স্বপ্নের পেশা মডেলিং

স্বপ্নের পেশা মডেলিং : কিভাবে ক্যারিয়ার গড়বেন

নিজেকে উপস্থাপন, বাচনভঙ্গি, অন্যকে নিজের প্রতি আকৃষ্টকরণই যদি হয় পেশা- সেটা পরম পাওয়ার বিষয়ই বটে। সুন্দরের পূজারী মানুষ। সুন্দরই সব আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আর সে কেন্দ্রে যদি থাকেন আপনি, সেটাই যদি হয় ক্যারিয়ার- তা পাওয়ার ইচ্ছা সবার থাকাই স্বাভাবিক। হ্যাঁ, এতক্ষণ মডেলিং -এর কথাই বলছিলাম।
এ পেশায় সুনাম, সুখ্যাতি তো আছেই। আরো আছে উন্নত জীবনযাপনের নিশ্চয়তা। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন পল্লব মুনতাকা

মডেলিং: বর্তমান প্রেক্ষাপট

এক সময় মডেলিং পেশাকে যেমন দেখা হতো খারাপ দৃষ্টিতে, আবার যারা মডেলিং করতো তাদেরকে মনে হতো এক-একটি সুদূরের নিহারিকা। আমাদের দেশে নব্বইয়ের দশকের আগেও মডেলিং-এর ব্যাপকতা দেখা যায়নি। বর্তমানে মডেলিং একটি স্বাভাবিক বিষয়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও টিভি চ্যানেল বেড়ে যাওয়ার ফলে মডেলিংয়ের ব্যাপকতাও বেড়েছে। এখানে পুরুষের পাশাপাশি বেড়েছে নারীদের সংখ্যা। বর্তমান মডেলিংয়ে এসেছে সুন্দরী, শিক্ষিত, উদ্দীপ্ত অনেক তরুণী। এখন মানুষ মডেলিংকে আগের মতো খারাপ দৃষ্টিতে দেখে না। পণ্যদ্রব্যের বিজ্ঞাপন মডেল ছাড়া তো চলেই না। এদের চাহিদাও যেমন বেড়েছে তেমনি বাড়ছে সম্মানীও। ক্যারিয়ার হিসেবে গ্ল্যামারস জগতের কয়েকটি পেশার শীর্ষস্থানটি মডেলিংয়ের হতে পারে। অনেকে হয়তো ২/৩ নম্বরেও রাখতে পারেন। মডেলরা এখন বানিয়ে ফেলছেন ভক্তকুলও। প্রিয় মডেলকে দেখার জন্য অনেকে তাকিয়ে থাকেন টিভি পর্দায়।

স্বপ্নের পেশা মডেলিং
ক্যারিয়ার হিসেবে গ্ল্যামারস জগতের কয়েকটি পেশার শীর্ষস্থানটি মডেলিংয়ের

মডেলিং কী

মডেলিং শব্দটি এসেছে ইংরেজি মডেল থেকে। শব্দটি ষোড়শ শতকে ইতালীয় ‘মোদেল্লা’ থেকে ফরাসি ‘মোদেল’ হয়ে ইংরেজি মডেল (Model) হয়েছে। মডেল সোজা বাংলায় বলা যায় নমুনা। পেশা হিসেবে যে মডেলিংয়ের কথা বলছি তা হবে ফ্যাশন মডেল। যার সংজ্ঞায় ‘এনকার্টাওয়ার্ল্ড ইংলিশ ডিকশনারি লিখেছে- One who is paid to wear clothes and demonstrate merchandise as a profession. অর্থাৎ পেশা হিসেবে কোনো পোশাক পরিধান ও তার প্রদর্শনী যার জন্য ব্যক্তিকে সম্মানী দেয়া হয়। তা-ই মডেলিং। অর্থাৎ যেকোনো উৎপাদনশীল প্রোডাক্ট গণমাধ্যমে সশরীর উপস্থাপনই মডেলিং।

