পাবলিক স্পিকিং : ভালো করার কয়েকটা টিপস

পাবলিক স্পিকিং : ভালো করার কয়েকটা টিপস

খাদিমুল ইসলাম : গত সপ্তাহে স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের পাবলিক স্পিকিং-এর ওপর একটা কোর্স পড়ানো শেষ করলাম। দুইটা সেকশনের স্টুডেন্টদের সবাই আমেরিকান। মাত্র ১৪ সপ্তাহের কোর্স। এক সেমিস্টারে স্টুডেন্টদের উন্নতি দেখে অবাক হয়েছি। যে মেয়েটি প্রথম স্পিকিংয়ে কেঁদে ফেলেছিলো, সেই মেয়েটি ফাইনালে A পেয়েছে। ক্লাস চলার সময়ে প্ল্যান করেছিলাম, কিছু টিপস  শেয়ার করব। যদিও পাবলিক স্পিকিংয়ে ভালো করার টিপসের অভাব নেই। কারণ এই ডিসিপ্লিন অনেক পুরুনো। ২০০০ বছর ধরে চলে আসছে। এখনো কাউকে প্ররোচনা করার জন্য অ্যারিস্টটলের- এথোস, পাথস, লোগোস–এর ব্যবহার হয়। আসল কথাগুলো পয়েন্ট আকারে দিলাম।
শুরু:
১. আমিসহ অনেককে যে কাজটা করতে দেখি না সেটা হলো, বক্তব্যের শুরুতে নিজেদের (বক্তাদের) গ্রহণযোগ্যতা (establishing credibility) প্রমান করা। এইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও খুবই সহজ। শুরুতেই আপনি বলতে পারেন, এই বিষয়ে আপনি ৬ মাস ধরে লেখাপড়া করছেন, এইটা আপনার গবেষণার বিষয়, এইটা আপনি পড়ান, এইটা আপনার ইন্টারেস্টের বিষয়, এই বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই বিষয়ে দুই তিনটা বাক্য বলে দেবে কেন আপনার কথা শ্রোতারা গুরুত্ব দিয়ে শুনবে।
২. শুরুতেই, আরেকটা জিনিস করা দরকার সেটা হলো শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা। মনোযোগ আকর্ষণ করার কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই। এটা আপনার ক্রিয়েটিভিটির উপর নির্ভর করবে। কিছু না পারলে, আপনারা কেমন আছেন? আজকের খবর কে কে দেখেছেন? কে কে আজ নতুন বই পড়া শুরু করলেন? পেছনের কারো দিকে ইঙ্গিত করে বলতে পারেন, পেছনের সাদা শার্ট পরা ভাই আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন? এই ধরণের কথা বার্তা দিয়ে শুরু করতে পারেন। এর সাথে নিজের পরিচয় দেয়াও দৃষ্টি আকর্ষণের একটা উপায় হতে পারে।

পাবলিক স্পিকিং

মূল বক্তব্য:
১. আপনার বক্তব্যের ধরন জানা। সাধারণত আমাদের বক্তব্যগুলো তিন ক্যাটেগরির মধ্যে পড়ে।
ক. শিক্ষামূলক বা তথ্যমূলক
খ. প্ররোচনা মূলক (persuasive ) মানে আপনি কাউকে আপনার মতে বা বিশ্বাসে আনতে চাচ্ছেন
গ. বিশেষ ধরনের উদযাপন, যেমন- পুরস্কার গ্রহণ বা প্রদান, বন্ধুর জন্মদিন, বাবার মৃত্যুর পর জানাজার আগ মুহূর্তে। প্রতিটা বক্তব্যের জন্য আলাদা আলাদা কাঠামো আছে।
২. গ্রহণযোগ্য তথ্য সূত্র উল্লেখ করতে হবে। যেমন ধরুন বলবেন- হংকংয়ের ইমেজ ফটোগ্রাফিক সার্ভিসেস থেকে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত কিশোর পারেখ-এর “BANGLADESH A BRUTAL BIRTH ” বইয়ে আমি এই ছবিটি দেখেছি। পারলে পৃষ্ঠা নম্বর ও উল্লেখ করবেন।
৩. ভাষা হতে হবে স্পষ্ট, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ ও কাঠামো হবে সুন্দরভাবে গোছানো।
৪. মাঝে মধ্যে শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা। যেমন- জিজ্ঞেস করতে পারেন এ বিষয়টায় আপনার কী মনে হয়? কম করে হলেও একজন শ্রোতার নাম লিখে রাখা ও তার নাম ধরে ডাক দিয়ে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করতে বলা।
শেষ:
আপনারা অনেকেই ভালো বক্তব্য দিয়ে কোনো উপসংহার না টেনেই শেষ করে দেন। পুরো বক্তব্যের একটা সারসংক্ষেপ দেয়া জরুরি। এর সাথে শেষ বাক্যটা এমন হওয়া উচিত যেটা শ্রোতা অনেক সময় মনে রাখবে।
বিবিধ:
১. পুরো সময়টার জন্য একটা কাঠামো লিখে ফেলা। কোনটার পর কোনটা বলবেন, কোনটায় কতটুকু সময় দেবেন ইত্যাদি।
২. চেষ্টা করুন শ্রোতা ও আপনার মাঝে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে। যেমন ধরুন, ডেস্ক বা টেবিলের অন্য প্রান্তে না থেকে, সামনের দিকে আসুন|
৩. কোনো কিছুতে হেলান দিয়ে দাঁড়াবেন না। হাতের তালু খোলা রাখুন।
৪. আপনার শ্রোতা কারা, এ সম্পর্কে ধারণা নিন।
৫. আলেমদের ওয়াজ শুনতে পারেন (আমার ব্যাক্তিগত মতামত)| আমি ৯টা ওয়াজ এনালাইসিস করেছিলাম, যার মধ্যে ভালো বক্তব্যের সবগুলো উপাদানই পরিপূর্ণভাবে পেয়েছি।
সূত্র : উপরের টিপসগুলো মূলত Joshua Gunn-এর Speech Craft বইয়ের সাহায্যে আমার করা একটা নমুনা (rubric)। যার ভিত্তিতে আমি স্টুডেন্টদর স্পিচ গ্রেড করি।

ভলান্টিয়ারিং কেন করবেন? কখন করবেন?

 


[প্রিয় পাঠক, আপনিও লিখতে পারেন ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সে। শিক্ষা, ক্যারিয়ার বা পেশা সম্পর্কে যে কোনো লেখা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন। পাঠাতে পারেন অনুবাদ লেখাও। তবে সেক্ষেত্রে মূল উৎসটি অবশ্যই উল্লেখ করুন লেখার শেষে। লেখা পাঠাতে পারেন ইমেইলে অথবা ফেসবুক ইনবক্সে। ইমেইল : [email protected]]

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top