ওয়েব ডেভেলপার

ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার কারা? ক্যারিয়ার হিসেবে কেমন?

নাসের আহমেদ লিমন : ওয়েবসাইট আছে এবং নিয়মিত আপডেট করা লাগে এমন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই দক্ষ ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার প্রয়োজন হয়। এই ধরনের ডেভেলপারের কাজই হয় মূলত ওয়েবসাইটকেন্দ্রিক। ওয়েবসাইট ডিজাইন থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ ও সমস্যার সমাধান তাকেই করতে হয়। এ নিবন্ধে আমরা জানব একজন ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার -এর আদ্যোপান্ত।

ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার কারা?

সাধারণত একটি ওয়েবসাইট বানাতে হলে প্রথমে তার কাঠামো ডিজাইন করতে হয়। এর ইন্টারফেস কেমন হবে, কোথায় কী কালার ব্যবহার করা হবে এইসব খুটিনাটি বিষয় ডিজাইন করেন একজন ওয়েব ডিজাইনার। এরপর এই ওয়েবসাইট মানুষের ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য সার্ভারে কাজ করতে হয়, বিভিন্ন এপ্লিকেশন ব্যবহার করতে হয় যাতে তা খুব সহজে এবং দ্রুত সাড়া দিতে পারে। এর সিকিউরিটি সিস্টেম নিয়েও কাজ করতে হয় যাতে ওয়েবসাইটটি সুরক্ষিত থাকে। এছাড়াও ওয়েবসাইটে ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্টের কাজও করতে হয়। পেছন থেকে যিনি এইসব কাজগুলো করেন, তিনি হচ্ছেন একজন ওয়েব ডেভেলপার। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি যখন একজন ব্যাক্তি দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করেন, তখন উনাকে বলা হয় “প্রফেশনাল ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার।” এক বাক্যে যদি বলি তাহলে, “একটি ওয়েবসাইটের ডিজাইন থেকে শুধু করে যাবতীয় সকল বিষয়, ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট, সিকিউরিটি সিস্টেমের যাবতীয় কাজ যিনি করেন, তিনি ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে পরিচিত।

কী ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে? সিএসই ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া কি ওয়েব ডেভেলপার হওয়া সম্ভব?

যেহেতু ওয়েবসাইট ডিজাইন মানেই অনেক ধরনের কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে কাজ করতে হয়, সেক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক যারা সিএসই ব্যাকগ্রাউন্ড এ আছেন, তারা বাড়তি সুবিধা পাবেন। কারণ বেশিরভাগ বিষয় তাদের নখদর্পণে থাকে। তাই তারা যে ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার হতে পারবেন, এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

যদি শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা যদি না থাকে, তারপরও আপনি একজন ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে গড়ে উঠতে পারবেন। এর উদাহরণ আছে ভুরি ভুরি। শুধু আপনার প্রয়োজন একজন মেন্টরের তত্ত্বাবধানে থেকে সাহস এবং ধৈর্যের সাথে লেগে থাকা। প্রথম দিকে একটু কষ্ট হবে কোডিং এর প্যাটার্ন বুঝে নিতে, তবে শুধুমাত্র ধৈর্য এবং সাহসই পারবে আপনাকে সামনে এগিয়ে নিতে।

পাশাপাশি যাদের আইকিউ ও গাণিতিক দক্ষতা ভালো এবং চিন্তা-শক্তির প্রখরতা বেশি তারা ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে ভালো করতে পারেন। এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা কোনো বাঁধা নয়।

ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপারদের ওয়েবসাইটের খুটিনাটি সব বিষয়েই খেয়াল রাখেন

ফুল স্ট্যাক ডেভেলপার হতে হলে কী কী ল্যাঙ্গুয়েজ জানতে হবে?

