অনেকেই জানতে চেয়েছেন, উদ্ভিদবিজ্ঞান বা বোটানি পড়ে কী হওয়া যাবে? এ বিষয়ে স্নাতক করে ভবিষ্যৎ কী? বোটানির ক্যারিয়ার সম্ভাবনা কেমন? তাদের জন্যই ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সের ‘পড়ার বিষয়’ বিভাগের আজকের আয়োজন বোটানি বা উদ্ভিদবিজ্ঞান।
বোটানি বা উদ্ভিদবিজ্ঞান কী?
বিজ্ঞানের প্রাচীন শাখাগুলোর একটি হলো উদ্ভিদবিজ্ঞান। মানুষ যখন প্রাথমিক পর্যায়ে খাওয়ার উপযোগী, ঔষধি গুণসম্পন্ন ও বিষাক্ত উদ্ভিদ চিহ্নিত করতে শুরু করে, তখন থেকেই উদ্ভিদবিজ্ঞানের সূচনা।
উদ্ভিদবিজ্ঞান বা উদ্ভিদ-জীববিদ্যা হচ্ছে জীববিজ্ঞানের একটি শাখা, যা জীবন্ত উদ্ভিদের বিষয়ে বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষণ সংক্রান্ত কাজ করে থাকে। ঐতিহ্যগতভাবে উদ্ভিদবিজ্ঞান ছত্রাক, শৈবাল ও ভাইরাস নিয়েও কাজ করে।
বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলের দিক থেকে বিচার করলে, উদ্ভিদবিজ্ঞান অনেকগুলো পরিমণ্ডলে বিস্তৃত। যেমন- গঠন, বৃদ্ধি, প্রজনন, বিপাক, ক্রমোন্নয়ন, রোগ, রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য এবং বিবর্তনগত সম্পর্ক। বর্তমান সময়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা ৫৫০,০০০ -এরও বেশি প্রজাতির জীবন্ত প্রাণ নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন।
উদ্ভিদবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়
আমাদের মৌলিক চাহিদা ৫টি; খাদ্য, বস্ত্র,বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা। এদের মধ্যে প্রথম ৩টি সম্পূর্ণরূপে পূরণ করে উদ্ভিদজগত। এছাড়াও ৪র্থটিরও সিংহভাগ আসে উদ্ভিদজগত থেকে।
উদ্ভিদবিজ্ঞান-বিষয়টির নাম শুনলেই মনে হয় যে শুধুমাত্র গাছপালা নিয়ে যে পড়াশুনার মাঝেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ। কিন্তু, আসলে ধারণাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। শুধুমাত্র গাছপালা নিয়েই পড়াশুনার মাঝে এই বিষয়টি সীমাবদ্ধ নয়। এই বিষয়টির অধীনে রয়েছে বিশাল এক ক্ষেত্র।
এদের মধ্যে রয়েছে-
- Basic Biochemistry
- Mycology
- Higher Cryptogams
- Microbiology
- Gymnosperms
- Plant Physiology
- Soil Chemistry and Soil Fertility
- Plant Anatomy
- Phycology
- Angiosperms Taxonomy
- Biodiversity
- Plant Breeding
- Plant Pathology
- Economic Botany
- Paleobotany
- Plant Biotechnology
- Embryology of Angiosperms
- Classical Genetics
- Cytogenetics
- Bioinformatics
- Plant Ecology
- Plant Nutrition
- Horticulture
- Plant Biochemistry
- Limnology
- Ethnobotany
- Molecular Genetics
- Cytology
- Biostatistics
বাংলাদেশের কোথায় উদ্ভিদবিজ্ঞান পড়ানো হয়?
