কর্মজীবী পুরুষদের জন্য কিছু টিপস : ২

অনেকে মনে করেন রুপচর্চা ও পরিপাটি সাজগোজ শুধু মেয়েদের জন্যই প্রযোজ্য। ফলে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ শরীরের নিয়মিত যত্ন নেয়া বা সাজানো গোছানো চলাফেরার ব্যাপারে অনেক পুরুষেরাই উদাসীন। কাজকর্মের ক্ষেত্রেও অনেককেই দেখা যায় বেশ অগোছালো। অনেকেই আবার শরীরের যত্নের প্রতি অবহেলা ও অসচেতনতার কারনে আশে পাশের মানুষজনদের কাছে হয়ে যান বিরক্তির পাত্র। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নারীদের থেকে বরং পুরুষদেরই আরো অনেক বেশি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। কারণ তাদেরকেই ঘরের বাইরে ঘোরাফেরা করতে হয় তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই নগ্ন ত্বকে রোদ-বৃষ্টিসহ রাস্তার ধূলাবালি আর নানা ধরনের রোগ-জীবাণুর সরাসরি সংস্পর্শের ক্ষতিকর প্রভাবটা পুরুষদের ওপরেই পড়ে বেশি। তাই শারীরিক সুস্থ্যতা অর্জনের জন্য যেমন প্রয়োজন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখা, তেমনি নিজের পোশাক ও চলাফেরায় পেশাদারী মনোভাব সুস্পষ্ট করার জন্যই প্রয়োজন সঠিক ও পরিপাটি সাজগোজ ও অভ্যাস।
এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই যে টিভি মডেল বা ফ্যাশন তারকাদেরই শুধু দেখতে সুন্দর হতে হবে। সব পেশার ক্ষেত্রেই দেখতে সুন্দর, গোছানো ও কাজকর্মে পরিপাটি হওয়াটা একটা বাড়তি গুণ হিসেবে কাজ করে। কথায় আছে ‌’পয়লা দর্শনধারী, তারপর গুণবিচারী’। বলা তো যায় না, আপনার মার্জিত চলাফেরা ও কাজকর্মের কারণে হয়তো একটু তাড়াতাড়িই হয়ে যেতে পারে আপনার পেশায় কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি।
এখানে পেশাদারি মনোভাব বৃদ্ধিতে সহায়ক কিছু টিপস দেয়া হলো-

কর্মক্ষেত্রে থাকাকালে………..

১. একটানা দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ফলে ক্লান্তি আসতে পারে। কর্মক্ষেত্রে ক্লান্তি দূর করার জন্য কিছুক্ষণ পরপর হাত-মুখ ধুয়ে আসতে পারেন।

২. লাঞ্চ বা ডিনারে অনেক বেশি করে ভাত খাবেন আর সারাদিন তেমন কিছু খাবেন না, এই অভ্যাস বাদ দিয়ে কাজের ফাঁকে ফাঁকে সারাদিনই অল্প অল্প করে স্বাস্থ্যকর কিছু খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। প্রয়োজনে কিছু খাবার সঙ্গে রাখতে পারেন। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে বাইরের ভাঁজা-পোড়া খাবার বা ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বাদ দেয়াই ভালো।

৩. সঙ্গে পানির বোতল রাখুন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। শরীর অনেকটা সতেজ থাকবে।

৪. লোকজনের সাথে কথা বলার সময় তার মুখের একেবারে কাছে গিয়ে কথা বলবেন না। নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে কথা বলুন।

৫. কর্মক্ষেত্রে মোবাইল ফোন সাইলেন্ট বা ভাইব্রেট মোডে রাখুন। কর্মক্ষেত্রে মোবাইলে ব্যক্তিগত কথা বলা থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকুন। দরকারি কথা কাজের ফাঁকেই সেরে ফেলুন।

৬. অফিসের পিসিতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেও অফিস টাইমে ফেইসবুক ব্যবহার, ইন্টারনেটে চ্যাটিং ইত্যাদি না করাই উচিত।

৭. অফিসে অযথা উচ্চস্বরে বা শব্দ করে হাসতে হাসতে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। এতে অফিসের পরিবেশ নষ্ট হয়, আপনার ব্যক্তিত্বের প্রতিও সহকর্মীদের ধারণা খারাপ হয়।

৮. কর্মক্ষেত্রে এবং কর্মক্ষেত্রের পোশাক পরিহিত অবস্থায় চলার পথে সহকর্মী ও অপরিচিতদের সাথে সবসময় ভদ্র ও মার্জিতভাবে কথা বলুন। কারো কথা শুনে না বুঝেই হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে যাবেন না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। সে কী বললো তা ভেবে দেখুন এবং তার সাথে সংযতভাবে আলাপ করুন। অফিসের পোশাক পড়ে বাইরে চলাফেরার সময় অপরিচিত লোকদের সাথে অযথা কথা বলতে না যাওয়াই ভালো।

