অল্প সময়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার উপায়

অল্প সময়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার উপায়

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৫ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। সেই অনুযায়ী আর মাত্র কয়েকদিন হাতে আছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা  করেছেন ৩৫তম বিসিএস ক্যাডার লেখক, মোটিভেশনাল স্পিকার ও ক্যারিয়ার পরামর্শক গাজী মিজানুর রহমান।

দ্রুত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার উপায়

আমিও একজন হব

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৪৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এই পদগুলোর বিপরীতে ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছেন। সেই হিসাবে গড়ে প্রতি ২৯ জনের মধ্যে ১ জন চাকরি পাবেন।

আপনি ভুলে যান কতজন এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। আপনি কেবল নিজের ওপর এই আত্মবিশ্বাস রাখুন যে ৪৫ হাজারের মধ্যে আমিও একজন হব। পরীক্ষা হবে ৬০ মিনিটে ৮০টি এমসিকিউ প্রশ্নের ওপর। ৮০টি প্রশ্নের জন্য ৮০ মার্কস। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত মার্কস থেকে ০.২৫ করে কাটা যাবে।

যেভাবে নেবেন প্রস্তুতি

যেহেতু সময় কম তাই সব না পড়ে কেবল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পড়ুন। এখন প্রশ্ন হলো আপনি কীভাবে বুঝবেন কোন কোন টপিক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কোনগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ?

আপনি যদি বিগত বছরের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নগুলো ভালোভাবে খেয়াল করেন, তাহলে দেখতে পাবেন কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন এসেছে; বিশেষ করে ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো দেখতে পারেন।

আপনার হাতে এত সময় না থাকলে শুধু ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis’ বইটির সাজেশনটি ফলো করতে পারেন।

বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য

বাংলা অংশে বাংলা ব্যাকরণ থেকে প্রশ্ন বেশি আসে এবং সাহিত্য থেকে কম। দেখা গেছে যে বাংলা অংশে ২০টি প্রশ্নের মধ্যে ব্যাকরণ থেকে ১৮-১৯টির মতো প্রশ্ন এসেছে এবং বাকি ১-২টি প্রশ্ন আসে সাহিত্য থেকে এসেছে। তাই এখন বাংলা সাহিত্য না পড়ে আগে ব্যাকরণ অংশ ভালোভাবে জোর দিয়ে পড়ুন।

বাংলা ব্যাকরণ অংশে প্রথমে কারক-বিভক্তি ভালো করে পড়ুন। এখান থেকে ২-৪টি প্রশ্ন আসতে পারে। তারপর এককথায় প্রকাশ, বাগধারা, সমাস, সন্ধি, শব্দ ও বাক্য শুদ্ধিকরণ, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ টপিকগুলো পড়ে ফেলুন।

বাংলা সাহিত্য থেকে যেহেতু প্রশ্ন অনেক কম আসে, তাই বাংলা সাহিত্য না পড়লেও পারেন। একান্তই পড়তে চাইলে শুধু প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্নের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, জহির রায়হান, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও জসীমউদদীন পড়ুন।

ইংরেজি গ্রামার ও সাহিত্য

ইংরেজি পার্টে ইংরেজি গ্রামার থেকে প্রশ্ন থাকে ১৯-২০টি। অর্থাৎ ইংরেজি সাহিত্য থেকে মাঝেমধ্যে একটি প্রশ্ন থাকে। যেমন সর্বশেষ ২০১৯ সালে চার ধাপে ৯ সেটে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল ইংরেজি সাহিত্য থেকে। আর সেটি ছিল দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায়।

অর্থাৎ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ৯ সেটে মোট ৭২০টি এমসিকিউ প্রশ্নের মাঝে কেবল ১টি প্রশ্ন ছিল ইংরেজি সাহিত্য থেকে! তাই অল্প সময়ের প্রস্তুতির জন্য ইংরেজি সাহিত্য বাদ দিতে পারেন। আর একান্ত পড়তে চাইলে শুধু প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্ন + William Shakespeare, John Milton এবং G. B. Shaw-এর রচিত গ্রন্থের নামগুলো পড়তে পারেন।

English Grammar-এর ক্ষেত্রে আগে Vocabulary না পড়ে থাকলে নতুন করে না পড়াই ভালো। বেশি জোর দিন Parts of Speech, Tense। এই দুটি টপিক থেকে ৪-৫টা প্রশ্ন থাকতে পারে। তারপর Preposition, Correct Spelling, Right form of Verbs, Subject Verb Agreement, Voice Change, Narration, Sentence Correction পড়তে পারেন।
সঙ্গে Conditional Sentence পড়ে ফেলুন।

গণিত

পাটিগণিত থেকে শতকরা, লাভ-ক্ষতি, সুদ-আসল, গড়, সংখ্যা, বয়সসংক্রান্ত গণিত, কাজ ও সময়, অনুপাত ও ভগ্নাংশ পড়ুন। সঙ্গে লসাগু ও গসাগু থেকে বেশি বেশি প্র্যাকটিস করুন।

