রেডিওর এফএম’র পদচারণা বেশি দিনের না হলেও এর পরিচিতি আর জনপ্রিয়তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এফএমটা যেন নিত্য আবশ্যকীয় কিছু একটা। ফলে দিন দিন যেমনি বাড়ছে এফএম রেডিওর সংখ্যা, তেমনি ক্যারিয়ারের ক্ষেত্র হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করছে। এটি যেমন দিয়েছে সাংবাদিকতার ইলেকট্রনিক সংস্করণের নতুনত্ব, তেমনি আরজে’র স্থান করেছে ঈর্ষান্বিত। ফলে তরুণদের কাছে এফএম রেডিও একটা স্মার্ট ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রই বটে। লিখেছেন এস এম মাহফুজ
আজকের এফএম রেডিও
চলতি দশকের মাঝামাঝি সময়েরও পর যে এফএম রেডিওর যাত্রা আজকে তা কতটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে তা ভাবতেও অবাক লাগে। সারাক্ষণ বিনোদিত করার জন্য ২৪ ঘণ্টা গান যেমন আছে, তাৎক্ষণিক যেকোনো ঘটে যাওয়া ঘটনা জানার জন্য আছে ঘণ্টায় ঘণ্টায় নিউজ আপডেট। বাজারের দরদাম জানতে রয়েছে আজকের বাজার, আছে ট্রাফিক নিউজ আপডেট ইত্যাদি। অর্থাৎ প্রাত্যহিক কাজে। একজন গ্রহকের যা দরকার সবই দিচ্ছে এফএম।
ক্যারিয়ারের ক্ষেত্র
এফএম রেডিও যত জনপ্রিয় হচ্ছে ততই এখানকার ক্যারিয়ারের ক্ষেত্র বাড়ছে। বর্তমানে যেসব ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ আছে। সেগুলো এক নজরে বললে-
– আরজে, সংবাদ প্রতিবেদক, সংবাদ উপস্থাপক, আউটডোর ব্রডকাস্টার, আর্কাইভ, শব্দ প্রকৌশলী, সম্পাদনা বিভাগ, সময়সূচি নিয়ন্ত্রক
আরজে :
আরজে মানে রেডিও জকি। সহজ বাংলায় যাকে বলে কথা বন্ধু। এফএম রেডিও সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ হলো আরজে। আরজেরা তাদের কথা দিয়ে শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন। ফলে রেডিওতে ক্যারিয়ার এর কথা চিন্তা করলে অনেকে প্রথমেই চিন্তা করেন আরজে হওয়ার। আরজে হতে হলে কথা বলার বিষয়টি তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। সুন্দর উপস্থাপন, শ্রোতাদের জয় করার মতো টেকনিক, ভাষার ওপর ভারো দখল, বন্ধুসুলভ আচরণ, উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন ও আত্মবিশ্বাস। যারা বিতর্ক, আবৃত্তি কিংবা নাটক করেন তাদের জন্য আরজে হওয়া বাড়তি সুবিধার। আরজে হতে হলে এসব দক্ষতা যেমন লাগবে, তেমনি জনগণের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে প্রাত্যহিক ঘটে যাওয়া ঘটনা, সাম্প্রদায়িক বড় বড় ঘটনা, ইতিহাস, বিনোদন সব বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান থাকলে ভালো। এর বাইরে আরজেকে ব্যক্তিগতভাবে ভালো মানুষ হতে হবে আর শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মত ক্ষমতা থাকতে হবে।
সংবাদ প্রতিবেদক :
বর্তমানে এফএম রেডিওর প্রায় প্রতিটি স্টেশনই সংবাদ প্রচার করে থাকে। রেডিও টুডে আর এবিসি তো প্রতি ঘণ্টায়ই নিউজ আপডেট দিয়ে থাকে। ফলে এখানেও প্রয়োজন হয় সংবাদ প্রতিবেদকের। বর্তমানে সাংবাদিকতার অন্যতম ক্ষেত্র এফএফ রেডিও। সাংবাদিকতার সব কিছুর বাইরে অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে উচ্চারণটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকতায় আগ্রহী যে কেউ এখানে প্রতিবেদক হতে পারেন। কাজের প্রতি ভালোবাসা, সময় জ্ঞান, খবরের অন্তরালের খবর তুলে আনার যোগ্যতা প্রতিবেদকের আবশ্যক।
সংবাদ উপস্থাপক :
রেডিওতে সংবাদ প্রতিবেদক যেমন প্রয়োজন, তেমনি সংবাদটি দর্শকের বা শ্রোতার কাছে উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজন সংবাদ উপস্থাপক। উপস্থাপনের ক্ষেত্রে গুণগত চরিত্রের দিক থেকে টিভি চ্যানেল থেকে এটি ব্যতিক্রম কিছু নয়। সংবাদ উপস্থাপকে গলার স্বর, উচ্চারণ ভঙ্গি, কথা বলার ধরন গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে ও শ্রোতাদের মন কেড়ে নেয়ার মতো কৌশল, নিজেকে প্রকাশ করার মতো গুণ উপস্থাপকের থাকতে হয়। সংবাদ পরিবেশনের উপস্থাপকের উপস্থাপনের ঢং থেকেই শ্রোতা খবরের সত্যতা, বিশ্বস্ততা আর নির্ভরযোগ্যতা খুঁজে পাবেন। এর বাইরে জ্ঞানের বিষয়টা তো রয়েছেই।
