স্কলারশিপ

বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার সহজ উপায়

মোকাররম হোসাইন : ছেলেটা আমার এক ঘনিষ্ট চাইনিজ বন্ধুর মাস্টার্স ছাত্র। বন্ধু Applied Mathematician. Experimental works কখনই করেনি। জার্মানি থেকেই আমরা কলিগ ও ঘনিষ্ট বন্ধু। সে তার দেশে ফেরত গিয়ে Guangzhou University-তে জয়েন করেছে। ২০১৭ সালের শেষে চায়নাতে বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়ে ছাত্রটির সাথে পরিচয়। ছাত্রকে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে বন্ধু বললো- ‘মোকাররম, তুমি তো পোস্ট ডকে Experiment করেছ, আমার এই ছাত্রকে একটু গাইড করো প্লিজ। খুব ভালো ও পরিশ্রমী ছাত্র।’

২০১৮ প্রথম দিকে সেই শুরু। বন্ধু ও তার ছাত্র থাকে চায়নার Guangzhou তে, আমি UK তে । ‘রিমোট কন্ট্রোল’ সুপারভাইজ করা যাকে বলে। স্কাইপি, ইউচ্যাটে ‘এটা করো, ওটা করো’ বলে তাকে নির্দেশ দেয়া। গত দুই বছরে ছেলেটা সুন্দর কাজ করে, আমাকে দিয়েছে চার চারটা Top Rank জার্নাল পেপার । তার ডিগ্রির আর ৫ মাস আছে। আরো দুইটা পেপার লিখছে । সে কিন্তু তিন বছরের মাস্টার্স ছাত্র, পিএইচডি না ।

ছেলের স্বপ্ন Oxford/Cambridge/Imperial এই তিনটার যে কোনোটায় পিএইচডি করবেই। যে করেই হোক । গত বছর মাস্টার্সে তার প্রথম পেপার দেখেই জার্মানির এক বিখ্যাত প্রফেসর তাকে অফার করেই বসলো, জব কাম পিএইচডি। সুপারভাইজার সেই প্রফেসর তো ভাবতেই পারেননি, মাসে ২২০০ ইউরো জব কাম পিএইচডি অফার ছাত্র ‘না’ করে দিবে। নাহ, ছেলে সেই অফার নেয়নি। তার স্বপ্ন এই তিনটা বিশ্বখ্যাত ইউনিভার্সিটির একটাতে যে করেই হোক ঢুকবেই । বললাম, পেপার পাবলিশ করতে থাকো, কাজ করো। বাকিটা আমি দেখছি।

Oxford/Cambridge যেতে পারছে না, কারণ তার IELTS 7 । এগুলোতে 7.5 লাগে। সে বেশ কিছুদিন আগে Imperial-এর এক প্রফেসরকে মেইল করেছে। মেইলের উত্তরের জন্য তার অপেক্ষা। উত্তর পাচ্ছে না । কিছুটা পেরেশান। সকালে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তাকে বললাম, আমি দেখছি। এবার আমি নিজেই তার হয়ে ওই প্রফেসরকে মেইল করলাম, লিখলাম- ‘X is a highly self-motivated and hard-working student. He was a visiting student in my university and has been working with me for last two years. He made four brilliant publications in top ranking journals of mechanics—-‘। কিছুক্ষণ পরেই, প্রফেসর রিপ্লাই দিয়েছে, ‘Hello Mokarram, We have been working on his application. Hopefully he will receive an offer letter soon’ . সব ঠিক থাকলে, তার পিএইচডির স্কলারশিপটা হয়ে যাবে ।

বিদেশে পড়াশোনার প্রাথমিক প্রস্তুতি�

এখন আসুন দেখি, আমাদের মেধাবীরা কী করে। যেহেতু অ্যাকাডেমিক লাইনে আছি, কয়েক বছর থেকেই নানা অনুরোধ পাই। গত বছর কয়েকজন মেইল করেছে। বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/ ছাত্র। বললাম, ‘ স্কলারশিপ পাওয়া কঠিন, কিন্তু অসম্ভব না । আমি তোমাকে আইডিয়া দিচ্ছি, একটু পরিশ্রম করে ১/২টা ভালো জার্নাল পেপার করো, তাহলে স্কলারশিপ পাওয়া খুব সহজ। কারণ তোমরা পাবলিকেশান ছাড়াই অ্যাপ্লাই করছ। আর চাইনিজ/ইন্ডিয়ানরা কয়েকটা ভালো পাবলিকেশান নিয়ে আসছে। এখানে তুমি তো পাত্তা পাবা না’ ।

গত বছর একজন খুব ধরেছিল, Applied Mathematics-এ এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে। খুব ভালো ছাত্র। বললাম, ‘আমি আইডিয়া দিচ্ছি, তুমি ১/২ বছর কষ্ট করো, ১/২টা ভালো পাবলিকেশান করো। আমিই তোমার হয়ে, যেখানে যেতে চাইবে, সেখানেই মেইল করে দিবো। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আমার বন্ধু-বান্ধব অনেকেই আছে। স্কলারশিপ পাবে। (আমার নিজের কাছে সুযোগ আছে এটা নাই বললাম)  তোমার পাব্লিকেশান থাকলে, আমার অনুরোধ করার মুখও থাকবে। এমনি এমনি Recommendation দিয়ে কাজ হবে না।’ এরপর এক বছর হলো । সে ডুব দিয়েছে, আর যোগাযোগ করে নি।

সামারি কী? আমাদের ‘মেধাবীরা’ পরিশ্রমে নাই। আছে, চাপাবাজি, ফেসবুকবাজি আর ধান্দাবাজিতে। এভাবে হয় নারে পাগল, দুনিয়াটা পরিশ্রমীদের ভায়া !

Writer : Teacher, Swansea University, UK


[প্রিয় পাঠক, আপনিও লিখতে পারেন ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সে। শিক্ষা, ক্যারিয়ার বা পেশা সম্পর্কে যে কোনো লেখা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন। পাঠাতে পারেন অনুবাদ লেখাও। তবে সেক্ষেত্রে মূল উৎসটি অবশ্যই উল্লেখ করুন লেখার শেষে। লেখা পাঠাতে পারেন ইমেইলে অথবা ফেসবুক ইনবক্সে। ইমেইল : [email protected]]

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top