বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অনেক প্রার্থীই বাংলা বিষয়কে কম গুরুত্ব দেন। অথচ প্রিলিতে বাংলার গুরুত্বও কোনো অংশে কম না। এ পরীক্ষায় বাংলার জন্য বরাদ্দ ৩৫ নম্বর। এর মধ্যে সাহিত্যে ২০ ও ব্যাকরণ থেকে ১৫টি প্রশ্ন থাকে। পরিকল্পনা করে এগোলে এ দুটি অংশেই ভালো করা সম্ভব। প্রস্তুতিমূলক পরামর্শ দিয়েছেন সহকারী পুলিশ সুপার দিদারুল ইসলাম এবং সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইদুজ্জামান হিমু, লিখেছেন মুজাহিদ উদ্দীন
বিসিএস প্রিলিমিনারি : বাংলার প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন
অনেক প্রার্থী বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়টাকে হেলাফেলা করেন। ভাবেন, আগে কঠিন বিষয়গুলোর প্রস্তুতি শেষ করি; বাংলা পরে দেখা যাবে! শেষে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষায় অন্য বিষয়ে ভালো হলেও সহজ ভেবে অবহেলা করা বাংলায়ই খারাপ হয়েছে।
শুরুতে যা করবেন
প্রস্তুতির শুরুতে বিসিএস প্রিলিমিনারির সিলেবাস দেখে বিগত সালের প্রশ্নের সঙ্গে মেলাতে হবে। বোঝার চেষ্টা করতে হবে—কোন কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন আসে আর কোন কোন টপিক থেকে কম প্রশ্ন আসে। আবার কিছু টপিক আছে, যেগুলোর প্রস্তুতি খুব সহজে নেওয়া যায়। ফলে সেসব টপিক থেকে প্রশ্ন এলে নম্বর তোলাও সহজ হয়। এভাবে সিলেবাস ধরে বিগত সালের প্রশ্ন দেখে বিশ্লেষণ করতে হবে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, কিছু কিছু প্রশ্ন সিলেবাসের বাইরে থেকেই আসছে। ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলায় বেশ কয়েকটি প্রশ্ন কমন টপিকের বাইরে থেকে এসেছে। এ ব্যাপারগুলো মাথায় রাখতে হবে। খাতা বা ডায়েরিতে প্রশ্ন বিশ্লেষণসংশ্লিষ্ট নোট লিখে সে অনুযায়ী পাঠ পরিকল্পনা সাজাতে হবে। তাহলে ঠিকঠাক প্রস্তুতি নেওয়া যাবে।
প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগ
প্রাচীন যুগের আরম্ভ ও স্থিতিকাল সম্পর্কে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ও সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় যেসব মতামত দিয়েছেন, সেগুলো ভালো করে পড়ুন। চর্যাপদকে কেন সান্ধ্যভাষা বলা হয়, এর বিষয়বস্তু, রচয়িতা, আবিষ্কারক, পদকর্তা ও পদসংখ্যার বেসিক সম্পর্কে পড়াশোনা করুন।
মধ্যযুগ থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, চণ্ডীদাস সমস্যা, মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ সাহিত্য, দোভাষী পুথি সাহিত্য, যুগ সন্ধিক্ষণ, কবিগান, অন্ধকার যুগ, চৈতন্য যুগ, জীবনী সাহিত্য, মুসলমান কবি ও তাঁদের অবদান, কবিগান, মৈমনসিংহ গীতিকা, বিভিন্ন রাজসভার কবি ও তাঁদের পৃষ্ঠপোষকদের নাম সম্পর্কে প্রায়ই প্রশ্ন আসে।
আধুনিক যুগ
আধুনিক যুগের সূচনালগ্নে গদ্যের নিদর্শনসমূহ, বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান, উইলিয়াম কেরি, রামরাম বসু ও মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার রচিত গ্রন্থের নাম, ইয়ং বেঙ্গল, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, মুসলিম সাহিত্য পরিষদ ও শ্রীরামপুর মিশন টপিকগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
কবি-সাহিত্যিকদের জানুন
বিসিএস সিলেবাসে নির্ধারিত ১১ জন কবি-সাহিত্যিক সম্পর্কে আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করুন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, মীর মশাররফ হোসেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দীনবন্ধু মিত্র, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, ফররুখ আহমদ, কায়কোবাদ ও বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ওপর প্রায় সব প্রিলিতে প্রশ্ন আসে। তাঁদের জন্ম-মৃত্যু সাল, জন্মস্থান ও উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম জানা থাকতে হবে।
আধুনিক যুগের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কবি-সাহিত্যিকের রচিত গ্রন্থাবলি এবং বাংলা সাহিত্যে তাঁদের উল্লেখযোগ্য অবদান, পঞ্চপাণ্ডবখ্যাত পাঁচ কবি, প্রগতিশীল লেখক ও তাঁদের রচিত গ্রন্থাবলি সম্পর্কে ধারণা রাখুন। আধুনিক যুগের কবি-সাহিত্যিকদের রচিত গ্রন্থগুলোর নাম ছন্দ করে পড়তে পারেন। এতে মনে রাখা সহজ হবে। পড়ার সময় প্রায় একই নামের একাধিক লেখকের বই সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। যেমন—সঞ্চিতা, সঞ্চয়িতা, শেষ লেখা, শেষের কবিতা, শেষ কাব্য প্রভৃতি।