দেশের প্রায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়টি নিয়ে স্নাতক সম্মান, মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি করার সুযোগ আছে। এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সবগুলো কলেজে এই বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার সুযোগ আছে।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান ইউনিটের অধীনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এবং ইন্টারমিডিয়েটে জীববিজ্ঞান বিষয় পাঠ্যতালিকায় থাকা বাধ্যতামূলক।
এছাড়াও ঢাকা, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ের উপর M.S, M.Sc এবং Ph.D করা যায়।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ
দেশের বাইরেও এ বিভাগের ছেলেমেয়েদের চাহিদা আছে। বিশেষ করে চীন, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডায়। এসব দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। নিম্নে আবেদনের লিঙ্কসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করা হলো।
- The Australian National University
- University of Edinburgh, Scotland.
- University of Essex, England.
- The University of Dublin, Ireland.
- University of Manchester, England.
বোটানি পড়ে ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
বাংলাদেশ সরকারের অধীনে রয়েছে অনেকগুলো রিসার্চ ইন্সটিটিউট। সেসব ইন্সটিটিউটের প্রায় সবগুলোতেই ৩০% এর মতো পদ শুধুমাত্র উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরদের জন্য। এছাড়াও যেসব সরকারি ও বেসরকারি খাতে কাজের সুযোগ রয়েছে, সেগুলো হলো-
- মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতাসহ বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে যোগদানের সুযোগ।
- মেডিক্যাল প্রতিনিধি হিসাবে বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে যোগদানের সুযোগ।
- ফরেস্ট অফিসার হিসেবে যোগদানের সুযোগ।
- কৃষি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ।
- BCSIR, NIPSOM, IEDCR, AIPH, ICDDR, BIRDEM ও অন্যান্য দেশী-বিদেশী গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসাবে যোগদানের সুযোগ।
- অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যেগ হর্টিকালচার, নার্সারি স্থাপন, বনায়ন ও উন্নতমানের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ।
- বিভিন্ন বায়োটেকনোলজি ল্যাবে চাকরি।
- সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সকল মন্ত্রণালয় ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে চাকরির সুযোগ।
- বিভিন্ন ওষুধ ফ্যাক্টরিতে যোগদানের সুযোগ।
- উদ্ভিদবিদ, ব্যাংক, এনজিও, আর্মি, পুলিশ, প্রশাসনসহ অনেক চাকরি।
- এছাড়াও চা-বাগান, রাবার বাগান, বন ও পরিবেশ বিভাগ, মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্র, বীজ উৎপাদন কেন্দ্রে চাকরির সুযোগ আছে।
বোটানি পড়ে আয় রোজগার কেমন?
সরকারি ও বেসরকারি চাকরিভেদে মাসিক বেতন ২০,০০০-৬০,০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া উদ্যোক্তা হিসেবে মাসিক ৩০,০০০-১,০০,০০০ টাকা উপার্জন সম্ভব।
বোটানিতে কাদের পড়া উচিৎ?
জীববিজ্ঞানের প্রতি যাদের ভালোবাসা রয়েছে, পরিবেশ নিয়ে যারা কাজ করতে চান, যারা উদ্ভিদ পছন্দ করেন—তাদের জন্য এ বিষয়।
এ বিষয় নিয়ে পড়ে অনেক ধরনের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। নিজে স্বাবলম্বী হয়ে দেশ ও জাতির উপকারে আসা যাবে। জাতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। ব্লু ইকোনমির কথাই ধরা যাক। বঙ্গোপসাগরজুড়ে আমরা সি উইড চাষ করতে পারি। আবার যেমন বর্তমানে ফুলের চাষ থেকে লাভবান হওয়া যাচ্ছে।
যারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভাবেন, বিজ্ঞানের নতুন নতুন ধারা উন্মোচন করতে চান, পরিবেশ ও মানুষের জন্য কাজ করতে চান, টেকসই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে চান, তাদের জন্যই উদ্ভিদবিজ্ঞান।
বিজ্ঞানের বিশাল এই অংশে প্রবেশ করতে পারলে আপনি নতুন করে শেখার, জানার, বোঝার ও চর্চা করার সুযোগ পাবেন।