ক্যারিয়ারে সফলতার ১০ স্বর্ণালি নিয়ম

ক্যারিয়ারে সাফল্যের ১০টি স্বর্ণালি নিয়ম

লাবিবা ফারজানা:::::::::

ক্যারিয়ারে সাফল্য সবাই পেতে চায়। আর এ সাফল্য লাভের আছে অনেক পথ। আছে অনুসরণ করার মতো অনেক দক্ষতাও। কিন্তু সব সফল ব্যক্তিত্বের মধ্যে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর তা হলো- পরিস্থিতিভেদে সবাই কিছু ভালো অভ্যাস প্রতিদিন অনুসরণ করেন। এটিই তাদের ব্যক্তিত্ব নিরূপণ করে ও সফলতার দিকে নিয়ে যায়। প্রতিদিন একই রুটিন মেনে চলার কারণে প্রভাব পড়ে সময় ব্যবস্থাপনায়। আর এটা এনে দেয় কাঙ্খিত সাফল্য।

=====
লেখাটি অবাস্তব কোনো তত্ত্বকথা নয়। খুবই ছোট ছোট কয়েকটি বিষয়, যা লক্ষ্য রাখলে ক্যারিয়ারে সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ। লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন, ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করুন।
=====

১. ছোট ছোট সফল অভ্যাস

আপনার অসীম ইচ্ছাশক্তি বা মানসিক শক্তি নেই। স্বল্প সময়ের মধ্যে বেশি সিদ্ধান্ত নিতে গেলে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাই হ্রাস পেতে পারে। তাই খুটিনাটি বিষয় নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। এই যেমন – অ্যাপলের স্টিভ জবসের কথাই ধরুন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি শুধু কালো টার্টলনেক শার্ট ও নীল জিন্স পড়তেন। এতে করে প্রতিদিন কোন পোশাক পড়তে হবে- এরকম তুচ্ছ বিষয়ে সময় নষ্ট না করে নিজের সময়ের কাজে লাগাতে পেরেছিলেন। ছোট ছোট ইতিবাচক পরিবর্তন আনুন জীবনে, এক মাস তা মেনে চলুন এবং দেখুন তা কিভাবে আপনার ব্যবহারে পরিবর্তন আনে ও অভ্যাসে পরিণত হয়। কোনো একটি বড় কাজ হাসিলের চেয়ে ছোট ছোট সফল অভ্যাস আপনার সাফল্যকে আরো বেশি বেগবান করবে।

২. শিখুন এবং শিখতে থাকুন

জ্ঞান ও দক্ষতা আপনার উপার্জনে সাহায্য করবে। সাহায্য করবে আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্যে পৌঁছাতে। সুতরাং জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোই আপনার প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত। তার জন্যে শিক্ষা গ্রহণ করতে শিখুন। নিজেকে এমনভাবে তৈরি করুন যেন আপনি মুখের উপর সমালোচনা কোনো রকম প্রতিক্রিয়া ছাড়াই নিতে পারেন। যাদের সাথে জীবনে দেখা হবে, সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু শিখুন। প্রতিদিন পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। একজন বিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা খুঁজে বের করুন। নতুন নতুন দক্ষতা অর্জনের প্রতিটি সুযোগ গ্রহণ করুন। নিজের গতদিনের ব্যক্তিত্বের চেয়ে আরো উপরে ওঠার সংকল্প করুন।

৩. নিজের শক্তি বাড়ান

বিজ্ঞানের ছাত্র মাত্রই আপনাকে বলে দেবে শক্তি দিয়েই সব কাজ সমাধা করা যায়। সুতরাং, আপনি যত শক্তি কাজে লাগাবেন ততই আপনার কার্যসিদ্ধি হবে। আর শক্তি বাড়াতে হলে আপনাকে নিজের শরীর ঠিক রাখতে হবে। নিয়মিত সঠিক খাদ্য গ্রহণ করুন আর শরীরচর্চা করুন। আবেগের মাধ্যমে আপনার শক্তিকে শিখরে নিয়ে যান। আপনার পরিবার, বন্ধু বা শখকে সময় দিন। এতে আপনার শেখার ক্ষমতা, জ্ঞান ও মানসিক শক্তি বাড়াতে থাকবে।

৪. এই গুণটি অর্জন করুন

আপনার আচরণ আর মনোভাবই হলো আপনার সেই বীমা, যা আপনাকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং তা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন- আপনি যদি নিজেকে একজন তারকা সেলস পারসন মনে করেন এবং অন্যদের সাথে খারাপ বা রূঢ় ব্যবহার করেন এই ভেবে যে, কোম্পানির আপনাকে খুবই দরকার, তাহলে ভুল করছেন। কারণ পরিস্থিতি বদলাতে সময় লাগে না। তখন আপনাকে সরিয়ে আরেকজন ভালো মনোভাবসম্পন্ন ব্যক্তিকে আপনার পদে বসানো হতে পারে। তখন কিন্তু আপনি হয়ে পড়বেন একা।

