আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে শহর-গ্রাম সবখানে। ফলে পরিবর্তন এসেছে আমাদের সামাজিক ও দৈনন্দিন জীবনে। প্রতিদিনের খাবারেও পড়েছে এর প্রভাব। সময়ের স্বল্পতা এবং পুষ্টির দিক বিবেচনায় উদ্ভব হয়েছে ফাস্টফুড। গত বছর গুলোতে এ ফাস্টফুডের অনেক প্রসার ঘটেছে। যার কারণে ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে এ সেক্টরে। এখানে ব্যবসায় কিংবা চাকরি দু’ভাবেই ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মো: রহমত উল্যাহ্
ফাস্টফুডে সম্ভাবনা
ফাস্টফুডের বাজারের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ মানুষ এখন সময় বাঁচাতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনেও রাজি। এছাড়া এটি সম্মানজনক পেশা হিসেবে ইতোমধ্যেই আমাদের সমাজে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর সম্ভাবনা শুধু দেশেই নয় বিদেশেও রয়েছে ব্যাপক। সে ক্ষেত্রে আপনাকে সুন্দরভাবে ইংরেজিতে কথা বলা জানতে হবে। বছরের বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে থাকে।
ব্যবসায় করতে চাইলে
এই ব্যবসায় শুরু করতে হলে আপনাকে প্রথমে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। শুরু করার পর রাজস্ব বোর্ড থেকে টিন সার্টিফিকেট এবং ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নিতে হবে। যেহেতু আপনি খাবার জাতীয় ব্যবসায় করবেন তার জন্য অবশ্যই বিএসটিআই-এর অনুমোদন নিতে হবে।
মূলধন
রাজধানী কিংবা বিভাগীয় শহরে এ ব্যবসায়ের জন্য অন্তত ৫০-৬০ লাখ টাকা মুলধন প্রয়োজন। কেননা ভালো মানের খাদ্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহার্য সকল যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। এছাড়া ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অবস্থানও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভালো পজিশন না হলে আশানুরূপ গ্রাহক (কাস্টমার) আসবেনা। ভালো অবস্থানে কোনো দোকান ভাড়া নিতে হলে প্রচুর টাকা অগ্রিম দিতে হতে পারে। তাছাড়া প্রচার প্রচারণার বিষয়তো আছেই।
তবে ঢাকার বাইরে মাঝারি মানের প্রতিষ্ঠান করতে চাইলে আনুমানিক ২০-২৫ লাখ টাকা দরকার হতে পারে।
প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
বিভিন্ন আইটেমের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম দরকার। যেমন- ফ্রাইড চিকেনের জন্য ১৪০০ থেকে ২০০০ স্কয়ার ফিটের জায়গা দরকার। যা নিচ তলায় অথবা ২য় তলায় হলে ভালো হয়।
এজন্য যেসব যন্ত্রপাতি দরকার হবে-
১. ব্রোস্ট মেশিন, ২. ফ্রাই মাস্টার, ৩. গ্রিলার, ৪. মেরিনেশন মেশিন, ৫. বেডিং টেবিল, ৬. বান টোস্টার, ৭. আইস মেশিন, ৮. ফ্রিজ এবং ফ্রিজার, ৯. হোল্ডিং ক্যাবিনেট, ১০ মাইক্রোওভেন, ১১. সার্ভিস কাউন্টার টেবিল, ১২. মেইন ম্যানু বোর্ড, ১৩. ওয়াকিং টেবিল, ১৪. এক্সপ্রেসো কপি মেশিন, ১৫. পেপসি মেশিন ইত্যাদি।
বেকারি আইটেমের জন্য বেকারি ডিসপ্লে এবং বেকারি প্রোডাক্টশনের জন্য মিক্সার মেশিন, সিটার মেশিন, প্রুফিন বক্স, বাইন্ডি বাইডার, গ্যাস ওভেন ইত্যাদি।
পেস্ট্রি ডিসপ্লে করার জন্য বিভিন্ন ধরনের চিলার রয়েছে। পেস্ট্রি প্রোডাক্টশনের জন্য মিক্সার মেশিন, চিলার, মেকিং টেবিল, সিটার মেশিন, ফ্রিজ এবং ফ্রিজার ইত্যাদি।
প্রাপ্তি স্থান
এখানে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলো বেশির ভাগই বাইরের। এগুলো আমেরিকা, চীন, জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান থেকে এলসি খুলে আনতে হবে। এক্ষেত্রে লাইসেন্সের প্রয়োজন অথবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও আনতে পারেন।
ফাস্টফুডে কিছু জনপ্রিয় খাবার
ফাস্টফুডে জনপ্রিয় খাবারগুলো হচ্ছে- ফ্রাইড চিকেন, বার্গার, ফ্রেন্স ফ্রাই, হটঢগ, নাগেটস, লাচ্ছি, চিকেন রোল, চিকেন পরাটা, সমুছা, কপি, কেক এবং বিভিন্ন ধরনের পেস্ট্রি।
আয়ের পরিমাণ
এই ব্যবসায়ে আয়-রোজগার বেশ ভালো। প্রতিদিন পঞ্চাশ হাজার টাকা বিক্রি হলে মাসে প্রায় চার লক্ষাধিক টাকা নিট মুনাফা করা সম্ভব।
চাকরি ও আয় রোজগার
আপনি যদি সৎ ও পরিশ্রমী হন তাহলে নির্দ্বিধায় এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এখানে কাজের সেকশন আছে। যেমন- সেলস্, বেকারি, প্রেস্ট্রি, চিকেন, পারচেইজ, একাউন্টস্, এজিএম, জিএম, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর প্রভৃতি। তবে অবশ্যই আপনাকে ন্যূনতম এইচএসসি পাস হতে হবে। আর ইংরেজি জানা থাকলেতো আরো একধাপ এগিয়ে গেলেন।
এখানে বিভিন্ন পদ অনুযায়ী সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার থেকে এক লাখ বা তারও বেশি টাকা বেতন পাওয়া সম্ভব।
প্রশিক্ষণ
এ পেশায় প্রশিক্ষণ খুবই প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ ছাড়া এখানে সফল হওয়া বেশ কঠিন। আর এ জন্য আমাদের দেশেই অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন-
১. বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন
২. টমি মিয়াস ইনস্টিটিউট অব হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট
৩. বিয়াম ইত্যাদি
এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন মেয়াদের ডিপ্লোমা এবং সার্টিফিকেট কোর্স করিয়ে থাকে।
সফলতার কথা
পরিশ্রমী এবং উদ্যমী হলে এ সেক্টরে আপনি সফল হবেনই। তেমনি একজন সফল ব্যক্তি মো: মিয়া খান। বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া ফ্রাইড চিকেন অ্যান্ড পেস্ট্রিসপ (সিএফসি) এর নির্বাহী পরিচালক। তিনি এ সেক্টরে প্রায় আঠারো বছর। দীর্ঘ এ সময়ে তিনি দেশি বিদেশি অনেক কোম্পানিতে কাজ করেছেন। তিনি ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সকে বলেন, এটি একটি উপভোগ্য এবং চ্যালেঞ্জিং পেশা। এ পেশায় প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে তা পুরোপুরি সম্ভব। তবে অবশ্যই সততা, পরিশ্রম, সার্ভিস নলেজ ও কাস্টমার হ্যান্ডেলিং করার যোগ্যতা থাকতে হবে। আর এ জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির আচরণগত পরিবর্তন আসে।
লেখককে ইমেইল করতে চাইলে-
E-mail: [email protected]