হাতে নেই কাজ!

Home-Office

সৈয়দ আখতারুজ্জামান

আপনি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা অধিকর্তা যা-ই হোন না কেন, ভালো করে লক্ষ করুন- অফিসের সবাই কি কাজ করছেন? আসলে কেউ কেউ কাজের চাপে নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন না। আবার কেউ কাজের অভাবে ফেসবুক ঘেটে সময় কাটাচ্ছেন। কেন এমন হচ্ছে? এমন অবস্থায় আপনি পড়লে কী করবেন? রইল দশ সমাধান।

এক.
হাতে কাজ নেই! আসলে কাজ আছে, আপনি খুঁজে পাচ্ছেন না বা সাময়িক পরিস্থিতিতে বুঝতে পারছেন না। আবার মনে পড়লেই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। এই ধরুন, নিজের এলোমেলো ডেস্ক বা নথিপত্র গোছানোও তো একটা বড় কাজ।

দুই.
আপনাকে একটু সময় নিয়ে ভাবতে হবে অথবা পরিকল্পনা করতে হবে। এই পরিকল্পনা খুব সহজ হবে, যদি কাজগুলোর একটা তালিকা থাকে। কাজের তালিকা তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ গুণের একটি। সুতরাং কাজের তালিকা তৈরি করা শুরু করুন। ছোট, বড়, মাঝারি- সব ধরনের কাজ।

তিন.
কাজের তালিকা তৈরি করার মতো একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার পর এই কাজগুলো সাজানো দরকার। কোন কাজটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কোন কাজটি এখন না করলেও চলবে, কোন কাজটি এড়িয়ে যাওয়া যায় ইত্যাদি নানা রকম বিবেচনায় কাজগুলোকে ক্রমান্বয়ে সাজাতে পারতে হবে। ফলে কাজের এই গোছানো তালিকা থাকার পরও আপনার কর্মহীন হওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে যাবে।

চার.
এমনকি আপনার হাতে যখন কাজ থাকে না, তখন কাজ খোঁজাও একটা কাজ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন আগামীকাল বা আগামী সপ্তাহে যে কাজগুলো করতে হবে, তার তালিকা করাও তো একটা বড় কাজ। এর জন্য শুধু প্রয়োজন আপনার সচেতনতা আর সদিচ্ছা।

পাঁচ.
কাজ খুঁজতে জানাও একটা বড় যোগ্যতা। এই যোগ্যতা না থাকলে ভালো দলনেতা বা বস হওয়া খুবই কঠিন। দলকে কর্মরত রাখা সহজ কাজ নয়। দক্ষ দল নিমেষে কাজ শেষ করে দলনেতার দিকে মুখ তুলে তাকায়। দলনেতার হাতে তখন কাজ না থাকলে দল ঝিমিয়ে পড়বে। সুতরাং যখন দেখবেন হাতে কাজ নেই, তখনই কাজের নতুন তালিকা তৈরিতে লেগে যাবেন। শিখতে হবে শূন্য আর ঝিমিয়ে পড়া পরিস্থিতিকে কিভাবে কর্মকাণ্ডে সতেজ করা যায়।

ছয়.
অনেক ছোট ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, যা সহজে চোখে পড়ে না। যেমন অফিসের স্বার্থেই বহু দিন কথা হয় না এমন কারো সঙ্গে কথা বলে আবার সম্পর্কটাকে ঝালাই করাও একটা বড় কাজ। আবার আপনার হাতে কাজ নেই, কিন্তু আপনার পাশের সহকর্মীটি হয়তো কাজের চাপে পিষ্ট হচ্ছে। তাকে সাহায্য করাও তো আপনার কাজ, নইলে আর সহকর্মীর সহমর্মী কী করে হবেন? এমন হাজারো কাজ করার আছে। শুধু কাজ করার উদ্যমটুকু চাই।

সাত.
অনেক কাজ আছে, যা ঢাকঢোল পিটিয়ে হয় না। নিভৃতে এগিয়ে চলে। এক সময় শেষও হয়ে যায়। যেমন আপনার অথবা আপনার বিভাগের কী কী সমস্যা আছে, সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় তার তালিকা করে, পরামর্শ লিখে আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করতে পারেন। প্রমাণ করতে পারেন, আপনি গতানুগতিক কাজের বাইরেও আপনার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন।

আট.
আপনার হাতে কাজ নেই, আপনার বসকে জানান। তিনি হয়তো কোনো অসমাপ্ত কাজ নিয়ে ভাবছেন, তাঁকে সাহায্য করুন। এতে যেমন আপনার দায়িত্বপরায়ণতার প্রমাণ হবে, তেমনি আপনাকেও কর্মহীন হয়ে থাকতে হবে না।

নয়.
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক লক্ষ করুন। আপনার দক্ষতার উন্নয়ন ছাড়া আপনার পেশাগত উন্নতি কি সম্ভব? অথচ আমরা সবাই এতটাই অফিসে দৈনন্দিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি যে নিজের দক্ষতা বাড়ানো কিংবা অর্জিত দক্ষতা ধরে রাখার জন্য করণীয় কাজগুলো করার ফুরসত পাই না। অর্জিত দক্ষতা ধরে রাখা কত কঠিন যিনি হারিয়েছেন তিনিই জানেন। ফলে যখন হাতে কাজ নেই তখন আপনার পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে কিছু কাজ করুন। বই পড়ুন, কিছু লিখুন, কিছু চর্চা করুন, প্রেজেন্টেশন রিহার্সাল করুন, সেলস কলের রোল প্লে করুন, বিগত মাসিক বা বার্ষিক প্রতিবেদনগুলো পড়ুন, পেশাসংক্রান্ত আইনের বই পড়ুন, এমনি অনেক কাজ আপনি করতে পারেন, যদি আগ্রহ হারিয়ে না ফেলেন।

দশ.
এত কিছু বলার পরও শেষ কথা বলে কিছু থেকে যায়। সব সময় কাজ করতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। কিছু কিছু সময় থাকে যখন চিন্তামগ্ন থাকাই কাজ, ভাবুন আপনার কাজ, অতীত, ভবিষ্যৎ, সহকর্মী ইত্যাদি নিয়ে। এক কাপ চা পান করুন। একটু বিশ্রাম করুন, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলুন। চট করে প্রিয় কাউকে একটু ফোন করে নিন, বাসার খোঁজ নিন। এও তো কাজের অঙ্গ, যা আপনাকে নিশ্চিন্ত করে, স্বস্তি দেয় এবং পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুত করে তোলে!

সূত্র : কালের কণ্�

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top