মডেলিং-এর ক্ষেত্র

মডেলিং বিষয়টি আসলে তিন ভাগে বিভক্ত। অর্থাৎ তিন ধরনের মডেলিং হতে পারে র‌্যাম্প, অডিও ভিজ্যুয়াল ও প্রিন্ট মডেলিং। এর বাইরে কোনো কোম্পানির নিজস্ব হাউজে ফিল্ম বা কোনো ডিজাইনারের পোর্টফোলিও ইত্যাদি।

র‌্যাম্প মডেলিং

যে মডেলিং মডেলকে শুধু শো করানো হয় তা-ই র‌্যাম্প মডেলিং। এখানে মডেলের কোনো অভিব্যক্তি নেই। কথা নেই। নেই অভিনয়ও। তার কাজ শুধু হাঁটা। মডেলের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মডেলই র‌্যাম্প। নতুন পোশাক মার্কেটে আসলে ভোক্তার সামনে সে পোশাক গায়ে দিয়ে মডেলরা প্রদর্শনী বা শো করান।

যোগ্যতা
র‌্যাম্প মডেলিংয়ে যোগ্যতার ক্ষেত্রে প্রথমেই মেয়েদের কথা বলি। র‌্যাম্প মডেলিংয়ের জন্য প্রয়োজন লম্বা চেহারা। পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি বা আরো লম্বা হলে ভালো হয়। তবে কেউ যদি ভালো মডেলিং করেন তবে লম্বায় কিছুটা খাটো হলেও তা বিবেচনা করা হয়। তবে এর কম উচ্চতা হলে র‌্যাম্পের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। মাপের ক্ষেত্রে বলতে গেলে ছাতি ৩৪ ইঞ্চি, কোমর ২৪ ইঞ্চি প্রয়োজন হয়।
পুরুষদের ক্ষেত্রে, অবশ্যই দীর্ঘদেহী হতে হবে। অন্তত ছয় ফুট বা তার চেয়ে বেশি। ছাতি হতে হবে ৪২ এবং কোমর ৩১ ইঞ্চি। এ মডেলিংয়ে পুরুষ বা মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে চেহারাটা অত্যন্ত জরুরি। প্রায় সবাই ভাবেন মডেল হতে হলে সাঙ্ঘাতিক সুন্দরী বা সুন্দর হতে হয়। সেটা মুখের সৌন্দর্য। র‌্যাম্পে সাধারণ মুখ হলেই চলে। আর চেহারা বলতে পুরো দেহটা নির্দিষ্ট মাপে হতে হবে।

ব্যক্তিত্ব
দেহের মাপের পরও র‌্যাম্প মডেলিংয়ের আবশ্যক যে গুণটি বেশি দরকার সেটা হচ্ছে- পার্সোনালিটি বা ব্যক্তিত্ব। কোনো মডেলই হচ্ছে মূল আকর্ষণ। সবাই তাকে দেখছে। অথচ মডেলের কিছু করার নেই হাঁটা ছাড়া। তাই মডেলের এ হাঁটার মধ্যেই ব্যক্তিত্বটা ফুটিয়ে তুলতে হবে। ব্যক্তিগত জীবনে কেউই ইন্ট্রোবার্ট আবার কেউ নার্ভাস হয়ে থাকেন কিন্তু র‌্যাম্পে নিশ্চিতভাবে ব্যক্তিত্বটা ফুটিয়ে তুলতে হবে। সেটা হতে হবে একেবারে স্বাভাবিক। যে যত সফলভাবে নিজের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারবে সে তত ভালো মডেল।