বীজগণিত থেকে পড়ুন—বীজগণিতের মান নির্ণয়, বীজগণিতের সরল সমীকরণ, বীজগণিতের যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ। পাশাপাশি প্র্যাকটিস করুন—উৎপাদকে বিশ্লেষণ।

জ্যামিতির অংশ থেকে কেবল বিভিন্ন প্রকার কোণ, সমকোণী ত্রিভুজ, বর্গক্ষেত্র ও আয়তক্ষেত্র বেশি বেশি প্র্যাকটিস করুন। বাকি সব বাদ দিন।

এখানে বলে রাখি, গণিতের পার্টে শতকরা, গড় ও বীজগণিতের মান নির্ণয় থেকে প্রশ্ন বেশি থাকে।

সাধারণ জ্ঞান

সাধারণ জ্ঞানের অংশে বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি—এই চার বিষয়ের ওপর সাধারণত ২০ নম্বর থাকে। তবে মাঝেমধ্যে ভূগোল ও পরিবেশ থেকে দুই-একটা প্রশ্ন এসে থাকে।

বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সাধারণ জ্ঞানের ২০ নম্বরের মধ্যে ১২-১৪টি প্রশ্ন আসে বাংলাদেশ বিষয়াবলি থেকে। বাকি ৬-৮টি প্রশ্ন এসে থাকে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং ভূগোল ও পরিবেশ থেকে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য বাংলার প্রাচীন যুগ ও মধ্যযুগ পড়ুন। এরপর বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, ছয় দফা, মুজিবনগর সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুঘল আমল, ইংরেজ আমল ভালো করে পড়ুন এবং পাশাপাশি পড়ুন অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২১।

সাধারণ জ্ঞানের অংশে বীরশ্রেষ্ঠগুলো ভালো করে পড়ুন। তাঁদের জেলা, জন্ম সাল এসব পড়ে মাথা নষ্ট করবেন না। এই মুহূর্তে বিজ্ঞান, আইসিটি নতুন করে না পড়াই ভালো। আন্তর্জাতিক থেকে তেমন প্রশ্ন থাকে না। দুই-একটা যা থাকে কেবল জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থার সদর দপ্তর কোথায়—এজাতীয় প্রশ্ন থাকে। তাই বাকি সব বাদ দিন।

আর সাম্প্রতিক থেকে দুই-একটা প্রশ্ন থাকে। তাই সব না পড়ে কেবল আলোচিত ঘটনাগুলো পড়ুন। বাকি সব বাদ দিন। সময় না পেলে সাম্প্রতিক না পড়াই উচিত। সাধারণ জ্ঞানের সাম্প্রতিক প্রশ্ন পড়তে চাইলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাংলাদেশে ৫জি ইন্টারনেট, মাতারবাড়ী প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরের কেবল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো পড়তে পারেন।

অন্যান্য প্রস্তুতি

প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সামগ্রিক প্রস্তুতির জন্য উপরিউক্ত টপিকগুলো ছাড়াও বিসিএস প্রিলির বিগত সালের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে পারেন; বিশেষ করে ৩৫তম-৪৩তম।

তবে বিসিএস প্রিলির সুশাসন, ভূগোল, ইংলিশ লিটারেচার, বাংলা লিটারেচার এসব চাইলে বাদ দিয়ে পড়তে পারেন। তাহলে দ্রুত শেষ করতে পারবেন। হাতে সময় না থাকলে এসবের ব্যাখ্যা না পড়ে শুধু উত্তরগুলো পড়লেই হবে।

নিজে নিজেই পরীক্ষা দিন

আপনি পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে নিজে নিজে বাসায় বসে ঘড়ি ধরে মডেল টেস্ট থেকে পরীক্ষা দিয়ে দেখুন, আপনি কত পান। মডেল টেস্ট বইটি বিষয়ভিত্তিক হলে ভালো। মানে—বাংলা ২০, ইংরেজি ২০, সাধারণ ২০, গণিত ২০ এভাবে আলাদা করে দেওয়া থাকতে হবে। ফলে সহজে বুঝতে পারবেন, কোন বিষয়ে বেশি আর কোন বিষয়ে কম নম্বর পাচ্ছেন।

যে বিষয়ে কম নম্বর পাবেন, পরীক্ষার আগে সেই বিষয়টি ভালোভাবে ঝালিয়ে নিতে পারলে আশা করি ভালো করতে পারবেন। যদি মডেল টেস্টে ৫০-৬০ নম্বর পান তাহলে আপনার প্রস্তুতি ধরে নেবেন মোটামুটি ভালো। আর যদি ৬০-৭০ বা তারও বেশি পান, তাহলে ধরে নেবেন আপনার প্রস্তুতি অনেক ভালো।

মনে রাখবেন, এই কয়দিন ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে আপনার ও আপনার পরিবারের ভাগ্যে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। তাই সময় নষ্ট না করে বেশি বেশি পড়ুন শুধু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো; যেন পরীক্ষার হলে গেলে কনফিউজ না হন।

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top