আপনি যদি আপনার ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে চান, তাহলে একজন কোচের সাথে কাজ করা আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি নিশ্চিত না হন যে কীভাবে একজন কোচ খুঁজে পাবেন বা কী বিষয়ে কোচের সাথে কাজ করবেন, তাহলে কোচিং সম্পর্কে কিছু তথ্য দিচ্ছি, যা আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
আপনি হয়তো ভাবছেন, “কোচিং আসলে কী?” স্কুলের বাচ্চারা কোচিং করছে, অনেকে আবার করছে চাকরির কোচিং। এই বয়সে আমি আবার কী কোচিং করব?
আসুন, আমি আপনাকে বলছি।
গত ১০+ বছরে বিশ্বে কোচিং জিনিসটি অনেক বেশি প্রচলিত হয়েছে। এর ফলে, “কোচিং” শব্দটির বিভিন্ন সংজ্ঞা উদ্ভূত হয়েছে। অনেকেই প্রথমে পড়ালেখা বা খেলাধুলার ক্ষেত্রে কোচিং চিন্তা করেন, কিন্তু বর্তমানে, কোচিং বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন: কোচিং হলো-
- একটি প্রক্রিয়া যা একজন ব্যক্তিকে তার ব্যবসায় বা ব্যক্তিগত জীবনে পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনে প্রতিক্রিয়া (ফিডব্যাক), অন্তর্দৃষ্টি (ইনসাইট) এবং নির্দেশনা (ডিরেকশান) প্রদান করে।
- বিভিন্ন প্রয়োগযোগ্য দক্ষতা ও ক্ষমতার উন্নয়ন বা অন্যদের সাথে যোগাযোগের একটি মডেল যা উভয় পক্ষের উন্নয়ন ঘটায়।
- একটি পেশাদার সম্পর্ক যেখানে আপনি একজন পরামর্শদাতার সাথে সমস্যা সমাধানের বিকল্পগুলি নির্ধারণ, লক্ষ্য স্থাপন এবং লক্ষ্যগুলি অর্জনে কর্ম-পরিকল্পনা তৈরি করতে কাজ করেন।
চলুন কোচিংয়ের দুটি প্রধান ধরন নিয়ে আলোচনা করি: জীবন সম্পর্কিত কোচিং (লাইফ কোচিং) এবং ব্যবসায় সম্পর্কিত কোচিং (বিজনেস বা করপোরেট কোচিং)।
কর্পোরেট কোচিংয়ের পাঁচটি সুবিধা
একজন ব্যবসায় কোচ হলেন এমন পরামর্শদাতা, যিনি আপনার কোম্পানির কোনো একটি দুর্বল অংশ বা উন্নতির প্রয়োজনীয়তা দেখতে পারেন। এই সম্পর্ক ও আলাপচারিতা সাধারণত প্রকল্পভিত্তিক হয়, যেখানে নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও মেট্রিক থাকে। একজন ভালো ব্যবসায় কোচ একটি স্পষ্ট সফলতার ভিশন নির্ধারণ করবেন এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য পদক্ষেপগুলি নির্ধারণ করবেন।
১. দলের পারফরম্যান্স: দলের পারফরম্যান্স বৃদ্ধিই কর্পোরেট কোচিংয়ের প্রধান সুবিধা। এটি ব্যক্তি ও দলের ইতিবাচক গুণাবলি বিকাশ করে এবং সেগুলি ব্যবসায়ের সাধারণ মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করে। ফলে, ব্যবস্থাপনায় কর্পোরেট কোচিং কর্মচারীদের উৎপাদনশীলতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে।
২. যোগাযোগ: একটি কোচিং সেশন হলো প্রশ্ন-উত্তর ধরনের আলাপচারিতা, যা উভয় পক্ষের জন্য মূল্য (ভ্যালু) প্রদান করে। এটি পারস্পরিক সম্মান ও বিশ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে। যখন একজন ব্যবসায়িক নেতা তথা উদ্যোক্তা/ব্যবসায়ী একজন ভালো কোচ পান, তখন তা সাধারণত কর্মচারীদের সাথে ভালো যোগাযোগের দিকে নিয়ে যায়। কর্মক্ষেত্রে ভালো সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা কর্মচারীদের টিম-ওয়ার্ক বা দলগত কাজকে উন্নত করে।
৩. প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন: কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন যে কোনো কোম্পানির জন্য অপরিহার্য। এটি কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। কোচিং হলো এমন একটি কর্মচারী উন্নয়ন পদ্ধতি যা কর্মচারীদের তাদের ভূমিকায় শিখতে ও বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। তাই, ব্যবস্থাপনার জন্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ যা কর্মচারী উন্নয়নকে সমর্থন ও উৎসাহ দেয়।