আড়ংয়ের কয়েকজন মডেল

দেশের অভিজাত পোশাক বিক্রেতা আড়ংয়ের কয়েকজন মডেল

অডিও ভিজ্যুয়াল মডেলিং

অডিও ভিজুয়াল মডেলকে অ্যাড ফিল্ম মডেলও বলা হয়। মডেল হিসেবে র‌্যাম্প মডেলের মতো শুধু নির্দিষ্ট উচ্চতা বা ফিগারই নয় বরং চরিত্র অনুযায়ী এখানে মডেলের প্রয়োজন হয়। যেমন- পণ্যের বিজ্ঞাপনে যদি কোনো গল্প থাকে, সেই গল্পের চরিত্রগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী মডেল বাছাই করা হয়। কখনো তা কোনো বয়সী মহিলা হতে পারেন, কখনোবা কোনো মোটা পুরুষ। একটি লম্বা চুলের ছোট মেয়েরও যেমন প্রয়োজন, তেমনই দরকার সাধারণ মধ্যবয়সীদের। অর্থাৎ রোগা, মোটা, লম্বা, কুৎসিত ও সুন্দর সব ধরনের মডেলেরই প্রয়োজন এখানে।

যোগ্যতা
এখানে মডেলিংয়ে ঠিক যে ধরনের চরিত্রের দরকার সে চরিত্র সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার যোগ্যতা বড় বিষয়। নিখুঁত চরিত্র ধারণ করাটা এখানে আবশ্যক।

প্রিন্ট মডেলিং

ম্যাগাজিন বা পত্রপত্রিকা তথা প্রিন্ট মিডিয়ার বিজ্ঞাপনে মডেলিংই প্রিন্ট মডেলিং। এ মডেলিংকে কেউ কেউ আবার অনেক ভাগ করেন। যেমন- ফ্যাশন প্রিন্ট মডেল, কমার্শিয়াল প্রিন্ট মডেল, সোয়াইনওয়ার প্রিন্ট মডেল, ক্যাটালগ প্রিন্ট মডেল প্রভৃতি।
যোগ্যতা
যোগ্যতা বা ধরনের দিক থেকে প্রিন্ট মডেল আর অডিও ভিজ্যুয়াল মডেল প্রায় একই রকম। এখানেও যে কোনো ধরনের ও বয়সের মডেলের প্রয়োজন হয়।

মডেল হবেন যেভাবে

যে কেউ মডেলিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে প্রথমে তাকে ফটোসেশন করতে হবে। ফটোসেশন মানে শুধু ছবি উঠানো নয় বরং একটু সময় নিয়ে দু-এক ঘণ্টার ফটোসেশন। যেখানে আপনার সব ধরনের সব পরিবেশের ছবি বা দৃশ্য থাকতে হবে। যেটা তৈরি হবে বিশেষভাবে মডেলিংয়ের জন্যই। ফটো সেশনের মাধ্যমে একটি পোর্টফোলিও তৈরি করুন। এরপর সেটিকে পাঠাতে পারেন কোনো মডেল অ্যাজেন্সিকে।

মডেলিং অ্যাজেন্সি

আপনার পোর্টফোলিও বানিয়ে অ্যাজেন্সিকে পাঠানো কথা আগেই বলেছি। এ অ্যাজেন্সি দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- অ্যাড অ্যাজেন্সি এবং মডেল কো-অর্ডিনেটিং অ্যাজেন্সি।
অ্যাড অ্যাজেন্সিগুলোর সাথে যোগাযোগের সহজ উপায় হলো, পত্রিকায় যে বিজ্ঞাপন বেরোয় তার নিচেই ছোট করে অ্যাজেন্সির নাম থাকে। অনেক সময় ফোন নম্বরও দেয়া থাকে। সে নম্বরে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এ ছাড়া মডেল কো-অর্ডিনেটিং অ্যাজেন্সিগুলোর সাথে যোগাযোগ করেও কাজ শুরু করা যেতে পারে। এ লেখার শেষ দিকে কয়েকটি মডেল অ্যাজেন্সির নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর দেয়া হয়েছে।

সুন্দরীরাই মডেল?