প্রথমত, ফ্রন্ট এন্ডের ব্যাসিকের জন্য আপনাকে জানতে হবে এইচটিএমএল এবং সিএসএস। জেনে রাখা ভালো, এই দুটির মধ্যে এইচটিএমএল হচ্ছে “মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ” এবং সিএসএস হচ্ছে “স্টাইল।” কিন্তু এগুলো কোনো “প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ” নয়। এর মাধ্যমে আপনি একটি স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।

এর পর আপনাকে জানতে হবে জেকুয়েরি এবং বুটস্ট্র্যাপ, যা দিয়ে আপনি ওয়েবসাইটকে প্রাণবন্ত এবং রেসপন্সিভ করতে পারবেন। যেকোনো মেনুতে ক্লিক করলে অন্য পেইজে যাবে এবং বিভিন্ন রকম তথ্য দেখাবে।

ব্যাক এন্ড ডেভেলপমেন্টের জন্য শিখতে হবে “পিএইচপি এবং মাইএসকিউএল” যা ব্যবহার করে আপনি ওয়েবসাইট এর সম্পূর্ণ ডাটাবেজ তৈরি করতে পারবেন। জেনে রাখা ভালো, “পিএইচপি” হচ্ছে একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ যার মাধ্যমে আপনি ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। “মাইএসকিউএল” হচ্ছে ডাটাবেজ ল্যাঙ্গুয়েজ যার মাধ্যমে ওয়েবসাইটের লক্ষ লক্ষ ডাটা সাজিয়ে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে রাখা হয়। এতে করে তথ্যগুলো সুরক্ষিত থাকে এবং ঠিকভাবে কাজ করে।

আরেকটু বিস্তারিত যদি বলি, এইচটিএমএল, সিএসএস দিয়ে ওয়েবসাইট বানালে তা আপনাকে কোনো ফলাফল দিবে না। আপনি যতোটুকু কোড করবেন, সে আপনাকে ততোটুকুর রেজাল্ট দেখাবে। যেমন – আপনি যদি লিখেন ১০ যোগ ১০, তাহলে তা আপনাকে রেজাল্ট হিসেবে ২০ দেখাবে না। কিন্তু পিএইচ, এসকিউএল -এ যখন আপনি ইনপুট দিবেন, তখন তা আপনাকে রেজাল্ট দিবে। যেমন – এখানে আপনি ১০ যোগ ১০ লিখলে তা আপনাকে রেজাল্ট ২০ দেখাবে। এটাই মূলত স্ট্যাটিক এবং ডাইনামিক এর পার্থক্য।

এছাড়াও একজন ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপারকে কাজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বাড়ার পাশাপাশি আরো অন্যান্য ল্যাঙ্গুয়েজ যেমন সাস, জাভাস্ক্রিপ্ট, লারাভেলসহ নানারকম ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয়। এগুলো নির্ভর করে তার কাজের ক্ষেত্র এবং অভিজ্ঞতার উপর।

ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার কোন ধরনের কাজ করেন?

একটি ওয়েবসাইটের কাঠামো ডিজাইন থেকে শুধু করে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য যাবতীয় কাজই ফুলস্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার করেন। চলুন বিস্তারিত জেনে নেই তিনি কী কী কাজ করেন।

◉ ওয়েব সাইটের কাঠামো ডিজাইন করেন। দেখতে কেমন হবে, কী কালার ব্যবহার করা হবে, ইন্টারফেস কেমন হবে -ইত্যাদি নির্ধারণ করেন।

◉ সার্ভার সেট আপ করেন। সার্ভারে মূলত ওয়েবসাইটের ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা থাকে।

◉ বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের মাধ্যমে ওয়েবসাইটটি মানুষের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলার কাজটিও তাকে করতে হয়।

◉ ওয়েবসাইট এর সিকিউরিটি সিস্টেম নিয়ে কিছু কাজ করতে হয়। কারণ অনেক সময় ওয়েবসাইট হ্যাক হয়ে ডাটা চুরি হতে পারে। তাই সার্বক্ষণিক নজরদারি করতে হয়।

◉ ওয়েবসাইটটি যাতে সকল ধরনের ডিভাইস যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, আইপ্যাড, আইফোনসহ অন্যান্য ডিভাইসে ঠিক মতো সাপোর্ট করে এবং রেস্পন্সিভ হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়।

