সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে চাই দৃঢ় মনোবল

0
110

successরাবেয়া বেবী

আমাদের সমাজ পদে পদে প্রতিবন্ধক তৈরি করে। কাজ করতে গেলে বলে তোমাকে দিয়ে হবে না, কারণ তুমি তরুণ। তোমার বয়স হয়নি, হয়নি অভিজ্ঞতা। কিন্তু আমি বলতে চাই সমাজের এই ধারণা ভুল। কাজ করতে চাইলে বয়স কোন বিষয় নয়, বয়স শুধু একটা সংখ্যা। তবে বললেই হবে না তোমাকে প্রমাণ করতে হবে সমাজ ভুল, তুমি ঠিক। এরজন্য তোমাকে কাজ করতে হবে। কাজের মাধ্যমে মানুষকে যুক্ত করতে হবে। মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। এর মতো আত্মতৃপ্তি আর কোনো কাজ নেই। কোনো অর্থ, খ্যাতি কিংবা সাফল্য দিয়ে এই তৃপ্তি পাবে না। এভাবেই তরুণদের নিজের প্যাশনের প্রতি প্ররোচিত করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাবিরুল ইসলাম।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে দুই হাজার উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে এক সচেতনতামূলক কর্মশালার মুখ্য আলোচক হিসেবে তিনি বক্তৃতা করেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই), জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর সহযোগিতায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এ কর্মশালার আয়োজন করে। ২২ বছর বয়সী সাবিরুল বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে ১০ লাখ তরুণকে আত্মনির্ভরশীল এবং অর্থনৈতিক সাক্ষরতার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করতে ২০১১ সালের মে মাসে থেকে এক ক্যাম্পেইন শুরু করেন। এর অংশ হিসেবে সাবিরুল ইসলাম বাংলাদেশে আসেন। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে তিনি ২৫টি দেশের ৮ লাখের ও বেশি তরুণের সামনে বক্তৃতা দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি মো. সবুর খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুত্ফর রহমান ও জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) এর ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল।

সাবিরুল বলেন, ১৯৬০ সালে আমার দাদা ব্রিটেন যান। আমরা যেখানে বাস করি সেখানে অনেক বাঙালি আছে। ছেলেবেলায় আমি রোগা-পাতলা ছিলাম মায়ের হাত ধরে যখন স্কুলে যেতাম তখন প্রতিদিন আমাকে শুনতে হতো, আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। সে যে কি যন্ত্রণা। আমি প্রতি মুহূর্তে ভেবেছি কি করবো কিভাবে নিজেকে প্রমাণ করবো, আমাকে দিয়ে হবে। আমরা শাহরুখ খানকে দেখে উত্সাহিত হই , এভারেস্ট জয়ীকে দেখে উত্সাহিত হই তাদের মতো হতে চাই। কিন্তু দিনের শেষে ভেবে দেখ তুমি কি সত্যি শাহরুখ খান হতে চাও। শাহরুখ খান আমাকে উত্সাহিত করেনি, করেছে আমার কাজিন । সে তখন স্কুলে স্কুলে বছরের পঞ্জিকা সাপ্লাই করতেন। তার বয়স ছিল পনের বছর আমার চৌদ্দ। সে তার প্রোডাকশন ডাইরেক্টর চাকরিটা আমাকে দেয়। আমি ভীষণ আবেগ আপ্লুত হই। কিন্তু তিনি আমাকে সেই একই কথা বলেন ‘তোমাকে দিয়ে হবে না, ইউর আর নট গুডএনাফ’ আমি তখন নিজে ব্যবসা শুরু করি ওয়েব ডিজাইনিং শুরু করি’ এবং সফল হই। আমার বাবা মার হাতে একটি বড় অংকের টাকা তুলে দেই। তারা সাধারণ মানুষ এত টাকা এক সাথে দেখে আনন্দিত হন। এখন বল আমি ঠিক নাকি যারা আমাকে বলেছে আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না তারা ঠিক। আমি দুই বছরের মধ্যে ওয়েব ডিজাইনার পরিচয় ত্যাগ করলাম । বই লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। তখন আমার বয়স সতের । আমাকে সেই বয়সের জন্যই ৪০ জন প্রকাশক প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি থেমে যাইনি, বই প্রকাশ করেছি। সেই বই অবিশ্বাস্য ভাবে বেস্ট সেলার তালিকায় স্থান পেয়েছে। পরে সেই ৪০ জন প্রকাশক আমার কাছে এসেছেন। সাফল্যের সংজ্ঞাটা একেক মানুষের কাছে একেক রকম। সাফল্যের ক্ষেত্রে আমি ৭ P-এর ধারণায় বিশ্বাসী। এই ৭ P সেই ১৪ বছর বয়স থেকেই আমাকে সাহায্য করছে।

