প্রফেশনাল জীবনে নতুনদের জন্য

শিক্ষাজীবন শেষ করে যারা কর্মজীবনে নতুন প্রবেশ করেছেন, তাদের অনেকই তাদের কর্মজীবনের পরিবেশ সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে ওয়াকিবহাল নয়। অনেকেই বুঝতে পারেন না, অফিসে গিয়ে ঠিক কী ধরনের ব্যবহার করতে হবে। আবার অফিসে ঠিকমত আচরণ না করতে পারলে পেশাগত জীবনে অনেক ঝক্কিও সহ্য করতে হতে পারে। তাই অফিসের কায়দা-কানুন ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। নতুন চাকুরি জীবনে যারা প্রবেশ করেছেন, অফিসের পরিবেশের সাথে তাদের মানিয়ে নেওয়ার কিছু টিপস নিয়ে এই লেখা।

পোশাক-আশাকে সচেতন হোন

কর্মক্ষেত্রে পোশাক-আশাক একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়। পোশাকের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অন্যের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করে থাকেন। পেশার ক্ষেত্রে পোশাকের মাধ্যমেই প্রকাশ পাবে একজন কর্মীর পেশাদারি আচরণ। সাধারণত পোশাক-পরিচ্ছদ নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের ধরনের ওপর। অনেক প্রতিষ্ঠানের একটা সুনির্দিষ্ট সংস্কৃতি রয়েছে। সেই অনুপাতে কর্মীদের পোশাকের ধরনটিও হবে প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক-বীমা, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ছেলেদের বিধিবদ্ধ, মার্জিত অর্থাত্ ফরমাল পোশাক পরে আসতে হয়। এ ক্ষেত্রে ফুলহাতা শার্ট, প্যান্ট ও পরিষ্কার জুতা পরে আসতে হবে। প্রতিদিন ক্লিন সেভ করা ভালো। চুল যেন বেশি বড় না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি জুলফি বড় না রাখাই ভালো। মেয়েরা শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ পরতে পারেন। পশ্চিমা পোশাক হলে তা ফরমাল হওয়াই ভালো। প্রতিষ্ঠানে প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট মাপ বজায় রাখতে হবে। এর সঙ্গে গয়না ব্যবহারও যেন অতিরঞ্জিত না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতির সঙ্গে পোশাক-পরিচ্ছদ যেন উপযুক্ত হয়। কোনোভাবেই এর মাধ্যমে যেন উগ্রতা প্রকাশ না পায়। এ জন্য চড়া রং পরিহার করতে হবে। হালকা রঙের পোশাক পরা যেতে পারে। আর পোশাক-পরিচ্ছদ যাতে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। কোনোভাবে তা যেন বেশি কড়া না হয় সেদিকে নজর দিন। সব পেশার ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী পোশাক পরিধান করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। অনেক সৃজনশীল পেশাক্ষেত্র, যেমন বিজ্ঞাপনি সংস্থা, গণমাধ্যম ইত্যাদির ক্ষেত্রে পোশাক-আশাকে কিছুটা শিথিলতা রয়েছে। যাহোক, পেশার ক্ষেত্রে অবশ্যই সংযত পোশাক-পরিচ্ছদ পরে আসতে হবে।

নিজেকে সকলের সামনে তুলে ধরুন

কর্মজীবন শুরুর পর থেকেই নিজেকে অন্যের সামনে প্রকাশ করতে হবে। সকালবেলা কর্মক্ষেত্রে এসে সহকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় করতে পারেন। ফলে আপনার সম্পর্কে সবার মধ্যে একটা ভালো ধারণা তৈরি হবে, সকলের সাথে একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হবে। কেউ নিজেকে গম্ভীর করে রাখলে সহকর্মীরা তার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতে পারেন। সহকর্মী কারও জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী বা বিশেষ দিনে শুভেচ্ছাবিনিময় করুন। এতে আপনার সম্পর্কে অন্যের একটা ভালো ধারণা তৈরি হবে। বিভিন্ন কাজে সাধ্যমতো অন্য সহকর্মীদের সাহায্য করলে একটা সময় আপনার প্রয়োজনে বিভিন্ন কাজের সহযোগিতা করবেন সহকর্মীরাই। অন্যের সঙ্গে মেশার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এতে কর্মক্ষেত্রে অনেক কাজই সহজে হয়ে যায়।

