ইন্টারভিউর প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে : এ টু জেড

ইন্টারভিউর প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে : এ টু জেড

জুনায়েদ হাসান::::::::

বর্তমান যুগে অন্যদের টেক্কা দিয়ে উপরে ওঠা বড়ই কঠিন। কর্মক্ষেত্র বাড়ার সাথে সাথে কর্মোপযোগী লোকের সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে নিজের পছন্দের কাজে যোগ দেয়ার চেষ্টা করেও অনেকে সফল হতে পারছেন না। আর এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যদিও তার কর্মদক্ষতা অন্যদের থেকে ভালো বা কাজের ব্যাপারে জানাশোনাও ভালো। কিন্তু কোম্পানির কাছে বা ইন্টারভিউ বোর্ডের লোকদের কাছে যদি নিজেকে ও নিজের দক্ষতাকে ঠিকমতো তুলে ধরতে না পারে তাহলে কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত চাকরি মিলবে না। এই লেখায় ইন্টারভিউ প্রস্তুতির ব্যাপারে আলোচনা করা হলো।

কোনো চাকরির ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইন্টারভিউ। যেখানে নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারলে চাকরি অধরাই থেকে যাবে। তাই ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে কিছু পরিকল্পনা নেয়া উচিত। প্রত্যেক ইন্টারভিউর ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, যা প্রায় সব চাকরিদাতারাই করে থাকেন। যেমন- ‘আপনি আমাদের কোম্পানিকে এমন কী দিতে পারবেন যা অন্য কেউ দিতে পারবে না? ‘আপনি কেন আমাদের কোম্পানিতে চাকরি করতে চাচ্ছেন’। এসব প্রশ্নের উত্তরে কী বলা যেতে পারে তা শুরুতেই ভেবে নেয়া উচিত। কারণ এগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

ইন্টারভিউর আগে যেসব প্রস্তুতি নেবেন

  • একটি কাগজ নিন। এর এক পাশে লিখুন যে, উক্ত কোম্পানি তাদের চাকরির জন্য কী যোগ্যতা বা দক্ষতার উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। অন্যপাশে লিখুন আপনার মধ্যে কোম্পানিকে সন্তুষ্ট করার মতো কী দক্ষতা বা গুণ আছে। এরপর চেষ্টা করুন আপনার দক্ষতাগুলো কোম্পানির চাহিদার সাথে মানানসই করতে। অর্থাৎ আপনার দক্ষতাগুলোকে এমনভাবে সাজিয়ে লেখার চেষ্টা করুন, যাতে মনে হয় যে- এ দক্ষতাগুলো কোম্পানির চাহিদাসম্পন্ন। ইন্টারভিউতে যখন তারা আপনার দক্ষতা জানতে চাইবে তখন আপনার লেখাগুলো বলে তাদের বোঝাতে পারবেন যে আপনার দক্ষতাগুলো তাদের চাহিদার সাথে মিলে যাচ্ছে।
  •  কোম্পানির ব্যাপারে রিসার্চ করুন। যাতে প্রশ্নকর্তাকে বুঝাতে পারেন যে, আপনি কোম্পানির ব্যাপারে সবকিছু ভালোভাবে জেনে এসেছেন। আমাদের দেশে এ রকম রিসার্চ না করার ফলে অনেকেই প্রশ্নকর্তার সামনে হিমশিম খেয়ে যায়, যখন প্রশ্নকর্তা তাকে কোম্পানির ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করে।
  •  নিজের ব্যাপারে সংক্ষেপে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য একটি প্যারাগ্রাফ লিখে ফেলুন। কারণ বেশিরভাগ সাক্ষাৎকারে নিজের ব্যাপারে বলতে বলা হয়। আপনি এক্ষেত্রে আপনার দক্ষতা, দুর্বলতা, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ইত্যাদি উল্লেখ করতে পারেন।
  • কাজের সাথে সম্পৃক্ত আপনার এরকম কমপক্ষে ৫টি বাস্তব সাফল্যের কাহিনী তৈরি করে রাখুন। ইন্টারভিউতে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তখন যাতে আপনি অল্প সময়েই বলতে পারেন।
  • ইন্টারভিউয়ারকে চাকরি বা কোম্পানির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার জন্য কিছু প্রশ্ন তৈরি করুন। ইন্টারভিউয়ার যখন আপনাকে জিজ্ঞেস করবে আপনার কোনো প্রশ্ন আছে কি-না, তখন যাতে আপনার উত্তর ‘না’ না হয়। তাকে যখন কোম্পানি বা চাকরির ব্যাপারে প্রশ্ন করবেন তখন সে বুঝবে, আপনি এই কোম্পানিতে কাজ করার জন্য খুব আগ্রহী।
  • আপনার রিজিউম বা সিভিতে কোম্পানির চাহিদার আলোকে তথ্যগুলো যথাসম্ভব উল্লেখ করার চেষ্টা করুন।

ইন্টারভিউতে করা সাধারণ প্রশ্নগুলোর উত্তর তৈরি করুন

  •  আপনার সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।
  • আপনি আপনার শেষ কর্মস্থলটি কেন ছেড়ে দিয়েছেন। এই ধরনের প্রশ্নে নেগেটিভ উত্তর না দেয়াই ভালো। যেমন – সেখানের পরিবেশ ভালো ছিল না বা আমি সেখানের কলিগদের সাথে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি নি।
  • আপনি আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে কী কী জানেন?
  • আপনার লক্ষ্য কী?
  •  আপনার বিশেষ গুণ ও আপনার দুর্বলতা কী?
  • এখানে কেন কাজ করতে চাচ্ছেন?
  • আমরা আপনাকে কেন চাকরি দেবো?
  • আপনি কী রকম বেতন আশা করছেন?

ইন্টারভিউতে যাওয়ার আগে

  • কয়েক কপি সিভি সাথে রাখবেন।
  • আপনার রেফারেন্সের কপি সাথে রাখবেন। যাদের নাম রেফারেন্সে আছে তাদের অবশ্যই এ ব্যাপারে অবগত করবেন।
  • একটি নোট প্যাড রাখবেন। ইন্টারভিউয়ার যখন নোট প্যাডটি দেখবে তখন সে ভাববে যে, আপনি সময়ের কাজ সময়ে করতে পছন্দ করেন এবং কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এড়াতে চান না। যার জন্য আপনি নোট প্যাড ব্যবহার করছেন।
  • প্রফেশনালদের মতো করে সাজুন। আপনার ড্রেসআপ যেন খুব বেশি আকর্ষণীয় বা বাহারি রঙের না হয়।
  • নিজেকে আয়নায় দেখুন। আপনাকে পরিপাটি দেখালে কনফিডেন্স এমনিতেই বেড়ে যাবে।
চাকরির ইন্টারভিউ
নির্দিষ্ট সময়ের কমপক্ষে ১৫ মিনিট আগে আসার চেষ্টা করুন। এতে আপনি নিজেকে শেষবারের মতো প্রস্তুত করতে কিছু সময় পাবেন।

ইন্টারভিউ দেয়ার স্থানে

  • নির্দিষ্ট সময়ের কমপক্ষে ১৫ মিনিট আগে আসার চেষ্টা করুন। এতে আপনি নিজেকে শেষবারের মতো প্রস্তুত করতে কিছু সময় পাবেন।
  • আপনার দরকারি জিনিসগুলো ঠিক আছে কি-না দেখে নিন। যাতে ইন্টারভিউয়ার কিছু চাওয়ার সাথে সাথেই দিতে পারেন। আপনার উত্তরগুলোকে মনে মনে একবার পড়ে নিন।
  • রেস্টরুমে যান এরপর দেখুন আপনার চলাফেরা এবং জামা কাপড়ে কোনো ত্রুটি আছে কিনা। থাকলে তা ঠিক করে ফেলার চেষ্টা করুন। হয়তো ভাবতে পারেন যে, এটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন এমনও তো হতে পারে, পথে কোনো কারণে আপনার জামায় ময়লা লেগে গেছে। আপনি কি চাইবেন যে ইন্টারভিউ রুমে প্রশ্নকর্তা আপনাকে এরকম অবস্থায় দেখুক? তাই আপনার উচিত হবে রেস্টরুমে যেয়ে নিজেকে একবার ভালোভাবে দেখে নেয়া।
  • রিস্পেশনিস্টের কাছে প্রফেশনালভাবে আপনার নাম বলুন। অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নকর্তা রিস্পেশনিস্টকে দায়িত্ব দিয়ে রাখেন চাকরিপ্রার্থীদের ওপর নজর রাখতে। আপনি অবশ্যই চাইবেন না যে সে বলুক – আপনি ভদ্র নন বা আপনি ইন্টারভিউর কারণে খুব ভীত ছিলেন।
  • প্রশ্নকর্তার সাথে দেখা হলে তার সাথে হাড়-ভাঙা নয় বরং আলতোভাবে হ্যান্ডশেক করুন।
  • মুখে সুন্দর হাসি ও তার চোখের ওপর দৃষ্টি রাখুন।

ইন্টারভিউ চলাকালে

  • প্রশ্নকর্তার সাথে এমনভাবে কথা বলুন যাতে সে বুঝতে না পারে যে, আপনি আগে থেকেই এ সব কিছু মুখস্থ করে রেখেছেন।
  • শান্ত হোন এবং ইন্টারভিউর মজা নিন। যদি অস্বস্তি বোধ করেন তাহলে আপনি ঠিকভাবে ইন্টারভিউয়ারের উত্তর দিতে পারবেন না।
  • কোম্পানির সম্পর্কে আরো জানার চেষ্টা করুন। এতে আপনার উত্তরগুলো সুন্দরভাবে সাজাতে পারবেন।
  • প্রশ্ন করুন ও উত্তর শুনুন। পারলে কিছু উত্তর নোট করুন। এতে চাকরিদাতা বুঝবেন যে, আপনি সেখানে চাকরি করতে বেশ আগ্রহী।
  • ইন্টারভিউ শেষ হয়ে গেলে তাকে ধন্যবাদ জানান। তার বিজনেস কার্ড বা ভিজিটিং কার্ড নিন। যাতে পরবর্তী সাক্ষাতের জন্য তাকে মেইল বা কল করতে পারেন।

ইন্টারভিউ শেষে

  • এখন কেমন লাগছে এবং কী ভাবছেন তা তাড়াতাড়ি লিখে ফেলুন।
  • দিন শেষে ভাবুন আপনার কাজের অগ্রগতি কেমন ছিল।
  • ইন্টারভিউয়ারকে একটি, ধন্যবাদমূলক মেইল বা মেসেজ পাঠান। যাতে সে আপনার দক্ষতা ও গুণগুলোকে আরেকবার মনে করতে পারে।

এতসব উপদেশ কোনো কাজে লাগবে না যদি আপনি তা নিজের জীবনে ব্যবহার করতে না পারেন। তাই চেষ্টা করুন এ উপদেশগুলোর গুরুত্ব বোঝার।

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top