ বিশ্ববিদ্যালয়
৩৯. সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়
৪০. শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়,ময়মনসিংহ
৪১. বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা
৪২. আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
৪৩. আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৪৪. আন্তর্জাতিক কৃষি ব্যবসায় এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৪৫. রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়
৪৬. খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়
৪৭. ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়
৪৮. জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৪৯. বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
৫০. হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রায় ১৫টির বেশি পাবলিক এবং ৫০টির মতো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ রয়েছে। যা সত্যিকার অর্থেই ব্যাপক। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ফলে দিনদিন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের ও চাহিদা ও সুযোগ বাড়ছে।
বাইরে পড়ার সুযোগ এবং চাহিদা
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও অগ্রগতির ফলে যতটা প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে, ততটাই ইলেক্ট্রিকের চাহিদা ও উৎপাদন এবং উদ্ভাবন ঘটেছে। ফলে বিশ্ব বর্তমানে ইলেকট্রনিক্স ব্যাতিত অচল। আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ প্রায় সকল উন্নত দেশে ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে বিশাল চাকরিক্ষেত্র থাকায় ইইই বিষয়ের গুরুত্ব অনেক।
প্রায় সব উন্নত দেশে ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ রয়েছে। বিখ্যাত কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হলো-
১. ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো, কানাডা
২. ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র
৩. ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, যুক্তরাষ্ট্র
৪. ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুর
৫. হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
৬. স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
৭. ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, যুক্তরাষ্ট্র
৮. ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডন, যুক্তরাজ্য
৯. ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন , লন্ডন, যুক্তরাজ্য
১০. ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ, এডিনবার্গ, যুক্তরাজ্য
১১. ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটসল, ব্রিটসল শহর, যুক্তরাজ্য
১২. ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার, ম্যানচেস্টার, যুক্তরাজ্য
এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের ভালো ও মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইইই পড়ানো হয়। দিনদিন এই ক্ষেত্রে সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী এই বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছে।
ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
প্রকৌশলিক উদ্ভাবন সবচেয়ে চমকপ্রদভাবে দেখানোর উপযুক্ত জায়গা হলো ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং। ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি পেশা যা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা পণ্য, পরিষেবাদি এবং ইনফরমেশন সিস্টেমগুলি ডিজাইন, নির্মাণে ভূমিকা পালন করে।
ইইই ইঞ্জিনিয়াররা প্রধানত যেসব সেক্টরে কাজ করতে পারে সেগুলো হলো-
১. ডিজাইন (Design)
২. কনসাল্টিং (Consulting)
৩. গবেষণা ও উন্নয়ন (Research and development)
৪. শিক্ষকতা (Teaching)
৫. ব্যবস্থাপনা (Management)
৬. কম্পিউটার সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট (Computer software development)
৭. উদ্যোক্তা (Entrepreneur)
এবং যেসব পদে কাজ করার সুযোগ পান সেগুলো হলো-
১. ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার (Design Engineer)
২. প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার (Project Engineer)
৩. ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ (Engineering Specialist)
৪. চিফ ইঞ্জিনিয়ার (Chief Engineer)
৫. কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ার (Quality Control Engineer)
৬. সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার (Software Engineer)
৭. ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (Development Engineer)
৮. রিলায়েবিলিটি ইঞ্জিনিয়ার (Reliability Engineer)
৯. রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ার (Research Engineer)
১০. সিস্টেম ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার (Systems Design Engineer)
১১. ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ার (Field Engineer)
১২. টেস্ট ইঞ্জিনিয়ার (Test Engineer)
১৩. সেলস ইঞ্জিনিয়ার (Sales Engineer)
দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সেক্টরে ইইই ইঞ্জিনিয়াররা কৃতিত্বের সাথে কাজ করছে। চাকরির বাজারে বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে ইইই ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা রয়েছে। দেশে পাওয়ার সেক্টর বিকশিত হচ্ছে। সেখানে এ বিষয়ের গ্রাজুয়েটদের কাজের যথেষ্ট চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। দেশে ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাচ্ছে।
নবায়নযোগ্য এনার্জি সেক্টরসহ বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ বিষয়ের ডিগ্রিধারীদের চাকরি হচ্ছে। আইসি সফটওয়্যার নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইইই ইঞ্জিনিয়ারদের সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া কমিউনিকেশন সেক্টর বিশেষ করে টেলিকম কোম্পানিগুলোতে এ বিষয়ের গ্রাজুয়েটদের চাহিদা রয়েছে।
বিটিটিবি, বিটিআরসিসহ টেলিকম সেক্টরে সুযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র গ্রামীন ফোনেই বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার প্রকৌশলী রয়েছেন, যাদের অধিকাংশ ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ডের।
ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের আয়ের অন্যতম একটি বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠছে আউটসোর্সিং। পাওয়ার সার্কিটসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে ঘরে বসেই ভালো আয় করছেন আউটসোর্সাররা।
আণবিক শক্তি কমিশন, জাতীয় বিদ্যুৎ বোর্ডসহ রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন পাওয়ার জেনারেটর কোম্পানিতেও চাকরির সুযোগ হচ্ছে। বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন।এছাড়াও দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইইই বিষয়ের শিক্ষকতা করারও প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি বিষয় যার চাহিদা কখনো কমবে না, দিনদিন বৃদ্ধি পাবে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষেত্রেও এই সেক্টরের ব্যাপক অংশগ্রহণ রয়েছে। ফলে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ইইই একটি অভিজাত বিষয়। এর প্রাধান্য প্রথম সারিতে থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা ঝুকে পড়ছে এই বিষয়ে। যার ফলে বাংলাদেশ প্রযুক্তির সাথে সাথে উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
আমার খুব ইচ্ছা ছিল আমি ইলেকট্টিক্যাল নিয়ে ডিপ্লোমা পড়বো।কিন্তু আমার পয়েন্ট কম হওয়ায় সরকারিতে পড়তে পারছি না, তাছাড়া বেসরকারিতে পড়তে গেলে অনেক টাকার ধরকার। তাই আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।পয়েন্ট জিপিএ ৩.৭২ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে।তাই আর কি করবো কলেজে আবেদন করলাম।