বিখ্যাত চরিত্র, ছদ্মনাম, পত্রিকা
বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত চরিত্র, কবি-সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম ও উপাধি, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা যেমন—বেঙ্গল গেজেট, সমাচার দর্পণ, ধূমকেতু প্রভৃতির প্রকাশনার সাল, সম্পাদকদের নাম ও সাহিত্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উক্তি নোট করে পড়ুন।
যা কিছু প্রথম
বাংলা সাহিত্যের যা কিছু প্রথম, যেমন—নাটক, উপন্যাস, ছোটগল্প প্রভৃতির নাম ও রচয়িতা, বিখ্যাত প্রবন্ধ, শিশুতোষ গ্রন্থ, ভ্রমণকাহিনি, ত্রয়ী কাব্য, উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ নাটক, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ ও চলচ্চিত্রের নাম অবশ্যই জানা থাকতে হবে।
ব্যাকরণ যেভাবে পড়বেন
বাংলা ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বইটি পড়ুন। বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ গ্রন্থ ও তার রচয়িতা, বাংলা ব্যাকরণ নিয়ে রচিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ও রচিয়তার নামগুলো পড়ুন। ব্যাকরণের কিছু বিষয় যেমন—সমাস, সন্ধিবিচ্ছেদ, বচন, দ্বিরুক্ত শব্দ, ণ-ত্ব ও ষত্ব বিধান, প্রকৃতি-প্রত্যয়, প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, বাক্য পরিবর্তন, ধ্বনি পরিবর্তনের নিয়ম ভালো করে রপ্ত করুন। নিয়ম না বুঝে শুধু এমসিকিউ আকারে পড়লে ব্যাকরণের ক্ষেত্রে খুব বেশি ফায়দা হবে না।
শব্দ থেকে প্রশ্ন আসে
বিভিন্ন শব্দ যেমন—তদ্ভব, তত্সম, অর্ধতত্সম, দেশি-বিদেশি শব্দ মনে রাখার সুবিধার্থে ছন্দ করে পড়ুন। বিদেশি শব্দগুলোর মধ্যে ফারসি, আরবি, তুর্কি, পর্তুগিজ, ফরাসি শব্দ থেকে প্রায়ই প্রশ্ন আসে।
সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ
উপসর্গ, অনুসর্গ, ক্রিয়ার কাল, পদ, বাচ্য পরিবর্তন—এই টপিকগুলো তুলনামূলক সহজ হলেও পরীক্ষায় এখান থেকেও প্রশ্ন আসে। অন্যান্য টপিকের পাশাপাশি এগুলোও দেখে রাখুন।
বানান মনে রাখুন
বাংলা বানান থেকেও প্রতি বিসিএসেই ২-৩টি প্রশ্ন আসে। তাই বাংলা বানানের নিয়ম মুখস্থ রাখুন। আর যেসব বানান একটু ব্যতিক্রমী ও কঠিন, তা বারবার খাতায় লিখে চর্চা করুন। চাইলে বানানগুলো একটা কাগজে বা হোয়াইট পেপারে লিখে পড়ার টেবিলের সামনে টানিয়ে রাখতে পারেন। এতে বানানগুলো বারবার চোখে পড়ার কারণে মেমোরিতে স্থায়ীভাবে গেঁথে যাবে।
মুখস্থ বিষয়ে নম্বর পাওয়া সহজ
বাগধারা, এককথায় প্রকাশ, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, অনুবাদ প্রভৃতি থেকে প্রশ্ন আসবেই। এগুলো ভালো করে পড়ুন। বাগধারা পড়ার সময় অবশ্যই এর মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করবেন।
বিগত বছরের প্রশ্ন দেখুন
কিছু সময় বরাদ্দ রাখুন বাংলা সাহিত্য ও ব্যাকরণের বিগত বছরের প্রশ্ন পড়ার জন্য। বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে একটা বিশদ ধারণা পেয়ে যাবেন। তা ছাড়া বাংলায় যেহেতু অনেক প্রশ্ন রিপিট হয়, তাই পরীক্ষায় ভালো করার ক্ষেত্রেও এটি বেশ কাজে দেবে।
বাংলায় সময় দিন
বাংলার জন্য প্রতিদিনের রুটিনে পর্যাপ্ত সময় বরাদ্দ রাখুন। প্রতি সপ্তাহে যা শিখলেন তা কাছের বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করার চেষ্টা করুন। এতে একদিকে যেমন আপনার তথ্য মনে রাখা সহজ হবে, অন্যদিকে পরীক্ষার প্রস্তুতিও বেশ জোরালো হবে। যে টপিকগুলো পড়া শেষ হয়েছে, চেষ্টা করুন প্রতি সপ্তাহ কিংবা ১০ দিন অন্তর সেগুলোর ওপর মডেল টেস্ট দেওয়ার। এতে আপনার ভুলগুলো ধরা পড়বে আর কোন টপিকে আপনি দুর্বল সে দিকটাও বুঝতে পারবেন। শুরু থেকে ভুলগুলো শুধরে নিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকলে সাফল্য অর্জনের পথে আপনি অনেকটাই এগিয়ে যাবেন।
প্রিলিমিনারি বাংলার সিলেবাস
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য : (মান ৩৫)
ভাষা (১৫) : প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, বানান ও বাক্যশুদ্ধি, পরিভাষা, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, ধ্বনি, বর্ণ, শব্দ, পদ, বাক্য, প্রত্যয়, সন্ধি ও সমাস।
সাহিত্য (২০) : ক. প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগ
খ. আধুনিক যুগ (১৮০০—বর্তমান পর্যন্ত)।