টেলিকমিউটিং : অফিসে না গিয়ে চাকরি

মো. বাকীবিল্লাহ

বিশ্বে প্রযুক্তির অব্যাহত সম্প্রসারণের ফলে গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসছে কর্পোরেট বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন আর ১০টা থেকে ৫টা অফিস নয়, বরং কর্মীদের সুবিধা ও উৎপাদনমূখী কাজের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে তারা । আপনি কোথায় বসে কাজ করছেন সেটির পরিবর্তে কতটুকু কাজ করলেন, আর যথাসময়ে করলেন কি-না সেটাই গুরুত্ব পাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে। তাই বিশ্বে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে টেলিকমিউটিং।
টেলিকমিউটিং হচ্ছে- এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে আপনি অফিসে না গিয়েই কাজ করতে পারেন।এখন সে কাজ আপনি করতে পারেন বাসায় বসে কিংবা বাড়ির কাছাকাছি কোনো জায়গা থেকে। যেমন – কফিশপ, লাইব্রেরি অথবা অন্য যেকোনো স্থান। মোটকথা অফিসে না গিয়ে সহকর্মী বা চাকরিদাতার সাথে টেলিফোন বা ই-মেইলে যোগাযোগ করে কাজ করার নাম হচ্ছে টেলিকমিউটিং।
এক্ষেত্রে কর্মীরা শুধুমাত্র মিটিং বা তাদের চাকরিদাতার সাথে দেখা করার জন্য অফিসে যান।বর্তমানে অফিসে না গিয়ে অন্য অনেকভাবেই যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। টেলিফোন, ইমেইল, ভিডিও কনফারেন্সসহ বিভ্ন্নি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে এ ক্ষেত্রে।

টেলিকমিউটিংয়ে অনেক স্বাধীনতা
টেলিকমিউটিংয়ে অনেক স্বাধীনতা পান কর্মীরা…

টেলিকমিউটিং কারা করেন

বাংলাদেশে টেলিকমিউটিং পদ্ধতি খুব বেশি বিস্তার লাভ করেনি।কিছু প্রতিষ্ঠানে এ পদ্ধতি চালু হয়েছে।তবে এখন পর্যন্ত কত সংখ্যক লোক এ পদ্ধতিতে কাজ করেন তার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। উন্নত দেশগুলোতে প্রচুর মানুষ টেলিকমিউটিং করেন। ফ্লেক্স জবস এবং গ্লোবাল ওয়ার্কপ্লেস অ্যানালাইটিকস সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০ লাখ চাকরিজীবী এভাবে কাজ করছেন। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের মোট কর্মজীবীদের ২ দশমিক ৯ ভাগ হয় সম্পূর্ণ ঘরে বসে অথবা আংশিকভাবে এ পদ্ধতিতে কাজ করছেন।
 প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ১১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৫ সালে ১.৮ মিলিয়ন লোক টেলিকমিউটিং করতেন।২০১৫ সালে এ সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৯ মিলিয়নে।
 টেলিকমিউটারদের ৫০ ভাগই ৪৫ বছর বয়সী বা তাদের চেয়ে বড়।
 আনুমানিকভাবে ৫৩ শতাংশের ব্যাচেলর ডিগ্রি রয়েছে।
 টেলিকমিউটারদের বার্ষিক আয় গড়ে চার হাজার ডলার; যা অফিসে কাজ করাদের চেয়ে বেশি।
 টেলিকমিউটারদের মধ্যে নারী ও পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান।
 পার্ট টাইম চাকরিজীবিদের চেয়ে ফুলটাইম চাকরিজীবীদের এ সুযোগ চারগুন বেশি।
 ২০১০ সালের চেয়ে ২০১৭ সালে এ ধরনের কাজের অফার ৪০ বেড়েছে ।

টেলিকমিউটিংয়ের সুবিধাসমূহ

টেলিকমিউটিংয়ের অনেক সুবিধা রয়েছে। এ পদ্ধতিতে একজন কর্মীদের অনেক স্বাধীনতা থাকে। ফলে একজন চাকরিজীবি তার অফিস ও ব্যক্তিগত বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের সুযোগ পেয়ে থাকেন।
অনেক ক্ষেত্রে বাসায় বসে কাজ আপনাকে বেশি কর্মক্ষম (productive) করতে পারে। কেননা এক্ষেত্রে অফিসের ঝঞ্ঝাটগুলো আপনাকে স্পর্শ করে না।

একজন চাকরিদাতার জন্যও টেলিকমিউটিং অনেক সুবিধার। কারণ এর মাধ্যমে একজন কর্মী অনেক বেশি কর্মক্ষম হয়, যেটা প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক। এ ধরনের কর্মীরা অন্য চাকরজীবীদের চেয়ে অনেক বেশি সুখী থাকে। ফলে কোম্পানিতে তারা অনেক দিন স্থায়ী হতে পারে। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে কোম্পানিগুলোর অফিস খরচ বেঁচে যায়।

২০১৯ সালের শেষের দিকে Zapier.com একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সেখানে দেখা যায়, ৭৪ শতাংশ মানুষ ওয়ার্কিং ফ্রম হোম সুবিধা পেলে তাদের বর্তমান চাকরি ছেড়ে দিতে চায়।