মডেল মানেই খুব সুন্দর বা সুন্দরী হতে হবে এটা প্রায় সবাই ভাবেন। অনেকে ভাবেন চেহারায় পাশ্চাত্যের ছাপ থাকলে বুঝি মডেল হওয়া সহজ। মোটের ওপর বলতে গেলে এগুলো আমাদের ধারণা; বাস্তবতা নয়। মডেলের ধরন অনুসারে সুন্দর বা কালোরাও মডেল হতে পারেন। যেটা আমরা আগেই বলেছি। সব বয়সের মানুষেরই মডেলে প্রয়োজন হতে পারে। তবে এটা ঠিক সুন্দরীদের কিছুটা প্রাধান্য তো আছেই। র‌্যাম্প মডেল এবং পোশাকের ফ্যাশন মডেলে সুন্দরীই চাই। তবে অন্যান্য মডেলিংয়ে সবারই অংশগ্রহণ রয়েছে।

মডেলদের রয়েছে বিশ্বব্যাপী চাহিদা
মডেলদের রয়েছে বিশ্বব্যাপী চাহিদা। ছবি : hypebae.com

ক্যারিয়ার হিসেবে মডেলিং

ক্যারিয়ার হিসেবে মডেলিং অত্যন্ত যুগোপযোগী। ইদানীং অনেক বেশি ছেলেমেয়েরা মডেলিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাচ্ছে। টাকা ও গ্ল্যামার, এই দু’টি জিনিসের টানেই সবাই এ পেশায় আসতে চাইছে। যদি কেউ নিয়মিত কাজ পায়, তবে তার টাকা নিয়ে সারা জীবনে কোনো ভাবনা থাকবে না। আর গ্ল্যামার কোনো ফিল্ম স্টারের চেয়ে কম নয়।
তবে এটা ঠিক যে, নতুন একজন মডেলের প্রতিষ্ঠিত হতে কঠিন প্ররিশ্রম করতে হয়। তবে মডেলিং পেশাটা অন্য পেশার মতো সারা জীবনের জন্য নয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে- মডেলিংয়ের বয়স শেষ হলে এ সংক্রান্ত অনেক কাজের সুযোগ আছে। যেমন- মডেল কো-অর্ডিনেটিং, র‌্যাম্প শো, কোরিওগ্রাফি কিংবা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, অভিনয় ইত্যাদি। অর্থাৎ মডেলিংয়ের ক্যারিয়ার অত্যন্ত উজ্জ্বল ক্যারিয়ার।

বাংলাদেশের কয়েকজন মডেল

সাদিয়া ইসলাম মৌ

সোহানা সাবা : বাংলাদেশী মডেল
সোহানা সাবা, বাংলাদেশী মডেল

সাদিয়া ইসলাম মৌ বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী। তার মা রাশা ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশের স্টিল অ্যাড মডেলিং-এর পথিকৃৎ। ১৯৯১ সালে বাউন্স শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন দিয়ে মৌ টিভি বিজ্ঞাপনে পা রাখেন। তার জনপ্রিয়তা পাওয়া অসংখ্য বিজ্ঞাপনচিত্রের তালিকায় আছে কেয়ার একাধিক বিজ্ঞাপনচিত্র, আপন জুয়েলার্স, বার্জার পেইন্টস, লাক্স, রোমানা পেইন্টস, পাকিজা প্রিন্ট শাড়ি, গোয়ালিনি কনডেন্সড মিল্ক, সিলভার ক্রস কনডেন্সড মিল্ক, আরসি কোলা, মৌচাক জুয়েলার্স, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ, ডেকো গুড়া মশলা প্রভৃতি। এছাড়া মার্ক্স গুড়োদুধের একটি বিজ্ঞাপন দিয়েও ছোটপর্দার দর্শকদের নজর কেড়েছেন মৌ। অন্যদিকে সংক্ষিপ্ত অভিনয় ক্যারিয়ারে মৌ নজর কেড়েছেন তার অভিনীত একাধিক নাটকের চরিত্র দিয়েও।

