মোশাররফ হোসেন
৩৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে। বিসিএস পরীক্ষার প্রতিটা ধাপই সমান গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে আরো একবার সেরা প্রমাণ করার সুযোগই হলো লিখিত পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় যে যত ভালো করবে প্রত্যাশিত চাকরি পাওয়ার দৌড়ে সে ততটাই এগিয়ে যাবে। পরীক্ষার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর অর্জন করার জন্য বিভিন্ন রকমের কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আপনি নিচের কৌশলগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
উত্তর হতে হবে তথ্যবহুল
উত্তর তথ্যবহুল লেখায় সমৃদ্ধ হতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় সব প্রশ্নের উত্তর যেন দিয়ে আসতে পারেন সেভাবে সময় বিন্যাস করতে হবে। প্রশ্নের উত্তরে অবান্তর লেখা পরিহার করবেন। লিখিত পরীক্ষায় তথ্যবহুল লেখার গুরুত্ব অনেক বেশি। বিভিন্ন রকমের তথ্যউপাত্ত দিয়ে প্রশ্নের উত্তর লিখবেন। পরীক্ষক যখন আপনার তথ্যসমৃদ্ধ উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন তখন স্বাভাবিকভাবে বেশি নম্বর দেবেন।
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি
বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি গ্রামার, বাংলা অনুবাদ ও ইংরেজি অনুবাদ, গণিত, সাধারণ বিজ্ঞানের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির সংক্ষিপ্ত টীকাগুলোয় পূর্ণ নম্বর পাওয়া যায়। এ বিষয়গুলোতে বেশি নম্বর পেলে তা আপনার সাথে অন্যান্য পরীক্ষার্থীর নম্বরের ব্যবধান বাড়িয়ে দেবে।
নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখুন
কঠিন কিছু হাতছাড়া হওয়ার কষ্টের চেয়ে জানা বিষয় হাতছাড়া হওয়ার কষ্টটাই বেশি। শেষ সময়ে এসে নতুন কোনো বিষয়ে সময় ব্যয় করার চেয়ে পুরনো বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে পড়ুন।। আপনার মতো অনেকেরই পরীক্ষার আগে ভাবনার শেষ নেই। নিজে যা যা পড়েছেন তার ওপর আস্থা আর বিশ্বাস রাখুন, আপনার অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবের প্রস্তুতি দেখে শঙ্কিত হবেন না, আপনার প্রস্তুতিতে কোনো কমতি যেন না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখুন। শেষ সময়ে এসে হাল ছেড়ে দেবেন না।
বাংলা প্রবন্ধ ও ইংরেজি রচনা লেখা
বাংলা প্রবন্ধ ও ইংরেজি রচনা লেখায় অনেক বেশি পৃষ্ঠা লিখতে হয়। কাজেই সেভাবে প্রস্তুতি নেবেন। রচনা প্যারা করে লিখবেন। এতে আপনার উত্তর লেখার মান ভালো হবে এবং সবকিছু সুন্দরভাবে উপস্থাপন করবেন। রচনায় যত বেশি তথ্য দেবেন তত বেশি নম্বর পাওয়া যাবে। বাংলা বা ইংরেজি রচনায় বিভিন্ন কবিতার পঙ্ক্তি, লেখক বা কবির উক্তি দিয়ে লিখলে বেশি নম্বর পাবেন।
জাতীয় বাজেট, উন্নয়ন, অর্থনীতি, সংবিধান, বিভিন্ন পত্রিকার তথ্য ছক করে ও ম্যাপ অঙ্কন করে লিখলে বেশি নম্বর পাবেন।
গণিতে প্রস্তুতি
গণিত বিষয়ে সব অঙ্ক সঠিক করতে পারলে পূর্ণ নম্বর পাবেন।
মানসিক দক্ষতায়
মানসিক দক্ষতায় যেহেতু নেগেটিভ মার্কস আছে তাই যেসব প্রশ্নের উত্তর পারেন তা প্রথমে দেবেন, মানসিক দক্ষতায় ভুল উত্তর না দেয়া ভালো।
সাধারণ বিজ্ঞানে প্রস্তুতি
সাধারণ বিজ্ঞানে চিত্র দেয়া আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে অবশ্যই পেনসিল দিয়ে চিত্র অঙ্কন করে দেবেন।
বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে প্রস্তুতি
বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে অনেক লিখতে হয়। এতে ছোট প্রশ্ন আসে, তাই তথ্যউপাত্ত দিয়ে সময় ভাগ করে সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন। কোনো প্রশ্নই বাদ দেবেন না। লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরে যে খুব বেশি ব্যবধান হয় তা কিন্তু নয়, আপনি যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চলে আসেন এতে করে আপনিই পিছিয়ে পড়বেন। কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারলে তা বানিয়ে হলেও লিখে আসবেন।
বাংলাদেশের সংবিধান
বাংলাদেশের সংবিধান থেকে যা লিখবেন তা অবশ্যই যেন সঠিক অনুচ্ছেদ থেকে লেখা হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন, সংবিধানটা ভালো করে পড়ে যাবেন। উত্তরপত্রে অবান্তর লেখা পরিহার করবেন। অবান্তর লেখা অনেক সময় উত্তরপত্র মূল্যায়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আরো কিছু পরামর্শ
১. সব পরীক্ষার্থীর মূল লক্ষ্য হলো পরীক্ষার খাতায় চমৎকারভাবে উপস্থাপন করে আসা। এ জন্য খাতায় কালো, নীল ও পেনসিল ছাড়া আর কোনো কলম দিয়ে লিখবেন না।
২. উত্তরপত্র হাতে পেয়ে রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ তথ্যাদি পূরণ করে উপরে ও বাঁ পাশে এক ইঞ্চি করে মার্জিন করে ফেলুন।
৩. লুজ শিটে সময় না থাকলে মার্জিন করার প্রয়োজন নেই। লুজ শিট নিলে তার নম্বরটি প্রথমেই মূল খাতার যথাস্থানে পূরণ করে নেবেন।
৪. প্রশ্নের উত্তর দ্রুত লিখুন। দ্রুত লিখলে লেখা খারাপ হবে এটিই স্বাভাবিক। মনে রাখবেন, শুধু বোঝা গেলেই হবে।
৫. পয়েন্ট, কোটেশন ও রেফারেন্স নীল কালি দিয়ে লিখবেন এবং তা আন্ডারলাইন করে দেবেন।
৬. সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন। সময় না থাকলে কম লিখবেন।
৭. চেষ্টা করবেন প্রশ্নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে উত্তর দিতে। এতে পরীক্ষক খুশি হন। আর তিনি খুশি হলে নম্বর ভালো পাবেন।
৮. টু দ্য পয়েন্টের উত্তরগুলো আগে দেবেন। যেমন- ব্যাকরণের উত্তর, চিঠিপত্র, ছোট প্রশ্ন, টীকা ইত্যাদি। তারপর বর্ণনামূলক প্রশ্ন লিখবেন।
৯. বিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্ন ছাড়া অন্য বিষয়ে চিত্র দেয়ার প্রয়োজন নেই।
১০. চিঠিপত্র লেখার সময় বাঁ পাশের পৃষ্ঠা থেকে শুরু করা উত্তম।
১১. টীকা লেখার সময় প্রথমে ভূমিকা লিখে শেষে উপসংহার লিখবেন। মাঝখানে যা জানতে চেয়েছে তা লিখবেন।
১৩. যেসব প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে শব্দ নির্ধারিত থাকবে, সেভাবে শব্দ সংখ্যা অনুযায়ী উত্তর লিখবেন।
১৪. এক কথায় যেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, তা সংক্ষেপে লিখবেন।
১৫. ইংরেজি ও বাংলা রচনা সব প্রশ্নের শেষে লিখবেন।
১৬. লেখার সময় বানান ভুল হচ্ছে কি না মাথায় রাখবেন।
১৭. বর্ণনামূলক প্রশ্নে ছক দিয়ে তথ্য উপস্থাপন করবেন।
১৮. সাধারণ গণিতে সব অঙ্কের উত্তর করা শেষ হলে আপনি উত্তরপত্রটি পুনরায় রিভিশন দেবেন।
লিখিত পরীক্ষার জন্য যে পড়াশোনা করেছেন, তার মূল লক্ষ্য হলো পরীক্ষার সাফল্য পাওয়া। আর এটি যদি করতে ব্যর্থ হন, তবে সব পরিশ্রম বৃথা যাবে। কাজেই এ মুহূর্ত থেকে নিয়মিত রুটিনমাফিক পড়াশোনা করে যান দেখবেন সাফল্য আসবেই।