অফিসের তুলনায় বাড়িতে বসে কাজ করলে একজন কর্মী বেশি কাজ করতে পারেন। স্ট্যানফোর্ড গ্রাজুয়েট স্কুল অব বিজনেসের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথাগত অফিস ওয়ার্কের তুলনায় ওয়ার্ক ফ্রম হোমের মাধ্যমে ১৩ শতাংশ বেশি কাজ হয়। পাশাপাশি যারা রিমোর্ট ওয়ার্কিং করেন তারা তুলনামূলক কম অসুস্থতাজনিত ছুটি নেন। এছাড়া কর্মীরা তাদের কাজের জন্য পছন্দমতো সময় বেঁছে নিতে পারায় অল্প সময়ে বেশি কাজ করতে পারেন।

টেলিকমিউটিংয়ের অসুবিধা

যাই হোক টেলিকমিউটিংয়ের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রচণ্ড স্বপ্রণোদিত (self motivated) হতে হবে । নতুবা অলসতা পেয়ে বসতে পারে আপনাকে। এছাড়া আপনার একটি ভালো জায়গা দরকার যেখানে বসে আপনি কাজ করবেন। সে জন্য একটি ঘরোয়া অফিস বা কফি শপ দরকার হতে পারে।

অনেক সময় আপনি কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারেন। কারণ আপনার পাশে কোনো সহকর্মী নেই। সুতরাং যখন আপনি এ ধরনের কাজ বাছাই করবেন তখন অবশ্যই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক ভেবে নিন।

টেলিকমিউটিং
একজন চাকরিজীবি তার অফিস ও ব্যক্তিগত বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের সুযোগ পেয়ে থাকেন টেলিকমিউটিংয়ে…

টেলিকমিউটিং করা যায় এ ধরনের কিছু কাজ

আগেই বলেছি বাংলাদেশে এ পদ্ধতি বিস্তার লাভ করেনি। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান এ ধরনের সুযোগ আপনাকে দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- সেলস, কাস্টমার সেবা ও মার্কেটিং। তাছাড়া প্রযুক্তি-সম্পর্কিত অনেক চাকরি আপনি পেতে পারেন। যেমন – কম্পিউটার ও সফটোয়্যার প্রগ্রামিং। এছাড়া চিকিৎসা ক্ষেত্রের কিছু চাকরি আপনি ঘরে বসে কাজ করতে পারেন। কিছু কাজের কথা নিচে উল্লেখ করা হলো-
 অ্যাকাউন্ট্যান্ট, বুককিপার
 অডিটর, অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
 কম্পিউটার প্রোগ্রামার
 সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
 ডাটা এন্ট্রি
 গ্রাফিক ডিজাইন, ইলাস্ট্রেশন
 বীমা প্রতিনিধি
 মার্কেটিং
 আইন পরামর্শক
 জনসংযোগ কর্মকর্তা ও বক্তব্য লেখক
 গবেষক, বাজার গবেষণা বিশ্লেষক
 বিক্রয় প্রতিনিধি, গ্রাহকসেবা প্রতিনিধি
 টেলিমার্কেটার, টেলিফোনে অর্ডার সংগ্রাহক
 অনুবাদক
 ওয়েবমাস্টার, ওয়েব ডিজাইনার
 লেখক, প্রতিবেদক, সম্পাদক
 অনলাইন কোর্স ইনস্ট্রাকটর ইত্যাদি

কোম্পানির কাছে টেলিকমিউটিংয়ের অফার

প্রথমে আপনি আপনার নিজের প্লান তৈরি করুন। আপনি কি ফুলটাইম কাজ করতে চান নাকি পার্ট টাইম? এরপরে আপনাকে সুযোগ দিলে প্রতিষ্ঠান কিভাবে লাভবান হবে সে সম্পর্কে স্টাডি করুন। এরপর বুঝেশুনে কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দিন। যাতে তাদেরকে আপনি টেলিকমিউটিংয়ের উপকারিতা বোঝাতে সক্ষম হন।

এ ধরনের কাজ কিভাবে পাবেন

আপনি বিভিন্ন চাকরির ওয়েবসাইট দেখতে পারেন। তবে বাংলাদেশ এ সুযোগ অনেকটাই কম। কারণ আমাদের দেশে বিষয়টি খুব বেশি আলোচিত হয়নি। তাছাড়া এর উপকারিতা সম্পর্কেও অনেক চাকরিদাতা সচেতন নন। এর বাইরে আপনি যখন এ সুযোগ পাবেন, তখন আপনার সহকর্মীরাও এ ধরনের সুযোগ পেতে চাইতে পারে। ফলে প্রতিষ্ঠানে নানামুখী সমস্যা তৈরি হতে পারে।
এরপরও আপনি যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হন তাহলে এ সুযোগ পেয়েও যেতে পারেন।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক, ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স

[প্রিয় পাঠক, টেলিকমিউটিং অামাদের দেশে কতটা কার্যকর হবে বলে মনে করেন? জানান মন্তব্যে…]

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top