নোবেল

বাবার চাকরির সুবাদে নোবেল ঢাকায় আসেন ’৮৯ সালের দিকে। ঢাকায় আসার পর তার এক কাজিনের মাধ্যমে প্রথম অফার আসে ফ্যাশন শো করার। নির্মাতা আফজাল হোসেনের স্ত্রী ছিলেন ওই ফ্যাশন শোর সঙ্গে জড়িত। প্রথম তিনি কাজ করেন স্প্রাইটের একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে। এরপর আফজাল হোসেনের নির্দেশনায় কাজ করেন আজাদ বলপেনের বিজ্ঞাপনে। ‘লোনলি ডে লোনলি নাইট’ শিরোনামের সেই বিজ্ঞাপনটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তার জনপ্রিয়তা পাওয়া অসংখ্য বিজ্ঞাপনচিত্রের তালিকায় আছে লাইফগার্ড সাবান, কেয়া, পাকিজা শাড়ি, আরসি কোলা, আমিন জুয়েলার্স, আরসি ওয়ার্ল্ড, কুল শেভিং ক্রিম ইত্যাদি। বিজ্ঞাপনের বাইরেও নোবেলের নাটক নির্মিত হয়েছে অনেক। নোবেল অভিনীত প্রথম নাটক ‘প্রাচীর পেরিয়ে’। টিভি নাটকের ইতিহাসে প্রথম প্যাকেজ নাটক ছিল এটি।

সারিকা জাহান

সারিকার মডেলিংয়ে যাত্রা শুরু ২০০৬ সালে। তিনি তখন ক্লাস টেন-এ পড়েন। প্রথমে সিঙ্গারের একটা বিজ্ঞাপনের জন্য অডিশন দেন। এরপর অনেকগুলো বিজ্ঞাপন করেন সিঙ্গারের হয়ে। তবে প্রফেশনালি কাজ শুরু করেন অমিতাভ রেজার নির্দেশনায় ‘অ্যারোমেটিক বিউটি সোপের’ বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে। একে একে কাজ করেছেন নোকিয়া, বাংলালিংক দেশ-এর বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে। নাটকেও নিয়মিত অভিনয় করে চলেছেন তিনি। এছাড়া কয়েকটি টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনাও করেছেন তিনি।

মডেলিং সম্পর্কে বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের মন্তব্য

অমিতাভ রেজা
এখন তরুণদের মধ্যে মডেলিং-এর সাথে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। প্রথম কারণ হচ্ছে, এ মাধ্যমে কাজ করার ফলে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ফেইম। অর্থাৎ, বিজ্ঞাপনে কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি গড়ে উঠছে।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
বর্তমানে তরুণরা মডেলিং-এ ভালো করছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ক্ষেত্রটির মাধ্যমে দ্রুত পরিচিতি পাওয়া সম্ভব। পরিচিতি তো এমন একটি বিষয়, যা সবাই কম-বেশি চান। এছাড়া আর্থিক বিষয়টিও তো রয়েছেই। ফলে তরুণরা নিজের প্রতিভা বিকাশের জন্য মডেলিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন।

আফজাল হোসেন
মডেল হচ্ছে একটি দৃষ্টান্ত। একটি পণ্যকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে একজন মডেল ভূমিকা রাখেন। তাই যে কেউ মডেল হতে পারবে, এটা ঠিক নয়। মডেল হতে হলে সৌন্দর্য থাকতে হবে এবং সেই সঙ্গে তাকে হতে হবে বুদ্ধিদীপ্ত।

আপন আহসান
মডেলিং এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে তরুণদের জয়-জয়কারই সব সময়। তবে এখন তরুণ মুখগুলো খুব সহজেই বিজ্ঞাপনের কল্যাণে লাইমলাইটে চলে আসছে। আগে বছরে ১০/১২টি বিজ্ঞাপন নির্মিত হতো আর এখন মাসে ১০/১২টি বিজ্ঞাপন নির্মিত হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নতুন ছেলে-মেয়েদের চাহিদা বাড়ছে।

মডেলিং : প্রশিক্ষণ থাকলে পাওয়া যেতে পারে বিশেষ সুবিধা
মডেলিং : প্রশিক্ষণ থাকলে পাওয়া যেতে পারে বিশেষ সুবিধা

