শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা

শিক্ষকতা শ্রেষ্ঠতম পেশা হিসেবে যুগ যুগ ধরেই স্বীকৃত। বর্তমানে স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা পেশায় নিজের ক্যারিয়ার গড়তে হলে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা পাস করতে হবে। তাই সময় থাকতেই দরকার এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়েই আমাদের এই আয়োজন।

পরীক্ষা পদ্ধতি
প্রার্থীকে ১০০ নম্বরের আবশ্যিক বিষয় এবং ১০০ নম্বরের ঐচ্ছিক বিষয়সহ মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হবে। প্রতি বিষয়ের পাস নম্বর ৪০। আবশ্যিক বিষয়ের ১০০ নম্বর এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০টি প্রশ্নের জন্য সময় ১ ঘণ্টা এবং ঐচ্ছিক বিষয়ের ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার জন্য সময় ৩ ঘণ্টা। আবশ্যিক বিষয়ের এমসিকিউ প্রশ্নের প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫০ (শূণ্য দশমিক পাঁচ শূণ্য) নম্বর কাটা হবে।

আবশ্যিক বিষয় পরীক্ষার ধরন
আবশ্যিকে বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন হবে। সাধারণত প্রতিটি বিভাগ থেকে ২৫টি করে মোট ১০০টি প্রশ্ন হয়। তবে কোনো কোনো সময় এক বিষয় থেকে ২৫ এর অধিক প্রশ্ন হতে পারে। কিন্তু মোট প্রশ্ন সংখ্যা ১০০ থাকবে। সঠিক উত্তরের জন্য প্রতি প্রশ্নে এক নম্বর যোগ হবে। তবে দুটি প্রশ্নের ভুল উত্তর দিলে কাটা যাবে এক নম্বর।

প্রস্তুতি

আবশ্যিক বাংলা
কলেজ ও স্কুল পর্যায়ে বাংলা আবশ্যিক সিলেবাস প্রায় একই। এই বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য নবম দশম শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্র বইটি ভালোভাবে পড়া যেতে পারে। তবে ভাষারীতি ও বিরাম চিহ্ন, সারসংক্ষেপ, ভাব সম্প্রসারণ, বাগধারা ও বাগবিধি, পত্রলিখন, ভুল সংশোধন, সমাস, সমার্থক শব্দ এই সব বিষয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
আবশ্যিক ইংরেজি
স্কুলপর্যায়ে প্রশ্ন করা হবে ট্রানসলেশন (বাংলা থেকে ইংরেজিতে, ইরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ), পার্টস অব স্পিচ, ট্রান্সফরমেশন অব সেন্টেন্স, প্যারাগ্রাফ/রিপোর্ট/ডিসক্রিপশন রাইটিং।  কলেজপর্যায়ে এগুলোর পাশাপাশি চেঞ্জিং ওয়ার্ডস ফ্রম ওয়ান টু অ্যানাদার অ্যান্ড মেকিং সেন্টেন্স উইথ দেম, কম্প্রিহেনসিভ কোয়েশ্চেন, কমপ্লিটিং সেন্টেন্স, ভয়েস চেঞ্জ, ন্যারেশন, রাইট ইউজেজ অব ভার্ব থেকেও প্রশ্ন করা হবে। এর জন্য যে কোনো একটি ইংরেজি গ্রামার বই থেকে প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে । সবচেয়ে ভালো হয় বিগত স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নের বারবার সমাধান করা।
আবশ্যিক গণিত
আসলে গণিতের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুসরণ করা ঠিক হবে না। গণিতের বেসিক যার যত ভালো, সে তত ভালো করবে। তাই গণিতের ক্ষেত্রে  প্রস্তুতিটা একটু বেশি নিতে হবে। তাছাড়া ভালো নাম্বার উঠাতে পারলে অন্য বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। এখানে পাটি গণিত, বীজ গণিত, পরিমিতি, ত্রিকোণমিতি এবং জ্যামিতি বিষয় থেকে প্রশ্ন হয়। স্কুল পর্যায়ে  পাটি গণিতের জন্য সরল, গড়, ল.সা.গু, গ.সা.গু, শতকরা, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি, অনুপাত-সমানুপাত ইত্যাদিতে ভালো প্রস্তুতি থাকা চাই। কলেজ পর্যায়ের হলে এগুলোর সাথে বাড়তি ঐকিক নিয়মের প্রস্তুতি নিতে হবে। বীজ গণিতের জন্য স্কুল হলে উৎপাদক, বর্গসম্বলিত সূত্রাবলি এবং ঘনসম্বলিত সূত্রাবলী ও প্রয়োগ, ভাগশেষ উপপাদ্যের প্রয়োগ, সূচক ও লগারিদম সম্বলিত প্রাথমিক সূত্রাবলি ও প্রয়োগ, দুই চলকবিশিষ্ট সমীকরণ জোট (সমাধান), সেট ও ফাংশন (সেটের সংযোগ, ছেদ, সার্বিক সেট, পূরক সেট, কার্তেসীয় গুণজ, ফাংশনের ডোমেন ও রেঞ্জ)। আর কলেজ পর্যায়ের হলে বাড়তি ভাগশেষ, বহুপদী, লেখচিত্র ইত্যাদি দেখে নিন।
আর জ্যামিতির জন্য স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে সিলেবাস একই। রেখা, কোণ, ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজ সম্পর্কিত উপপাদ্য, পীথাগোরাসের উপপাদ্য ও তার প্রয়োগ, বৃত্ত সম্পর্কীয় উপপাদ্য, ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল ও চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল সম্পর্কীয় উপপাদ্য ও প্রয়োগ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। এছাড়া ত্রিকোণমিতি ও পরিমিতির প্রস্তুতির জন্য দেখে নিন সহজ ত্রিকোণমিতিক অভেদাবলি ও প্রয়োগ, ত্রিকোণমিতিক সমীকরণের সমাধান (নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে) এবং দূরত্ব ও উচ্চতা বিষয়ক সমস্যা, সরলরৈখিক ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল, কোণক, বেল ও গোলক পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ও আয়তন। গণিতে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে স্কুল পর্যায়ের ৭ম থেকে নবম দশম শ্রেণীর অংক বইয়ের সমাধান করলেই হবে। তবে গণিতে ভালো করতে হলে আগে থেকে প্রস্তুতিতে বেশি জোর দিতে হবে। বাসায় নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে।
আবশ্যিক সাধারণ জ্ঞান
আবশ্যিক বিষয়ের ১০০ নম্বরের মধ্যে সাধারণ জ্ঞান অংশের ২৫ নম্বরের প্রস্তুতির জন্য আপনাকে  বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, সাধারণ বিজ্ঞানের মৌলিক জ্ঞান,  প্রযুক্তি, পরিবেশগত বিজ্ঞান, সাধারণ রোগব্যাধি সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান রাখতে  হবে। প্রতিদিন নিয়মিত সংবাদপত্র, বিভিন্ন ম্যাগাজিন একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লে সাম্প্রতিক প্রসঙ্গগুলোতে ভালো করা সহজ হয়। আর সাধারণ জ্ঞানের জন্যও চাই নিয়মিত চর্চা।