৪. প্রতিষ্ঠানের অভিযোজন ক্ষমতা: আধুনিক ডিজিটাল যুগে প্রতিযোগিতামূলক থাকতে ব্যবসায়ীদের নমনীয়তা ও অভিযোজনক্ষমতা (খাপ খাইয়ে চলা) প্রয়োজন। তাই কোচিংয়ের মাধ্যমে সহায়তা এখনকার উদ্যোক্তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. কর্মচারীদের মনোবল: কোচিং ব্যক্তির সম্ভাবনা উন্নয়নে, আত্মসম্মান বৃদ্ধি ও কাজের গুণমান উন্নত করতে সহায়তা করে। আজকের কর্মক্ষেত্রে, লোকেরা স্বেচ্ছায় কাজ করতে মোটিভেটেড থাকে, বাধ্যতামূলক নয়। কর্মচারীদের কোচিংয়ের মাধ্যমে, নিয়োগকর্তারা একটি আরও উৎপাদনশীল ও কার্যকরী কর্মশক্তি তৈরি করতে পারেন।
ব্যক্তিগত কোচিংয়ের তিনটি সুবিধা
ব্যক্তিগত কোচ বা জীবন সম্পর্কিত কোচ, একজন পরামর্শদাতা যিনি আপনার ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্র উন্নত করতে আপনার সাথে কাজ করবেন। কোচিং সেশনগুলিতে আপনার ব্যক্তিজীবন, বন্ধু ও পারিবারিক সম্পর্ক, এমনকি মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সম্পর্কেও কাজ করা হতে পারে। কিছু ব্যক্তিগত কোচ এমনকি আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় নির্দেশনাও প্রদান করেন।
১. ব্যক্তিগত সম্পর্কের উন্নতি: একজনের জীবনের মান অনেক বেড়ে যায় যখন সে আবেগগতভাবে (ইমোশনাললি) সন্তুষ্ট থাকে। আমাদের আবেগগুলি ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ ও সচেতন হওয়া শুধু আমাদের নিজেদের জন্য নয়, কর্মচারীদের পরিচালনার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত উন্নয়নে সঠিক কোচিং আমাদের সমস্ত সম্পর্কের উপর বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে এবং কর্মচারীদেরকে তাদের কাজে মধ্যে আবেগ ও প্রেষণা তৈরিতে সহায়তা প্রদান করতে সাহায্য করে।
২. সৃজনশীল চিন্তাভাবনা: যখন আপনার একজন পরামর্শদাতা থাকে, তখন সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়। কারণ কোচিং সেশনগুলি আমাদের এমন ধারণাগুলি উন্মোচিত করে যা আমরা অন্য কোথাও পাইনি। এজন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর কোচিংয়ে বা ট্রেনিংয়ে বিনিয়োগ করা উচিত। কোচিং এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে প্রশিক্ষণার্থীরা তাদের চিন্তাভাবনা ও ধারণাগুলি কোচের সাথে শেয়ার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এই ধারণাগুলি তারপর মূল্যায়ন করা হয় এবং প্রয়োজনে তা উন্নত করার সুযোগ থাকে। একটি উদ্ভাবনী ধারণা আরও অনেক আইডিয়া তৈরি করতে পারে। তাই কোচিং যেকোনো ব্যবসায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ হতে পারে।
৩. বিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাস: কোচিং ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভা ও সম্ভাবনাগুলি উম্মোচন করতে সহায়তা করে। আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের একটি পরিবেশ তৈরি করে, কোচরা তাদের ক্লায়েন্টদের নতুন অভ্যন্তরীণ প্রতিভা আবিষ্কার করতে সহায়তা করতে পারেন। কোচের প্রশ্নগুলি ক্লায়েন্টকে তার লক্ষ্যগুলি অর্জনযোগ্য কি-না, তা উদঘাটনে সাহায্য করে। কোচিং একটি ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ কম্পাস তথা নির্দেশকের বিকাশে সাহায্য করে, যার ফলে লক্ষ্যগুলি অর্জনের উপায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সারসংক্ষেপ
কোচিংয়ের সুবিধা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা যায়। তবে সংক্ষেপে বললে- এটি একটি শক্তিশালী টুল যা চমৎকার ফলাফল অর্জনে সহায়তা করে। অনেক উচ্চ কার্যক্ষমতা সম্পন্ন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা আপনাকে কোচিংয়ের গুরুত্বের কথা বলবেন। একজন কোচের তত্ত্বাবধায়নে আপনি যা শিখেছেন তা প্রয়োগ করতে পারেন। যা আজকের দিনের সবচেয়ে কার্যকরী কর্মী ব্যবস্থাপনা শৈলী।
কোচিং কোন তত্ত্ব নয় বরং একটি অনুশীলন যা আয়ত্ত করা কঠিন নয়। এর কার্যকারিতা দেখতে, আপনার ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে কোচিং প্রয়োগ করে দেখুন। প্রথম প্রচেষ্টাতেই এর ফলাফল ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আপনি কোচের সাথে যা কিছু করার সিদ্ধান্তই নেন না কেন, মনে রাখবেন বিষয়টি সহজ রাখতে হবে।