প্রশিক্ষণ কতটা জরুরি

অভিনয়ের মতো মডেলিংয়ে যে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসতে হবে তা নয়। মডেলিং এমন কোনো পেশা নয় যে, প্রশিক্ষণ ছাড়া তা সম্ভব নয়। চাইলেই মডেলিংটা শিখে নেয়া যায়। সে ক্ষেত্রে নিজেকে সর্বদা আপডেট রাখা দরকার। নিয়মিত ম্যাগাজিন ও জার্নালগুলো নাড়াচাড়া করা, ফ্যাশন টেলিভিশন দেখা, আন্তর্জাতিক ও দেশী বাজারে কোন পোশাক, মেকআপ, অ্যাকসেসরি এলে তার খোঁজ রাখা ইত্যাদির মাধ্যমেই মডেলিং আয়ত্ত করা সম্ভব।

তবে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়া থাকলে তা অতিরিক্তি সুবিধা দেবে নিশ্চয়ই। বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান মাঝে মাঝে এ ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত কোর্স ও কর্মশালার আয়োজন করে থাকে। দৈনিক পত্রিকাগুলোর লাইফস্টাইল ম্যাগাজিনে এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে পারেন।

মডেলিং-এর কলা-কৌশল শেখানোর জন্য সম্প্রতি চালু হয়েছে গ্রুমিং ব্যবস্থা। যা দেশের প্রতিষ্ঠিত মডেল, ফ্যাশন ও অভিনেতা-অভিনেত্রী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যদিও বর্তমানে তা অত্যন্ত সীমিত পরিসরে। তবে ক্রমশ বাড়ছে এর পরিধি। যেখানে মডেলিংয়ে বা ফ্যাশনে আগ্রহী তরুণ-তরুণীরা যথাযথ দিকনির্দেশনা পাবে বলে আশা করা যায়।

মডেল হওয়ার কিছু টিপস

  • এটা গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড। তাই পায়ের নখ থেকে চুল পর্যন্ত থাকতে হবে ফিট। সফল মডেল হতে হলে অবশ্যই নিজের একটা স্টাইল ও ইমেজ দাঁড় করাতে হবে। নিজের মতো করে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে হবে। আর সবসময় শরীরটাকে ফিট রাখতে হবে।
  • মডেলিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বেশভূষা, চুলের স্টাইল, হাঁটাচলা, দাঁড়ানোর ভঙ্গি, চোখের চাহনি ও ভুবন ভোলানো হাসি। আর যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো শুদ্ধ উচ্চারণ। মডেল হতে হলে অবশ্যই বাংলা ও ইংরেজি দুটো ভাষাকেই শুদ্ধভাবে আয়ত্ত করতে হবে।
  • সব সময় কাজ নিয়ে ভাবতে হবে। বিভিন্ন ক্যাটালগ ও ম্যাগাজিন মনোযোগ দিয়ে দেখতে হবে। এক্সপ্রেশনগুলো দেখে চর্চা করতে হবে। বিজ্ঞাপন দেখে অনুশীলন করতে হবে। সফল মডেলদের জীবনকথা ও টিপসগুলো মনোযোগ দিয়ে নিজের মধ্যে স্থাপন করতে হবে।
  • একজন মডেল হতে প্রয়োজন একটি পরিপূর্ণ পোর্টফোলিও। এক্ষেত্রে একজন পেশাদার ফটোগ্রাফারকে দিয়ে একটি পোর্টফোলিও বানাতে হবে। সাধারণত একটি পোর্টফোলিওতে থাকে মডেলের নানা এ্যাঙ্গেল থেকে তোলা ছবি।
  • সুন্দর ছবি তুলে পরিপূর্ণ পোর্টফোলিও তৈরি হয়ে গেলে বিভিন্ন অ্যাজেন্সিতে ছবি পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নামকরা বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোতে পোর্টফোলিও পাঠান। আরও পাঠাতে পারেন বিভিন্ন বুটিক হাউসে এবং পত্রিকা অফিসগুলোতে। প্রয়োজনে বিভিন্ন জনের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। যেমন, মডেলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত এমন ফটোগ্রাফার, মেকাপ, আর্টস, ফ্যাশন হাউস অর্গানাইজার এমন কারো সাথে। পোর্টফোলিওর সাথে একটি সুন্দর পরিপূর্ণ সিভি জমা দিতে ভুলবেন না।

