‘যতদিন বেঁচে থাকবো কাজ করে যাব’

এম এ কালাম; অধ্যক্ষ, গুলশান কমার্স কলেজ

আসমা বিনতে সালাহউদ্দিন

সৃজনশীল পদ্ধতি চলবে কী করে? শিক্ষকরাই তো সৃজনশীল না। আর আমাদের দেশের পরিবেশে এ ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য আগে পরিবেশটাকে বদলাতে হবে। কথাগুলো শেরেবাংলা স্বর্ণ পদক পাওয়া, গুলশান কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ এম এ কালামের। কথা হচ্ছিল তার গুলশানের কার্যালয়ে। কমার্স পাবলিকেশন্সের কিছু বইয়ের কাজ করার সুবাদে পারিচয় হয়েছিল এই শিক্ষকের সাথে।

এক ছাত্র এসেছে ভর্তি হতে। ভর্তি  ফি দিতে সমস্যা হচ্ছিল তার। কর্তৃপক্ষের কাছে ফি কমানোর আবেদন করেছিল সে। কর্তৃপক্ষের উত্তর ছিল- টাকা না থাকলে গার্মেন্টেসে গিয়ে কাজ করো। অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন।

কিরে বাবা, না খেয়ে না খেয়ে শুধু তো লম্বা হচ্ছিস- কথার শুরুটা ছিল এরকমই আন্তরিকতা আর হৃদ্যতাপূর্ণ। এত ব্যস্ততার মাঝেও কথা বলার ঢঙই বলে দেয়, অনেক ওপরের তলায় উঠেও মাটির কাছেই রয়ে গেছেন তিনি।

কথা প্রসঙ্গে উঠলো তার সাফল্যগাথা। জানতে চাইলাম এই সাফল্যের রহস্য কী? বললেন- কাজ করেছি মন থেকে, নিজের ইচ্ছা থেকে। শুরুতেই পেয়ে যাইনি সব। অনেক কষ্ট, পরিশ্রম, মানুষের সহযোগিতা, দোয়া আর অনেক অনেক আগ্রহের ফসল এগুলো।

এত বড় প্রজেক্ট করার ইচ্ছার শুরুটা কোথা থেকে এবং কখন থেকে? এমন প্রশ্নের জবাবে বললেন- আমার জন্ম গ্রামে। বড় হয়েছি সেখানেই। খুব কাছ থেকে দেখেছি মানুষের কষ্টগুলো। পড়ালেখাটা একপেশে হয়ে গিয়েছিল তখন। গরীবদের জন্য কোনো সুযোগ ছিল না। অনেকটা ধনীদের সম্পদের মতো। সাহায্য করার কেউ ছিল না। ধনীরা এটাকে গারিবের ঘোড়া রোগ বলে আখ্যায়িত করতো। তখন থেকেই ইচ্ছা এর বিপরীতে কিছু একটা করার। একটা ঘটনার কথা বলি- বেশ পরিচিত একটা কলেজ তাই নাম বলবো না। শিক্ষক ছিলাম আমি সেই কলেজের। এক ছাত্র এসেছে ভর্তি হতে। ভর্তি ফি দিতে সমস্যা হচ্ছিল তার। কর্তৃপক্ষের কাছে ফি কমানোর আবেদন করেছিল সে। কর্তৃপক্ষের উত্তর ছিল- টাকা না থাকলে গার্মেন্টেসে গিয়ে কাজ করো। অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। প্রতিজ্ঞাটা শক্ত হয়েছিল সেদিন।

আর পাবলিকেশন্স? সেটাও আগের উত্তরের সাথে সংযুক্ত। অনেকেই দেখা যেত কোনোভাবে ভর্তি হতে পারলেও বই কিনতে পারত না। সেই থেকে বইটাকে সহজলভ্য করার চেষ্টা। এছাড়া, তখনকার সময়ে ডিগ্রি পর্যায়ে বাংলায় কোনো বই ছিল না। এটা একটা বড় সমস্যা ছিল সাধারণ ছাত্রদের জন্য। এসব থেকে বের হওয়ার একটাই উপায় বলে মনে হয়েছে আমার- পাবলিকেশন্স।

ইচ্ছাগুলো তো সফল হলো। এখন কী ভাবছেন?
আংশিক সফল তো বটেই। তবে পুরোপুরি সফল বলা যায় না এখনো। আরো কিছু কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে।
কি সেগুলো?
ইচ্ছা আছে, একটা হাসপাতাল আর এই গুলশান কমার্স কলেজটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের।

প্রথম প্রকাশিত বই সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন- আমার প্রথম বই, Accounting Father। প্রকাশিত হয়েছে ১৯৯৩-এ। তখন আমি কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স দিয়েছি। বইয়ের নাম শুনে অনেকেই অনেক কথা বলেছিল। অনেক ব্যঙ্গ, বিদ্রুপও হয়েছিল। কিন্তু দেখো, সে বই-ই আমাকে এনে দিয়েছে সফলতা। নিয়ে এসেছে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে।

আপনি তো এখন অধ্যক্ষ। বর্তমান শিক্ষকদের ব্যাপারে আপনার কী অভিব্যক্তি?
দেখো, শিক্ষকেরা যে কিছু শেখাবে সেই আন্তরিকতাই নেই এখন। দু’একজন ছাড়া সবাই শুধু কোচিং আর প্রাইভেট নিয়েই ব্যস্ত। এদিকে বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি হচ্ছে, সৃজনশীল। নিঃসন্দেহে ভালো একটি পদ্ধতি। কিন্তু এর প্রয়োগ হচ্ছে না ঠিকভাবে। আমাদের দেশের পরিবেশ এখনো এর উপযোগী হয়ে ওঠেনি। তাই এর সুফল পাচ্ছি না আমরা। সুফলের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন, শিক্ষকদের সৃজনশীলতা। তা না হলে এর সুফল কখনোই পাবো না আমরা। অন্যদিকে রয়েছে ছাত্রদের আগ্রহের ব্যাপার। এখানকার ছাত্ররা সবক্ষেত্রেই শর্টকাট খোঁজে। শেখার আগ্রহটাই নেই। আমরা যখন পড়তাম শিক্ষকদের আন্তরিকতা তো ছিলোই; আমাদের জানার আগ্রহেরও কমতি ছিল না।

অনেক্ষণ কথা হলো। সব তো ভালোই চলছে। কিন্তু, আপনার শারীরিক অবস্থা তো খারাপ। শুনলাম, সেদিন নাকি কলেজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন? আবার জ্ঞান ফিরতে না ফিরতেই কাজও শুরু করে দিয়েছিলেন?
মেয়ের অভিযোগে বাবা যেমন বোকা বোকা হাসি হাসেন তেমনি হেসে জবাব দিলেন, কেউ চিরদিন বেঁচে থাকে নারে বাবা! যে দিন আল্লাহ বলবেন, STOP সেদিন থামতেই হবে। যতদিন বেঁচে থাকবো, কাজ করে যাব। দোয়া করো যেন, কাজগুলো শেষ করে যেতে পারি। আর আমার মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে বোলো, যেন আমাকে মাফ করে দেন।

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top