আউটডোর ব্রডকাস্টার :
এফ এম রেডিও কাজের আকেটি ক্ষেত্র আউটডোর ব্রডকাস্টার যিনি আউট তথা বাইরের বিষয়গুলো ব্রডকাস্ট বা প্রচার করে থাকেন। যেমন সর্বশেষ ট্রাফিক আপডেট, আজকের বাজার ইত্যাদি বিষয়গুলো সাসরি শ্রোতার কাছে পৌছান। অনুষ্টানে সরাসরি কণ্ঠ দিতে গেলে উচ্চারন বিষয়টা যেমন থাকে তেমনি শ্রোতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং আগ্রহের বিষয়টাও ব্রডকাস্টারের তাশায় থাকতে হয়।
আর্কাইভ :
আর্কাইভ হলো পুরনো যেকোনো বিষয়ের সমৃদ্ধ সংগ্রহ। এফএম রেডিওর ক্ষেত্রে এ সংগ্রহটা বলা চলে গানের। গানের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার আর্কাইভ কর্মীর কাছে থাকে, তেমনি থাকে প্রয়োজনীয় তথ্য। এ জন্য গান সংগ্রহ করার মতো মানসিকতা সম্পন্নদের দরকার। আর্কাইভ কর্মীকে অবশ্যই দেশী ও বিদেশী সঙ্গীতের ওপর ভালো দখল থাকতে হয়। নতুন কী কী ক্যাসেট বাজারে এলে, কোন শিল্পীর কোন গান, পাঠক জনপ্রিয়তায় রয়েছে কোনটি ইত্যাদি তার জেনে সেগুলো গুছিয়ে রাখতে হয়।
শব্দ প্রকৌশলী :
এফএম রেডিওর ক্ষেত্রে সাউন্ড সিস্টেম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এখানে শ্রোতা কাউকে দেখছে না, শুধু শব্দই শুনছে। ফলে এ শব্দকে শ্রোতার কাছে পৌঁছে দিতে এফ রেডিওতে শব্দ প্রকৌশলীরা কাজ করে থাকেন। শব্দের সাথে জড়িত সব মেশিন ঠিকমতো কাজ করছে কি না, শ্রোতার শোনার ক্ষেত্রে আরামদায়ক শব্দপ্রবাহ তিনি নিশ্চিত করেন। শব্দ প্রকৌশলীর এর বাইরে এসে ও গান সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হয়। গোটা স্টুডিওকে শব্দ প্রকৌশলীই ভালোভাবে সাজাতে পারেন।
সময়সূচি নিয়ন্ত্রক :
রেডিওতে সময়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। এখানে প্রতিটি সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এখানে কাজ করেন সময়সূচি নিয়ন্ত্রক। যিনি কখন কোন অনুষ্ঠান হবে, কোন অনুষ্ঠানের পর কী বিজ্ঞাপন দেয়া হবে, বিজ্ঞাপনসহ যেকোনো অনুষ্ঠানের সময় কত হবে, সংবাদ কখন শুরু ও শেষ হবে ইত্যাদি বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ করেন। এ জন্য নিয়ন্ত্রকের যেমন সময় সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে তেমনি তার মিউজিক মাস্টার সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়।
সম্পাদনা বিভাগ :
এফএম রেডিওর জন্য সম্পাদনা বিভাগে কাজ করেন অনেকে। এখানে সাধারণত প্রযোজকরা কাজ করে থাকেন। সংবাদের ক্ষেত্রে বললে, প্রতিবেদক প্রেরিত সংবাদটিকে যথার্থ শ্রোতাদের জন্য করতে সংবাদটিকে সম্পাদনা বা এডিট করতে হয়। সংবাদের কোন অংশটি বাদ যাবে এর সাথে কোনো কিছু যোগ করতে হবে কি না ইত্যাদি এ বিভাগ দেখে থাকে। অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিষয়টা সমভাবে প্রযোজ্য। আন্তর্জাতিক সংবাদের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট থেকে প্রয়োজনীয় সংবাদ সংগ্রহ করে তা দক্ষতার সাথে সম্পাদনা করে সম্পাদনা বিভাগ। এ ক্ষেত্রে বিভাগের কর্মীদের সব সময়ই খুবই সচেতন হতে হয়। তাদের চলমান ঘটনাগুলো যেমন জানতে হয়, সাথে ইতিহাসও জানতে। এ ছাড়া শ্রোতাদের রুচি অনুষ্ঠান বা সংবাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যাতে শ্রোতা সহজে পায় সে দিকে লক্ষ রাখতে হয়।
বর্তমান এফএম রেডিও :
* রেডিও টুডে- ফ্রিকোয়েন্সি- ৮৯.৬
আউয়াল সেন্টার (২০ তলা)
৩৪, কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ
বনানী, ঢাকা-১২১৩
* রেডিও ফূর্তি- ফ্রিকোয়েন্সি- ৮৮.০
১২-১৪ ল্যান্ডমার্ক বিল্ডিং
গুলশান-২, ঢাকা-১২১২
* এবিসি রেডিও- ফ্রিকোয়েন্সি- ৮৯.২
ট্রান্সকম গ্রুপ, ঢাকা ট্রেড সেন্টার
৯৯, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ
কাওরানবাজার, ঢাকা
* রেডিও আমার- ফ্রিকোয়েন্সি- ৮৮.৪
সুন্দর লেখা। ধন্যবাদ লেখক মাহফুজকে।
Carry on. But write in short brief. A long article doesn’t impressed a reader. It’s seemed monotonous.