দেশের কিছু মডেল অ্যাজেন্সি

– মডেল জোন, হাউজ : ২১০, রোড : ২০, নতুন ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা। ফোন : ০১৬৭০ ০৬১৯৩০।
– এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশন লিমিটেড, এশিয়াটিক সেন্টার, হাউজ : ৬৩, রোড : ৭, বি ব্লক, বনানী, ঢাকা। ফোন : ৯৮৯২৭৬৮।
– বেঞ্চমার্ক লিমিটেড, হাউজ : ৬৯, রোড : ২৭, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২। ফোন : ৮৮১৩৬৪৮।
– অ্যাডকম লিমিটেড, হাউজ : ৭-এ, রোড : ৪১, গুলশান-২, ঢাকা। ফোন : ৮৮৫৩২২২, ৯৮৮৭৬৬৫।

সাবধান!

মডেলিংয়ে তারুণ্যের আগ্রহ এবং টিভি চ্যানেলে নিজেকে তারকা হিসেবে পরিচিত করার স্বপ্নকে পুঁজি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।  ফ্যাশন শো ও পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মডেল করার নামে সাইনবোর্ডের অন্তরালে এসব প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ইভেন্টে ভর্তি ফি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। মডেলিং ফার্ম নামে এসব প্রতিষ্ঠানের একাধিক ফ্ল্যাট বা অফিসও থাকে অত্যাধুনিক সাজে সজ্জিত। ক্লাস শুরুর প্রথম দিনেই নবাগত উৎসাহী প্রতিটি মডেলের চোখে এঁকে দেয়া হয় ভবিষ্যতের স্বপ্ন। তারপর বিভিন্ন কৌশলে তাদেরকে ফেলা হয় ফাঁদে। মডেল হবার স্বপ্ন পূরণ করতে আসা এসব টিনএজ তরুণ-তরুণীর মোহকে পুঁজি করে মডেলিং ফার্ম নামের এরকম অনেক প্রতিষ্ঠান দেশে তৎপর।

এছাড়া একটা সিন্ডিকেট কিছুদিন পর পর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে মডেল সংগ্রহ, নাটক, চলচ্চিত্র ও বিভিন্ন বিজ্ঞাপনচিত্রে সুযোগ দেয়ার কথা বলে এসব তরুণ-তরুণীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তরুণীদের ইজ্জতও লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অতএব, প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে শুনে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।

কৃতজ্ঞতা

এই লেখাটি তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাধ্যমে নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের লেখা থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। সেজন্য তাদের কাছে ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স কৃতজ্ঞ।
১. এসএম মাহফুজ
২. ব্লগার রিজভী, সামহোয়ার ইন ব্লগ
৩. মাহতাব শফি

5 thoughts on “স্বপ্নের পেশা মডেলিং : কিভাবে ক্যারিয়ার গড়বেন”

  1. Modeling is my dream….a bepare Google search korci kicu korte parci na…ki korbo

  2. Please, an app for Android about Fashion Modeling tips and tricks, grooming tips, Poses for Photoshoot and Portfolio, improving Culture and Manner, improving personality and beauty, impression and expression etc is very very needed for me! I guess, it’s also needed for other new Models or freshers. If you help us about this matter by giving us an Android app, we could be really grateful to you! Specially me! So please, I need your favor!! Thank you…

    Best Regard
    Mohammed Abu Tayeb

  3. Shamim Hosen

    Amar onek issa model hobar kintu ami moddho pribarer sele kivabe suru korte pari amake motivation den

Comments are closed.

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top