ঐচ্ছিক পরীক্ষা
নিবন্ধনে প্রার্থী যে বিষয়ে আবেদন করবেন, তাকে ওই বিষয়ের ওপর ১০০ নম্বরের ঐচ্ছিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এই পরীক্ষার সময় তিন ঘণ্টা এবং পরীক্ষা হবে লিখিত। এ পরীক্ষার সিলেবাস একটু বেশি। যে বিষয়ের ঐচ্ছিক পরীক্ষা, সে বিষয়ের উপর খুব ভালো ধারণা না থাকলে ভালো করা সম্ভব না। ঐচ্ছিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এনটিআরসিএ’র সিলেবাস পুস্তিকা অনুসরণ করে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। ঐচ্ছিক বিষয়গুলোতে নিজের মতো করে প্রস্তুতি নেয়া উচিত। আর অন্যান্য বিষয়ে বাজারে প্রচলিত গাইডবই থেকে সরকার প্রণীত পাঠ্যপুস্তক থেকে প্রস্তুতি নেয়া ভালো।

প্রতিযোগিতা ব্যাপক
যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করেই শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। অনেকে খুব সহজভাবে এই পরীক্ষাকে গ্রহণ করলেও ২০১০ সালের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, দুই লাখ ২০ হাজার ৫১৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৪২ হাজার ৬৪১ জন। স্কুল পরীক্ষায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৬৭ জনের মধ্যে পাস করেছে ২৭ হাজার ৩৬১ জন এবং কলেজে ৭৭ হাজার ১৫০ জনের মধ্যে পাস করেছে ১৫ হাজার ২৮০ জন। বেসরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ১৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

সিলেবাস ও বিগত প্রশ্নের অনুসরণ
অল্প সময়ে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এনটিআরসিএ’র নিবন্ধন পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট সিলেবাস দেখে প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে । বাজারের বিভিন্ন শিক্ষক নিবন্ধন গাইড থেকে বিগত সালের প্রশ্ন দেখে তা সমাধান করে প্রস্তুতি নিতে পারেন। প্রস্তুতির সময় একা পড়ার পাশাপাশি সবাই মিলে আলোচনা করে পড়াশোনা করা যেতে পারে ।

4 thoughts on “শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা”

  1. আমার অষ্টম ও নবম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্ন লাগবে কেউ কি দিতে পারবেন?
    বিষয়: সমাজ কল্যান

Comments are closed.

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top