একাধারে শিক্ষক, দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ এবং রাজসভার পরামর্শক হিসেবে পরিচিত। প্রকৃত নাম বিষ্ণু গুপ্ত। কোথাও ‘কৌটিল্য’ নামেও সমানভাবে অভিহিত। রাষ্ট্রপরিচালনায় তার কুটিল নীতির জন্য তার নাম হয়েছিল কৌটিল্য। আবার ‘কুটিলা’ গোত্রভুক্ত হওয়ার কারণে তার ‘কৌটিল্য’ নাম হয়েছে বলেও ধারণা করা হয়।
জন্ম ৩৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, মৃত্যু ২৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। রাজা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজসভার সার্বিক পরামর্শক ছিলেন।
বাস্তববাদী চাণক্যের অর্থনীতি, রাজনীতি, জীবন-যাপন ইত্যাদি নিয়ে বলা কথা গুলো ‘চাণক্য শ্লোক’ নামে পরিচিত। সূদীর্ঘ আড়াই হাজার বছর পরেও কথাগুলোর গুরুত্ব হারিয়ে যায়নি। কথিত আছে, এখনো ভারতের রাজনীতি অনেকাংশে চাণক্য নীতি অনুযায়ী চলমান।
জীবদ্দশায় সার্বিক প্রয়োজনে তিনি অনেক বিষয় নিয়েই লিখেছেন। সহজ ও সুন্দর জীবন ধারণের জন্য তার ৪টি শ্লোক উল্লেখ করা হলো।
আর্থিক অবস্থা
টাকা পয়সার নিদারুন সংকট থাকলে কাউকে কখনো বলতে নেই। এমনকি অর্থাভাবে থাকলেও না। কারণ এসময় কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না, আবার কপট সাহায্যের আশ্বাস দেয়। কারণ তার মতে দরিদ্রেরা সমাজে তেমন মর্যাদা পায়না। তাই তাদের নিজের সম্পদ নিজের কাছেই রাখা উচিত।
ব্যক্তিগত সমস্যা
মহামতি চাণক্য’র মতে ব্যক্তিগত সমস্যা কখনো কাউকে বলতে নেই। যারা বলে তারা অন্যের কাছে নীচু ও বিরক্তিকর হিসেবে গৃহীত হয়, মানুষ আড়ালে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। নিজের স্ত্রী সম্পর্কে কাউকে কিছু বলতে নেই। এসব বললে মানুষ মনে করে কিছু একটা অভিপ্রায় নিয়ে তা বলা হচ্ছে। যা পরবর্তীতে ভয়ানক কোনো ফলাফল নিয়ে আসতে পারে। জ্ঞানী ব্যক্তির মতো মৃত্যু পর্যন্ত তা নিজের কাছে রেখে দেয়া উচিত।
নীচ কর্তৃক অপমান
যদি কখনো নীচ পদস্থ ব্যক্তি দ্বারা অপমানের স্বীকার হওয়া যায় তাহলে তা অন্যদের সাথে আলাপ আলোচনা না করাটাই ভালো।তাহলে মানুষ বক্তার সামনেই তাকে নিয়ে হাসি তামাশা করতে পারে। ফলে তা মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানতে পারে।
পুত্র সম্পর্কীয়
আদর দেওয়ার অনেক দোষ, শাসন করার অনেক গুণ, তাই পুত্র ও শিষ্যকে শাসন করাই দরকার, আদর দেওয়া নয়। পাঁচ বছর বয়স অবধি পুত্রদের লালন করবে, দশ বছর অবধি তাদের চালনা করবে, ষোল বছরে পড়লে তাদের সঙ্গে বন্ধুর মত আচরণ করবে। পুত্রকে যারা পড়ান না, সেই পিতামাতা তার শত্রু। একটি চন্দ্রই অন্ধকার দূর করে, সকল তারা মিলেও তা পারে না। তেমনি একটি গুণী পুত্র একশত মূর্খ পুত্রের চেয়ে ভালো।