৯. কর্মক্ষেত্রে তো নয়ই, বরং অফিসিয়াল ড্রেস পরিধান করে কর্মক্ষেত্রের বাইরেও সিগারেট বা যে কোনো ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করবেন না।

১০. আশেপাশের মানুষের কাছে অন্যের নামে বদনাম করার অভ্যাস ত্যাগ করুন। এতে আপনার উপরেই সবার ধারণা খারাপ হবে।

১১. বাইরে বা কর্মক্ষেত্রে কিছু খেতে হলে খাওয়ার আগে পেপার সোপ দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে পারেন। পেপার সোপ খুব সহজেই বহন ও ব্যবহারযোগ্য এবং দামেও সস্তা। একটি পেপার দিয়ে একবার হাত ধোয়া যায়। এরকম দশটি পেপার মানিব্যাগের ভাঁজে অনায়াসেই রেখে দেয়া যায়। এটি নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে পাওয়া যাবে।

কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে……
১. বাইরে থেকে ফেরার পর ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলুন। এতে রাস্তার ধুলাবালি সরে গিয়ে চেহারায় একটা সতেজ ভাব আসবে। বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের জেন্টস্‌ ফেইসওয়াশ পাওয়া যায়। যে কোনোটা ব্যবহার করতে পারেন।

২. বাইরে চলাফেরার ফলে বাসের সিট, সিড়ির হাতল, টাকা ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গা থেকে এমনকি হ্যান্ডশেকের ফলেও হাতের স্পর্শের মাধ্যমে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই বাইরে থেকে ফেরার পর হাত দিয়ে কোনো কিছু খাওয়ার আগে অবশ্যই জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

৩. শুধু সকালে নয়, রাতে ঘুমাবার আগেও অবশ্যই ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করুন। অনেকেই এটা ভুলে যান। কিন্তু এটার গুরুত্ব আরো অনেক বেশি। মুখের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই থাকে জিহ্বায়। তাই দাঁতের পাশাপাশি জিহ্বা পরিষ্কার করাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। জিহ্বা পরিষ্কার করার জন্য আলাদা ব্রাশ পাওয়া যায়। সেগুলো কিনতে পারেন। আবার অনেক ব্রাশে দেখা যায় ব্রাশটির যেপাশে ব্রিসল আছে তার অপর পাশে খাঁজকাটা থাকে। দাঁত ব্রাশ করার সময় ঐ খাঁজকাটা অংশ দিয়ে ঘষে ঘষে জিহ্বা পরিষ্কার করে নেয়া যায়। তাই ব্রাশ কেনার সময় ব্রিসলের অপর পাশে সেরকম খাঁজকাটা আছে কিনা তা দেখে কিনতে পারেন।

আরো কিছু টিপস……
১. ব্যবসা বা অফিসের প্রয়োজনে বা ভিজিটিং কার্ডে ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার ব্যবহার না করাই ভালো। সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে আলাদা একটি মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করতে পারেন।

২. নিজেকে জানতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে নিয়মিত মেডিটেশন বা ধ্যান করতে পারেন। এক্ষেত্রে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াটা খুব ভালো ধরনের একটি ধ্যানের কাজ করে। এছাড়াও মেডিটেশনের অনেক বই পাওয়া যায় বাজারে।

৩. প্রতিদিন সংবাদপত্র আর টিভির খবর ছাড়াও ক্যারিয়ার বিষয়ক ম্যাগাজিনগুলো নিয়মিত পড়বেন। এতে আপনি বিভিন্ন পেশা সম্পর্কে সুষ্পষ্টভাবে জানতে পারবেন যা আপনাকে হালনাগাদ রাখবে এবং আপনাকে আপনার পেশার সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

৪. খাওয়ার পর রাতে অন্তত ২-৩ কি:মি: হাটার অভ্যাস করুন। এতে শরীর অনেক ভালো থাকে।

৫. কর্মক্ষেত্রে যাওয়া আর আসার পরিশ্রমটুকুকেই যথেষ্ট মনে না করে বাড়তি কিছু পরিশ্রম করার অভ্যাস করুন। প্রতিদিন নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা উচিত।

৬. সপ্তাহ শেষে বা অন্তত মাসে একবার বিনোদনের জন্য একটা দিন রাখুন। এতে গদবাঁধা পেশাজীবনের প্রতি একঘেয়েমী দূর হয়। সহকর্মী বা ব্যবসায়িক সঙ্গীদেরকে নিয়ে ভ্রমণ বা পিকনিকে যেতে পারেন।

লেখক :
মো: নাজমুল হাসান নাহিদ
জাবি প্রতিনিধি, ক্যারিয়ার ইন্টেলিজেন্স

1 thought on “কর্মজীবী পুরুষদের জন্য কিছু টিপস : ২”

  1. Md. Khairul Islam

    Thanks Mr. Nazmul Hasan Nahid bhai for your guide line. It is effective idea for any kind of service holders.

Comments are closed.

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top