৫. বড় সন্তুষ্টির জন্য বর্তমানের ছোট সন্তুষ্টি বর্জন

খুশি বা আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা করা বাতুলতা। স্ট্যানফোর্ড মার্শম্যালো এক্সপেরিমেন্ট প্রমাণ করে যে- যারা ভবিষ্যতের বড় সন্তুষ্টির জন্য বর্তমানের ছোট ছোট খুশি বা সন্তুষ্টিগুলোকে সরিয়ে রাখে, তারা জীবনে সফল হয় বেশি। অবশ্য বর্তমানের ছোট সন্তুষ্টিকে তখনই কোনো পরিশ্রম ছাড়া দূরে ঠেলে দেয়া সম্ভব যখন আপনার ক্যারিয়ারের আরো বড় কোনো উদ্দেশ্য থাকে। শুধুমাত্র উপার্জনকেই আপনার উদ্দেশ্য না ধরে, আরো বড় কিছুকে লক্ষ্য বানান। এটি আপনাকে আরো সফল হতে, আরো বড় কিছু হাসিল করতে উৎসাহ দেবে।

৬. যোগাযোগ স্থাপন করুন

অন্যদের সাথে যোগাযোগ বাড়ান। আপনি অন্তর্মুখী না বহির্মুখী তাতে কোনো কিছু যায় আসে না। যখনই আপনি কোনো কিছু বুঝতে পারবেন না, প্রশ্ন করুন। আপনার ম্যানেজারকে তার সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ দিন। আপনার কর্মদাতার কাছে শুধু নিজের কাজ না, নিজেকেও বিলিয়ে দিন। কেউ যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করলে কোনো রকম বিবেচনা ছাড়াই শুনুন। যখন প্রয়োজন আপনার, তখন চুপ থাকতে শিখুন।

৭. জীবনের ভিন্ন ভিন্ন অংশগুলোকে আলাদা রাখতে শিখুন

অবশ্যই আপনার জীবন বহুমুখী। কিন্তু সফলতা পেতে হলে বর্তমানে বাঁচতে হবে। কাজ ও পরিবারকে আলাদা রাখুন। আপনার জীবনের এক অংশের হতাশা অন্যটিতে নেবেন না। ঠিক একইভাবে, পরিবার আর সহকর্মীদেরও আলাদা রাখুন। তাদের সাথে ভিন্ন ব্যবহার করুন। প্রতিষ্ঠানের কাজের সময় ব্যক্তিগত কাজ করবেন না। নিজের কাজ ও অফিসের দায়িত্ব গুলিয়ে ফেলবেন না। এক বাক্সের রঙ অন্য বাক্সে গেলে সবটা হারিয়ে ফেলবেন কিন্তু।

৮. কাজ করুন সঠিক উপায়ে

আপনি তো সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন যে, কঠোর পরিশ্রম করবেন। কিন্তু আপনি কি জানেন কখন ও কোথায় কঠোর পরিশ্রম করবেন? যেখানে আপনার জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ার সুযোগ আছে সেই জায়াগাগুলোতে যখনই কোনো সুযোগ পান সঠিক সময়ে নিজের প্রয়াস দিন।

৯. সময়ের আগেই পৌঁছে যান

কাজ বা মিটিংয়ে সবসময় ১৫ মিনিট আগে পৌঁছানোর অভ্যাস করুন। এই অতিরিক্ত সময়টুকু যে, শুধু বিপদে কাজে আসবে তা না। এই জাদুকরি ১৫ মিনিট আপনার মনকে সঠিক পথে এনে দেবে। তাছাড়া এই ১৫ মিনিট আপনাকে অন্যদের থেকে অনেক বেশি সম্ভাবনা ও সুযোগের পথে এগিয়ে দেবে।

১০. আপনার প্রধান দায়িত্ব সম্পাদন করুন

আপনি হলেন আপনার প্রথম দায়িত্ব। তাই প্রথমে আপনার নিজের সফল ভবিষ্যতের জন্য কী বা কাদেরকে প্রয়োজন তা নির্ধারণ করুন। এরপর, সেই লক্ষ্যে কী কী করতে হবে তা নির্ধারণ করুন। এই কাজগুলোকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করুন। যখন একবার আপনি নিজেকে সাহায্য করার দায়িত্ব নিয়ে ফেলবেন, তখন আপনি নিজের সাথে সাথে অন্যদেরকেও সাহায্য করতে সক্ষম হবেন।

তথ্যসূত্র : ইকনোমিক টাইমস

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top