ভালোলাগার কাজকে সফল ব্যবসায় রূপান্তরিত করবেন যেভাবে

লাবিবা ফারজানা::::::

আপনি কি অফিসের চার দেয়ালে বসে এই কর্পোরেট জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে পালিয়ে নিজের ব্যবসায় চালুর স্বপ্ন দেখছেন? আপনার মাথায় বিভিন্ন আইডিয়া খেলা করে কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না কিভাবে তা আপনার জীবিকায় পরিণত করবেন? সত্যি কথা বলতে কি আপনি একটু বেশিই চিন্তা করে ফেলছেন। দেখে নিন আপনার ভালোবাসাকে নতুনভাবে কাজে লাগানোর ৫টি টিপস।

. একসাথে শুরু করছেন নাকি ঝামেলা বাড়াচ্ছেন

বেশিরভাগ সময়ে, যখন নিজের ব্যবসায় শুরু করছেন তখন আপনার আগের পেশাটি ধরে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। যেহেতু নতুন প্রয়াসে ঝুঁকি থাকে বেশি এবং ভবিষ্যতও অনিশ্চিত, তাই আপনি নিশ্চই সব একসাথে হারাতে চান না! একেবারে সর্বস্ব নিয়ে শুরু করার আগে স্বল্প পরিসরে শুরু করলে আত্মবিশ্বাস, জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা বাড়বে। শুধুমাত্র প্যাশনের খাতিরে সব ছেড়ে বেড়িয়ে পড়লে খুব জটিল অবস্থায় পড়তে পারেন।

প্রয়োজনীয় সময় নিন। আপনার পণ্য বা সেবা বাজারে তোলার আগে বাজার যাচাই করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, আপনার আইডিয়া সত্যিই কোন কাজে লাগতে পারে বা সমাধান দিতে পারে। আপনাকে এমন কিছু দিতে হবে যা অপরিহার্য। এটা নিশ্চিত হতে হবে যে- আপনি যে সেবা দিচ্ছেন, মানুষ তার জন্য পয়সা খরচ করতে রাজি আছে।

শুরুতে শুধু রাতের বেলা আর ছুটির দিনে আপনার আইডিয়াগুলোকে সময় দিন। বুঝতে চেষ্টা করুন। ছোট পরিসরে শুরু করার সুবিধা হলো ব্যাপারটা আপনি উপভোগ করতে পারছেন কি-না তা বুঝতে পারবেন। আপনি নিশ্চয়ই এমন কিছুর পিছনে আপনার সারা জীবনের সঞ্চয়, আপনার পুরোটা সময় ব্যয় করতে চাইবেন না যেটাতে আপনি তেমন কোনো আনন্দই পান না।

শখের কাজ আর ব্যবসায়ের মূল পার্থক্য হলো- এর বিক্রি আর লাভে। তাই সময় নিন আর দেখুন আপনার ব্যবসায় আদতেই টেকসই কি-না।

. ব্যবসায়কে ব্যবসায়ের মতোই দেখুন

নিজের ব্যবসায় যখন শুরু করবেন তখন হয়তো ততটা গোছানো হবে না, মোটিভেশনটাও তত থাকবে না। ৯-৫টা অফিস কর্মীদের মতো উদ্যোক্তাদের কোন নিয়ম মানতে হয় না। তাদের কী করতে হবে বা কখন করতে হবে তা বলার মতো কেউ থাকে না। এ কারণেই ফোকাসটা ঠিক রাখা কঠিন। আপনি হয়তো বুঝে উঠতে পারবেন না কোন কাজকে কতটা গুরুত্ব দিতে হবে।

আপনার কাজকে শুরু থেকেই পেশাদারিত্বের সাথে পরিচালনা করুন। আর দশটা কাজের মতোই নির্দিষ্ট সময় ও লক্ষ্য ঠিক করুন। ক্লায়েন্ট বা কাস্টমারদের সাথে পেশাদারি আচরণ করুন। এজন্য আপনি HoneyBook বা 17hats-এর মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন। এই প্রোগ্রামগুলো আপনার কাজের গতি সচল রাখতে ও ক্লায়েন্টদের সাথে সহজে যোগাযোগ রাখতে সহায়তা করবে।