◉ ওয়েবসাইটের যেকোনো ছোটো-বড় সমস্যা হলে সেগুলো সমাধান করতে হয়।

◉ ওয়েবসাইটে কী ধরনের ডাটা ইনপুট হবে, কী উদ্দ্যেশ্যে ব্যবহার করা হবে (ই-কমার্স/ কর্পোরেট/ লোকাল ব্যবসা নাকি অন্যান্য) সেসকল বিষয় বিবেচনা করে ডিজাইন ও ডাটাবেজ-এর কাজ করতে হয়।

◉ ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট অপটিমাইজেশনের কাজ করতে হয়।

◉ সার্বক্ষণিক ওয়েবসাইট মনিটর করতে হয়।

কাজের ক্ষেত্র কেমন হতে পারে?

একজন প্রফেশনাল ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার অনলাইন এবং অফলাইন দুই মাধ্যমেই কাজ করতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ তার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।

তিনি যদি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুক থাকেন, তাহলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস যেমন ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার.কম, পিপল পার আওয়ারসহ আরো অনেক মার্কেটে কাজ করতে পারেন। এক্ষেত্রে কাজ পাওয়া না পাওয়া নির্ভর করবে এই ডেভেলপারের কাজের অভিজ্ঞতা, যোগাযোগের দক্ষতা এবং ধৈর্যের উপর। ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপারদের অনেক চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক, লিংকডিন, টুইটারে মার্কেটিং করেও অনেক ক্লায়েন্ট পাওয়া যায়।

অফলাইনে কাজ করতে ইচ্ছুক হলে তিনি যেকোনো কোম্পানিতেই জয়েন করতে পারেন। কারণ প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই ওয়েবসাইট মেইনটেইন করে, তাই এর জন্য প্রয়োজন হয় একজন প্রফেশনাল ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার। এজন্য অফলাইনেও তাদের অনেক চাহিদা রয়েছে।

অনেক স্টক মার্কেট আছে, যেমন- থিমফরেস্ট ইত্যাদি যেখানে একজন ডেভেলপার তার নিজের ডিজাইন করা ওয়েব টেমপ্লেট আপলোড করতে পারেন। সেখানে তিনি একটি মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারেন। কেউ যদি সেই ডিজাইনটি কিনতে ইচ্ছুক থাকেন, তাহলে সেখান থেকে ওই মুল্য পরিশোধ করে একটি রেডি ওয়েবসাইট কিনে ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে ডেভেলপাররা অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

ওয়েব ডেভেলপারের মাসিক আয় কেমন?

আয় রোজগার নির্ভর করবে সেই ডেভেলপারের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও প্রফেশনালিজমের ওপর। তবে দক্ষতাভেদে লোকাল কোম্পানিতে একজন ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার ২০ হাজার থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকা পেয়ে থাকেন।

অনলাইন মার্কেটপ্লেসে যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন, তারাও অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা ভেদে প্রতি মাসে ৪০০ ডলার থেকে শুরু করে ৫/৬ হাজার ডলারও উপার্জন করে থাকেন।

আবার অনেকে আছেন জবই পান না। কারণ তাদের কাজের দক্ষতা এবং যোগাযোগের দক্ষতায় ঘাটতি রয়েছে। অনলাইন জবের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক অনলাইনে উপস্থিতি প্রয়োজন হয় যা অনেকে পারেন না।

কম্পিউটার কনফিগারেশন

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করার জন্য আপনার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে নূন্যতম ৪ জিবি র‍্যাম এবং ন্যূনতম কোরআই ৩ প্রসেসর  হওয়া ভালো। তবে এর বেশি আপনি যতো বাড়াতে পারেন, কাজের গতি  ও কাজ করতে তত সুবিধা হবে।

সবকিছু বিবেচনা করে আপনি যদি ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাহলে ধৈর্য, সাহস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে নেমে পড়ুন। ওয়েব ডেভেলপারদের চাহিদা এখন অনেক, ভবিষ্যতে আরো অনেক বাড়বে। তাই সময় নষ্ট না করে কাজে লাগাতে শুরু করুন। পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই।

——————
লেখক : ট্রেনিং কোঅরডিনেটর – এডুকেশন,শিখবে সবাই

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top