১. Positivity—ইতিবাচক মনোভাব: যেকোনো পরিস্থিতিতে ইতিবাচক থাক। ২. Passion—ভালো লাগা: অন্য কারও মতে নয়, নিজের ভালো লাগার মূল্য দাও। ৩. Perseverance—কঠোর অধ্যবসায়: কঠোর পরিশ্রম করো এবং কাজের ক্ষেত্রে ১০০ ভাগ মনোযোগ দাও। ৪. Persistence—লেগে থাকা: কঠোর পরিশ্রম করে সময়মতো কাজ শেষ করো। ৫. Purpose—উদ্দেশ্য: জীবনের একটা উদ্দেশ্য খুঁজে বের করো এবং বিশ্বাস করো যে তুমি ব্যতিক্রমী কিছু করতে সক্ষম। ৬. Patience—ধৈর্য: সাফল্য ধরা দিতে সময় নাও। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চেষ্টা করো। কারণ, এটাই হবে তোমার জন্য সাফল্যের গল্প। ৭. People—মানুষ: মানুষকে সব সময় বিশ্বাস করো, যুক্ত কর।

সাবিরুল ইসলামের জন্ম ১৯৯০ সালে লন্ডনে। তার বাবার বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি স্কুলের ছয় বন্ধুকে নিয়ে ওয়েব ডিজাইনের ব্যবসা শুরু করেন। এরপর নির্মাণ করেন তরুণদের ব্যবসা শেখার গেম ‘টিন-ট্রপেনার’ যা যুক্তরাজ্যের ৬৫০টি স্কুলে পাঠ্যসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের খেলতে দেয়া হয়। ইতোমধ্যে সাবিরুল ‘দি ওয়ার্ল্ড এট ইউর ফিট’ ও ‘টিন- স্পিকার’ শীর্ষক দুটি বই লিখে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন।

ঘোষণা

আপনিও লিখুন


প্রিয় পাঠক, আপনিও লিখতে পারেন ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সে। শিক্ষা, ক্যারিয়ার বা পেশা সম্পর্কে যে কোনো লেখা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন। পাঠাতে পারেন অনুবাদ লেখাও। তবে সেক্ষেত্রে মূল উৎসটি অবশ্যই উল্লেখ করুন লেখার শেষে। লেখা পাঠাতে পারেন ইমেইলে অথবা ফেসবুক ইনবক্সে। ইমেইল : [email protected]
Previous article১৬ নভেম্বর থেকে ইবিতে ভর্তি পরীক্ষা
Next articleনোবিপ্রবি’র ভর্তি পরীক্ষা ২০-২১ ডিসেম্বর
গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটাতে। থাকেন ঢাকার সাভারে। পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে- সরকার ও রাজনীতি বিভাগ থেকে অনার্স, মাস্টার্স । পরে এলএলবি করেছেন একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাঁর লেখালেখি মূলত: ক্যারিয়ার বিষয়ে। তারই সূত্র ধরে সম্পাদনা ও প্রকাশ করছেন ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স নামে এই ম্যাগাজিনটি। এছাড়া জিটিএফসি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে কর্মরত। ভিডিও তৈরি ও সম্পাদনা, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন এবং পাবলিক লেকচারের প্রতি আগ্রহ তাঁর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here