. একটিপ্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করুন

অতীতে একটা সময় ছিল যখন নিজের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করতে হলে একটি সত্যিকারের ইট-কাঠের জায়গা প্রয়োজন হতো। বিশেষ করে খুচরা পণ্যের ক্ষেত্রে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট স্থান বা জায়গার ব্যবস্থা করতে প্রয়োজন টাকার, যা ব্যবসায়ের শুরুতে খুব কষ্টকর হয়ে যায়। কিন্তু এখন এত রকমের সুবিধা রয়েছে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য যে, তারা কোনো রকম খরচ ছাড়াই বা খুব কম খরচেই তাদের নির্দিষ্ট ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে যেতে পারছেন।

এই অনলাইন টুলগুলো বিনা খরচে আপনার ব্যবসায় প্রসারিত করা থেকে শুরু করে নতুন ক্লায়েন্ট জোগাড় করা সব কিছুর সুবিধা দিচ্ছে সাধ্যের নাগালে। কিন্তু অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো খুব কম খরচেই পণ্য বিক্রি করার ব্যবস্থা। Etsy, Amazon, ShopifyEbay-এর মতো ওয়েবসাইটগুলো আপনার নিজস্ব ই-কমার্স সাইট ছাড়াই আপনার পণ্য বিশ্বব্যাপী বিক্রির সুযোগ করে দিচ্ছে। এছাড় দারাজ, আজকের ডিল, বিক্রয় ডটকমের মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আপনি দেশের বাজারেও পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।

৪. সাহায্য নিন

এখন অনেক অর্গানাইজেশনই নতুন উদ্যোক্তা বা ছোট ব্যবসাগুলোকে সাহায্য করে আসছে। যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপন করেছে। ব্যবসায়ের প্ল্যানিংয়ের উন্নয়ন, ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে সাহায্য, ঋণের ব্যবস্থা করা, মার্কেট রিসার্চ ইত্যাদি নানাবিধ কাজে সাহায্য করে। এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান খুঁজে নিতে পারেন।

স্টার্টআপ বা নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত কো-ওয়ার্কিং স্পেসের সুবিধা নেয়া। এতে করে দারুণ কাজের পরিবেশের পাশাপাশি অন্য সদস্যদের কাছ থেকে নতুন নতুন জিনিস শেখার ও সুবিধা পাবার সুযোগ থাকে।

৫. প্রচার করুন

যেহেতু আমরা আপনার পুরনো পেশার পাশাপাশি নতুন উদ্যোগ চালু করার প্রস্তাব দিচ্ছি, তাই পুরনো পেশার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নতুন উদ্যোগের কথাও প্রচার করতে হবে, যাতে নতুন ও নির্ভরযোগ্য ক্লায়েন্ট পান। আপনি হয়তো ভাবছেন – সহকর্মীরা জানতে পারলে আপনার পেশার প্রতি আপনার মনোভাব নিয়ে নেতিবাচক কিছু ভেবে বসেতে পারে। তাই প্রচারের সময় এটিও জানিয়ে দিতে ভুলবেন না যে- এটি স্রেফ একটি ‘সাইড-বিজনেস’।

একবার যখন সবাইকে বুঝাতে সক্ষম হবেন যে, এটি শুধুই একটি সাইড-বিজনেস, এবার সবাইকে আপনার উদ্যোগের কথা বিস্তারিত বলতে দ্বিধা করবেন না। হোক সে আপনার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা সহকর্মী। আপনার ইমেইল সিগনেচারে যোগ করুন, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করুন এবং সম্ভব হলে প্রেস রিলিজ তৈরি করে ফেলুন। যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে দ্রুত প্রচার করুন। কারণ, প্রচারেই প্রসার।

4 thoughts on “ভালোলাগার কাজকে সফল ব্যবসায় রূপান্তরিত করবেন যেভাবে”

    1. মো. বাকী বিল্লাহ

      অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ভাই মন্তব্যের জন্য।

Comments are closed.

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top