আবু এস খান ইমন : জয়েন করার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় টারমিনেট হতে হলো আমার জুনিয়র এক্সিকিউটিভকে (এইচআর)। কিন্তু কেন? এইচআরে যারা ক্যারিয়ার গড়তে চান অথবা ইতিমধ্যে যারা এইচআরে আছেন তাদের জন্য একটি ছোট্ট অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আশা করি পড়লে উপকৃত হবেন।
লিখিত পরীক্ষা ও তিন দফা ভাইভার পরে আমরা এমবিএ-এইচআর করা একজনকে জুনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে সিলেক্ট করি। তবে বাসা অনেক দূরে হওয়ায় তাকে চূড়ান্তভাবে নেয়ার পক্ষপাতি ছিল না এইচআর টিম। তাই নিয়োগপত্র দেয়ার আগে প্রাকটিক্যাল টেস্ট হিসেবে ৬ দিন তাকে অফিস করানো হয়। কন্ডিশন ছিল- এই ৬ দিন ঠিক সময়ে অফিসে আসতে পারলে তিনি নিয়োগপত্র পাবেন। নাহলে ৬ দিনের বেতন নিয়ে বাড়ি যাবেন।
যথারীতি, তিনি ৬ দিনই সাড়ে ৯টার জায়গায় ৯টার মধ্যে অফিসে এসে যোগ্যতা প্রমাণ করলেন। এরপর নিয়োগপত্র পেলেন। কিন্তু এরপর কি হলো যাতে ১৫ দিনের মাথায়ই তাকে টার্মিনেট হতে হলো?
এইচআর কর্মকর্তাদের যথারীতি সবার আগে অফিসে আসতে হয়, আর বের হতে হয় সবার শেষে। এটাই নিয়ম। কারণ রাসুল সা.-এর সেই নীতি- “তোমরা নিজেরা যা কর না, অন্যকে তা করতে বলো না”। আমরা এইচআর প্রফেশনালরা এই নীতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে সচেষ্ট থাকি। না হলে পুরো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির হাজার হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীকে সামলানো সম্ভব হতো না আমাদের ৪/৫ জনের পক্ষে।
যা বলছিলাম- আমাদের ওই এক্সিকিউটিভ জয়েন করার প্রথম সপ্তাহে মোটামুটি সাড়ে নয়টার মধ্যে অফিসে আসেন। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হয় অনিয়ম। ৯ টা ৪৫ থেকে ১০টা বাজে তার প্রতিদিন অফিসে আসতে। ৩ দিন দেরিতে ১ দিনের গ্রস স্যালারি কাটার নিয়ম থাকা সত্ত্বেও দেখলাম, তার কোনো ফিলিংস নেই, প্রফেশনালিজম গায়েব!
তার ওপর সবচেয়ে বড় দায়িত্বজ্ঞানহীন যে কাজটি তিনি করলেন, তা হচ্ছে- বৃষ্টি হওয়ায় তিনি অনুপস্থিত থাকলেেন। জাস্ট একটা ফোন কল এজিএম স্যারকে। স্যার রাস্তা বন্ধ, আসা সম্ভব না। দ্যাটস ইট! সরি পর্যন্ত উচ্চারণ করলেন না! অথচ প্রবেশন পিরিয়ডে অসুস্থতা ছাড়া নো ক্যাজুয়াল লিভ।
আবার অ্যাবসেন্ট থাকার পরের দিন, তিনি অফিসে আসলেন ১০টা ১০-এ। তাও আবার হেড অব এইচআর অফিসে ঢোকার পরে। তার আচরণে আমরা এইচআর টিম অবাক হলাম!
যথারীতি হেড অব এইচআরের কেবিন থেকে ভদ্রলোকের ডাক আসলো। স্যার তাকে জাস্ট একটি প্রশ্ন করলেন- অনলি ১টি কারণ দেখাও, যাতে আজ আমি তোমাকে টার্মিনেট না করি। তিনি ট্রাফিক জ্যাম, গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ ইত্যাদি গদবাধা কারণ দেখালেন যা স্বভাবতই এখন আর গ্রহনযোগ্য হলো না।
এরপর স্যার আমাদের এইচআর টিমের ৪ জনকে ডেকে বললেন- ছেলেটির সাথে তোমরা ৪ জন কথা বলে ১৫ মিনিট পরে তোমাদের সিদ্ধান্ত জানাও!
এরপর তাকে আমরা ৪ জনই অন্য রুমে নিয়ে জানতে চাইলাম সমস্যা কী? একই উত্তর- ট্রাফিক জ্যাম, রাস্তা বন্ধ! তার কথার মধ্যে আমি দেখলাম না- কোনো অ্যাপোলজিকাল বিহ্যাভ কিংবা জব চলে যেতে পারে এটা ভেবে কোনো অস্থিরতা।
যাহোক- ১৫ মিনিট পরে এজিএম স্যারসহ আমরা চারজন হেড অব এইচআরকে মতামত জানালাম। এজিএম স্যার ও একজন এক্সিকিউটিভ সরাসরি টার্মিনেশনের পক্ষে ভোট দিলেন এবং কিছু লজিক দেখালেন। অন্য এক এক্সিকিউটিভ মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে সুযোগ দেয়ার পক্ষে ভোট দিলেন।
সবশেষে এলো আমার পালা। আমি বললাম- স্যার! মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে রাখার পক্ষে আমি। তবে তার Attitude-এ আমি কনভিন্সড না। কারণ তার মধ্যে আমি জবের জন্য Crying Need দেখতে পাইনি। আর যার জবের জন্য ভালোবাসা বা Need কোনটাই থাকে না, তাকে সুযোগ দেয়া হলেও প্রফেশনালিজম পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।
আমার এই ওপিনিয়নের ফলে আমার ভোটটি হয়ে গেল ফিফটি ফিফটি! যার ফলে 2.5:1.5 ভোটে টার্মিনেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। যদিও খুব খারাপ লেগেছিল সারাদিন। তবুও প্রফেশনালিজমের সাথে জিরো টলারেন্স নীতিতেই অটল থাকলাম আমরা। আমার প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে একটি বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম।
ছেলেটি অন্য কোনো ডিপার্টমেন্টের হলে আজ তাকে টার্মিনেট হতে হতো না। কিন্তু এইআর প্রফেশনে আনপ্রফেশনাল বিহ্যাভিয়ারে জিরো টলারেন্স। তাইতো একটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এইচআরে সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পেয়েও তিনি হেলায় হারালেন।
আপনারা যারা এইচআর প্রফেশনে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের জন্য এই ছোট্ট ঘটনা থেকে শেখার আছে অনেক কিছু! আজই Punctuality, Time Management, Professionalism শব্দগুলোর সাথে পরিচিত হন, নয়তো আপনার জীবনেও এমন দিন আসতে পারে!
আর যারা ইতিমধ্যে এইচআর প্রফেশনাল হিসেবে ক্যারিয়ার গড়েছেন, তাদের কাছ থেকে সুচিন্তিত মতামত কাম্য!
লেখক : এইচআর প্রফেশনাল ও রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট