কপিরাইটিং কী?

কপিরাইটিং কী? কিভাবে একজন কপিরাইটার হবেন?

মো: বাকীবিল্লাহ : কপিরাইটিং কি উচ্চ উপার্জনক্ষম দক্ষতা? হ্যাঁ। আপনি ঠিকই শুনেছেন। ফ্রিল্যান্স কপিরাইটার হিসেবে ক্যারিয়ার খুবই আকর্ষণীয় ‘কাজ’। আপনি বাসায় বসে কাজ করতে পারবেন। চাইলে দুপুরে একটু বিশ্রামও নিতে পারবেন। আবার ভালো পেমেন্টও পাবেন।

তবে এর খারাপ দিকটি হলো- বিভ্রান্তি। আপনি যখন কাউকে বলবেন, আমি একজন কপিরাইটার। তখন তিনি মনে করতে পারেন- আপনি কারো কোনো আবিষ্কার বা উদ্ভাবনের স্বত্ত্বরক্ষার কাজ করেন। অর্থাৎ কপিরাইট।

যা-ই হোক, এবার আসুন জানি- কপি রাইটারদের কাজ কী? এ প্রশ্নের সহজ জবাব হচ্ছে- আপনার মেইলবক্সে যেসব জিনিস পান, সেসব তৈরি করেন তিনি।
ভালো কথা, কপিরাইটাররা অন্যান্য মার্কেটিং ম্যাটেরিয়ালও লেখেন। যেমন- ওয়েবসাইট, ইমেইল, প্রচারপত্র, ক্যাটালগ ইত্যাদি।

আপনি যদি কপিরাইটিংয়ে আগ্রহী হন, সম্ভবত এটা এ কারণে যে আপনি শুনেছেন-
১. এটা ঘরে বসে কাজ করে অর্থ আয়ের বড় উপায়।
২. আপনি সামান্য ইনভেস্টমেন্টেই দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন।
৩. কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন নেই।

উপরের সবগুলোই সত্য।

বাস্তবিক পক্ষেই, প্রফেশনাল কপিরাইটিং দক্ষতা ক্রমেই চাহিদাপূর্ণ হয়ে উঠছে। কপিরাইটিংয়ের কাজ করেন এমন ফ্রিল্যান্স রাইটাররা সর্বাধিক উপার্জন করে থাকেন।
অনেক কপিরাইটার ফুলটাইম কাজ করে লাখ লাখ ডলার আয় করেন। আবার কেউ কেউ পার্টটাইম কাজ করে ফুলটাইম উপার্জনের স্বাদ উপভোগ করেন।
সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে- এই ক্ষেত্রে একজন লেখকের প্রচুর ও ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনা রয়েছে।

কপিরাইটিং কী?

কপিরাইটিং হলো- কপি লেখার কলা ও বিজ্ঞান; যা আপনার পণ্য বা সেবাকে গ্রাহকের কাছে উপস্থাপন করে। একইসাথে তাদেরকে তা কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করে।

এ ব্যাপারে উইকিপিডিয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে- Copywriting is the act or occupation of writing text for the purpose of advertising or other forms of marketing. The product, called copy or sales copy, is written content that aims to increase brand awareness and ultimately persuade a person or group to take a particular action.

অর্থাৎ কপিরাইটিং হলো বিজ্ঞাপন বা মার্কেটিংয়ের উদ্দেশ্যে কোনো লেখা তৈরির পেশা বা কাজ। এটা লেখা হয় ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নির্দিষ্ট কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য।

বিভিন্ন দিক থেকে, কপিরাইটিং আপনার গ্রাহকদের সবার কাছে পৌঁছানোর জন্য একজন বিক্রয়কর্মী নিয়োগের মতো। একটি বিক্রয় দল একবারে একজন গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করে; আর একজন কপিরাইটার বিলবোর্ড, ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপন, বিক্রয়পত্র, ব্লগ পোস্ট এবং আরও অনেক কিছুর মাধ্যমে একবারে তাদের সবার কাছে পৌঁছে যান।

কপিরাইটাররা আসলে কী কাজ করেন?

ডিজাইন, পণ্য বা সেবা বিপণন, এসইও এবং গ্রোথ হ্যাকিং – এসব পরিপূর্ণ ডিজিটাল মার্কেটিং পরিকল্পনার অংশ। কিন্তু কপিরাইটিং হলো আঠার মতো, যা সবগুলোকে সংযুক্ত করে। একটি সুন্দর কপি লেখার মাধ্যমে আপনার পণ্যের প্রয়োজনীয়তার কথা গ্রাহককে বোঝাতে পারলে, কোনো পণ্য বিক্রি অনেক গুন বেড়ে যেতে পারে। যা আপনার ব্যবসায়ের আশানুরূপ গ্রোথ তৈরি করবে।

কপিরাইটারদের কাজ সম্পর্কে উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে-
Copywriters help create billboards, brochures, catalogs, jingle lyrics, magazine and newspaper advertisements, sales letters and other direct mail, scripts for television or radio commercials, taglines, white papers, social media posts, and other marketing communications.

অর্থাৎ, কপিরাইটাররা বিলবোর্ড, প্রচারপত্র, ক্যাটালগ, জিঙ্গেল লিরিকস, ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্র বিজ্ঞাপন, সেলস লেটার ও অন্যান্য ইমেইল, টেলিভিশন ও রেডিও বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট, ট্যাগলাইন, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট তৈরি এবং অন্যান্য বিপনন যোগাযোগে সাহায্য করেন।

কপিরাইটিং ও কনটেন্ট রাইটিংয়ের মধ্যে পার্থক্য

কপিরাইটিং ও কনটেন্ট রাইটিংয়ের মধ্যে একটি বড় পার্থক্য হচ্ছে এর উদ্দেশ্য। কপিরাইটিং হচ্ছে আপনার ব্যান্ড বা পণ্যের সেলিংকে টার্গেট করে। অন্যদিকে কনটেন্ট রাইটিংয়ের মাধ্যমে মূল্যবান তথ্য উপস্থাপনের সুক্ষ্মভাবে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে বলা হয়।

অন্য কথায় বলা যায়- কপিরাইটিং হচ্ছে কোনো আইডিয়া, ব্র্যান্ডকে মানুষের কাছে বিক্রির কলা। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে পাঠককে পণ্য বা সেবা কিনতে উদ্বুদ্ধ করা।

আর কনটেন্ট রাইটিং হচ্ছে কনটেন্ট তৈরির কলা। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- অবহিত করা, শিক্ষিত করা বা বিনোদন দেয়া।

দ্বিতীয় পার্থক্য হচ্ছে- লেখার দৈর্ঘ্য। কপিরাইটাররা অল্প লেখার মাধ্যমে ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করেন। তারা মূল কথার দ্বারা তাৎক্ষণিকভাবে আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করেন।

অপরপক্ষে কনটেন্ট রাইটাররা আর্টিকেল বা ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে কাস্টমার এনগেজমেন্ট বৃদ্ধি করেন। তারা ভালোভাবে গবেষণা করে কনটেন্ট লেখেন। যেটা ব্র্যান্ড হিসেবে আপনার ইমেজ বৃদ্ধি করে।

কপিরাইটার হচ্ছেন একজন পেশাজীবী, যিনি তার প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং-এর জন্য কপি লেখেন। অন্যদিকে কনটেন্ট রাইটার যে কেউ হতে পারেন। তিনি হতে পারে প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা, সিইও, কর্মকর্তা, কর্মচারী অথবা বাইরের কেউ।

কপিরাইটিং কি উচ্চ-আয় করার মতো দক্ষতা?

আসুন প্রথমেই জেনে নিই উচ্চ আয় বলতে কী বোঝায়? ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংকের সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় যদি ১২,৫৩৬ মার্কিন ডলার বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে তাকে উচ্চ আয়ের দেশ বলা হয়।
সে হিসেবে সমপরিমাণ উপার্জনকে আমরা উচ্চ-আয় বলতে পারি। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যদি বার্ষিক ১২ হাজার ৫৩৬ ডলার বা তার বেশি আয় করেন, তাকে উচ্চ আয় বলা যায়।

এবার প্রশ্ন হলো- কপিরাইটিং কি উচ্চ আয়ের দক্ষতা?
এর উত্তরে বলবো- হ্যাঁ।
কারণ হচ্ছে- একজন দক্ষ কপি রাইটার কপি লিখে ওই পরিমাণ আয় করতে পারেন। যদিও তারা এ জগতের কর্তা বা বস। তারা অভিজ্ঞ, দক্ষ ও অসম্ভব মেধাবী। তারা ক্লায়েন্টের জন্য যথেষ্ট বিক্রি বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।
বিশ্বে এমন কপিরাইটারও আছেন যারা ১ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করছেন।

তবে একথা মনে রাখতে হবে যে, আপনার লেখা কপি যদি বিক্রি বাড়িয়ে রেভিনিউ অর্জন করতে না পারে, তাহলে আপনার আয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ।

কপিরাইটার হওয়ার উপায়
কপিরাইটিং হলো লেখালেখির মধ্যে উচ্চতর একটি বিষয়। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পণ্য বা সেবা বিক্রি বৃদ্ধি করা। সুতরাং এ কাজের জন্য আপনাকে আগে লেখার দক্ষতা অর্জন হবে।

আমি কিভাবে একজন কপিরাইটার হতে পারি?

কপিরাইটিং হলো লেখালেখির মধ্যে উচ্চতর একটি বিষয়। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পণ্য বা সেবা বিক্রি বৃদ্ধি করা। সুতরাং এ কাজের জন্য আপনাকে আগে লেখার দক্ষতা অর্জন হবে। এরপর পাঠককে কিভাবে আকৃষ্ট করা যায়, সে কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। একজন কপিরাইটার হতে গেলে আপনাকে যে পদক্ষেপ নিতে হবে সে সম্পর্কে সামান্য ধারণা দিচ্ছি এ প্রবন্ধে। পরবর্তী কোনো এক সময়ে এ ব্যাপারে বিস্তারিত লিখব।
তাহলে আসুন জেনে নিই- একজন কপিরাইটার কিভাবে হতে পারবেন।

১. প্ররোচনামূলক লেখার মৌলিক বিষয়গুলো শিখুন। কারণ কপিরাইটিং-এর মাধ্যমে আপনি মূলত পাঠককে পণ্য বা সেবা কিনতে উদ্বুদ্ধ করবেন। সুতরাং কিভাবে এধরনের লেখা লিখতে পারবেন সে সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। এ ব্যাপারে গুগল করলে অনেক তথ্য জানতে পারবেন।

২. এবার কপিরাইটিংয়ের বেশ কিছু মৌলিক দক্ষতা অর্জন করুন। যেমন- কিভাবে হেডলাইন, মূল্য প্রস্তাবনা লিখবেন। কিভাবে ল্যান্ডিং পেজ, বিক্রির জন্য ইমেইল লিখবেন। কিভাবে বিজ্ঞাপন বা ভিডিও স্ক্রিপ্ট লিখবেন- ইত্যাদি জেনে নিন।

৩. আপনার প্রথম ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করুন। সেক্ষেত্রে প্রথম স্ক্রিপ্টটা আপনার কপিরাইটিং বিজনেসের ওপর লিখে ফেলুন। এরপর আপনার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিত কারো ব্যবসায়ের জন্য কপি লিখুন। তারা হয়তো আপনাকে এরজন্য পে করবে না, এমনকি কপিটাও কাজে লাগাতে চাইবেন না। তবুও লিখুন। এটা আপনার নিজের জন্যই। কারণ আপনার এখন দরকার প্রাকটিস। মনে রাখবেন ভালো কপিরাইটার হতে প্রকটিসের বিকল্প নেই।

আপনি হয়তো ভাবছেন, আমি এত ভালো কপি লিখতে পারি, অথচ ফ্রিতে করবো? হ্যাঁ! প্রয়োজনে ফ্রিতেই করতে হবে। কারণ আপনি যত ভালো জানেন না কেন, এই ক্ষেত্রে আপনি শিশু।

যা-ই হোক, এভাবে করে দুয়েকজন ক্লায়েন্ট ধরে ফেলুন। সোশ্যাল মিডিয়াকেও কাজে লাগাতে পারেন ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে।

এভাবে শিখুন, ভুলগুলো শুধরে নিন।

৪. এ পর্যায়ে আপনার কৌশলে নতুনত্ব আনুন। লেখার মান বাড়াতে থাকুন। প্রয়োজনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিন। ক্লায়েন্টদের সাথে সখ্য গড়ে তুলুন। সার্ভিসের মাধ্যমে তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করুন।

৫. বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ পেতে চেষ্টা করুন। আপনার দক্ষতা দেখাতে পারলে প্রচুর কাজ পাবেন।

৬. এভাবে চূড়ান্তভাবে আপনার সার্ভিসের বিজনেস চালু করুন। নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করুন। মার্কেটিং করুন। নিয়মিত গ্রাহক পেতে থাকুন। মনে রাখবেন, এ পেশায় নিজেকে দক্ষ প্রমাণ করতে পারলে শুধু দেশে না, বিদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ থাকবে। আর কয়েক বছরে আপনার উপার্জন ছয় ডিজিট অতিক্রম করবে অবশ্যই।

কপিরাইটিং শেখা কি খুব কঠিন?

আপনি যদি সঠিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন, তবে কপিরাইটিং খুব কঠিন কাজ না। আপনাকে বিষয়টা বুঝতে হবে, অনুশীলন করতে হবে। তবে সঠিক উপায় অবলম্বন না করলে, এটা পৃথিবীর কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি।
কারণ আপনার লেখা যদি সুন্দর ও আকর্ষক না হয়, তবে সেল হবে না। আর সেল না হলে আপনার কপি কেউ কিনবে না। আর আপনার কপিরাইটার হওয়ার স্বপ্নও কোনো দিন পূরণ হবে না।

মনে রাখবেন, আপনি তখনই সফল হবেন, যখন লেখার মূল্য তৈরি করতে পারবেন। আর এটা লেখা শিখে তা অনুশীলনের মাধ্যমেই সম্ভব হবে।

পরিশেষে বলবো- কপি রাইটিংয়ের মাধ্যমে উচ্চ ইনকাম করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এই ক্ষেত্রে মাস্টার হতে হবে। আর কোনো ক্ষেত্রে বিশেষত্ব অর্জন করতে চাইলে শেখা ও অনুশীলনের বিকল্প নেই। তো আর দেরি কেন? আজই শুরু করুন শিখতে।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স। ওয়েব ডেভেলপার ও এসইও পরামর্শক।

প্রিয় পাঠক, লেখা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে জানান মন্তব্যে। আমরা চেষ্টা করবো উত্তর দিতে। ক্যারিয়ার ও পেশা সংক্রান্ত কোনো পরামর্শ ও আপডেট ফ্রিতে পেতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। আর জয়েন করুন আমাদের এক্সক্লুসিভ গ্রুপে। ধন্যবাদ।
ফেসবুক পেজ : www.fb.com/careerintelligencebd
গ্রুপের লিংক : www.facebook.com/groups/careerintelligencebd

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top