কাঙ্ক্ষিত মার্জিত আচার-আচরণ

যেকোনা প্রফেশনালের কাছেই সকলে মার্জিত আচরণ প্রত্যাশা করে থাকেন। তাই, প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মীর সব ধরনের আচরণে পেশাদারি ভাব প্রকাশ পাবে। তাঁর আচরণ হবে মার্জিত। এখানে এমন কোনো আচরণ করা যাবে না, যা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যায় না। এটি ঠিকমতো না হলে পেশাক্ষেত্রে কোনোভাবে সফল হওয়া যায় না। অভিজ্ঞরা বলে থাকেন, কোনো একজন কর্মক্ষেত্রে অনেক কাজে পারদর্শী হওয়া সত্ত্বেও যদি তার আচার-আচরণ ভালো না হয়, তিনি কখনই দিনই সফল পেশাজীবী হতে পারেন না। পেশা জীবনে তাই তাই ভালো আচরণের বিকল্প নেই।

কর্মক্ষেত্রে ছোট-বড় সবার সঙ্গে উপযুক্ত আচরণ করতে হবে। সহকর্মীদের সঙ্গে উঁচুগলায় বা চড়ামেজাজে কথা বলা উচিত নয়। এ ছাড়া আচরণের বিভিন্ন মুদ্রাদোষ পরিহার করে চলতে হবে। যেমন, উচ্চ স্বরে ফোনে কথা না বলা, জোরে না হাসা প্রভৃতি। যারা গ্রাহকসেবার কাজ করবেন, তাদের ধৈর্য নিয়ে গ্রাহকের কথা শুনে সমস্যার সমাধান দিতে হবে। গ্রাহকের সামনে কোনো বিরক্তি প্রকাশ করা যাবে না। সহকর্মীরা বিব্রত হবেন, এমন বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে। এ ছাড়া এমন কোনো আচরণ করা যাবে না, যা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করে। এভাবে আচার-আচরণে আদবকেতা বজায় রাখতে হবে।

নিজের দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হোন

কর্মজীবনে সফলতার মূলমন্ত্র হচ্ছে নিজের কাজকে সফলভাবে শেষ করতে পারা। প্রতিষ্ঠান একজন কর্মীর কাছ থেকে সব সময় প্রত্যাশিত কাজ চায়। সেক্ষেত্রে নিজের কাজ ও দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। অন্যের কাজে ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থবিরুদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলে তা নিজের মধ্যে পুষে না রেখে উপযুক্ত কারও সঙ্গে কথা বলতে হবে। কাজের মধ্যে গতি আনতে পারলে আপনার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।

বুদ্ধিমত্তা ও যোগাযোগের কৌশল রপ্ত করুন

কাজের জায়গায় নিজের অবস্থানকে সকলের নিকট সঠিকভাবে তুলে ধরতে হলে প্রয়োজন বুদ্ধিমত্তা। আর তার সাথে যোগাযোগের কৌশলও এতে ভূমিকা রাখে। এই দুটি বিষয়ের যৌথ প্রয়োগেই একজন নিজের পেশায় বিভিন্ন আচরণে দক্ষ হয়ে ওঠেন। পেশার ক্ষেত্রে সফলতার জন্য যেমন আবেগের নিয়ন্ত্রণ ঘটাতে হবে, তেমনি অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার কৌশলও রপ্ত করতে হবে। পারষ্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধিতে এ দুটি কৌশল নানাভাবে একজন পেশাজীবীকে সহায়তা করে এবং অন্যদের মনে ঠাঁই করে নিতে পারেন তিনি।

আদবকেতা পেশার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ বিষয়। এখন এ সংক্রান্ত বইপত্র বাজারে পাওয়া যায়। ইন্টারনেটে এখন এ বিষয়ে নানা ধরনের তথ্য খুব সহজেই পাওয়া যায়। সেখান থেকেও আদবকেতা সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। তবে যাই হোক না কেন, অবশ্যই পেশা জীবনে সফল হতে হলে নিজেকে তৈরি করতে হবে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবেই।

 সূত্র : ইত্তেফাক ডেস্ক  |  বুধবার, ১৪ মার্চ ২০১২

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top