কলসেন্টার : বাড়ছে চাকরির সুযোগ

বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে কলসেন্টার। আর এসব কলসেন্টারে তরুণদের কাজের ক্ষেত্র বাড়ছে। এখানে স্থায়ী চাকরির পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজেরও সুযোগ আছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি এই চাকরিতে যুক্ত হচ্ছেন। অন্য চাকরিতে ঢোকার ক্ষেত্রেও এই চাকরির অভিজ্ঞতা বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে কাজ করে।
কলসেন্টারের মূল কথা হচ্ছে, ফোনের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা দেয়া। এই পেশায় তরুণেরাই বেশি আগ্রহী। গ্রাহকদের সাথে ফোনে আলাপের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন পণ্য, সেবার চাহিদা ও অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানা যায়। কেউ প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড নিয়ে বিপণন করলে এটি বিপণন জ্ঞান বাড়াতে সাহায্য করে। এতে করপোরেট সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে কলসেন্টারের ক্যারিয়ার সম্ভাবনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এর মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক বেকার যুবকের অনায়াসে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। কলসেন্টার ধারণাটি অনেকের কাছে পরিষ্কার নয়। কলসেন্টার হচ্ছে ক্লায়েন্টদের ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দেয়ার ব্যবস্থা। যেসব কোম্পানি চায় তাদের কাস্টমার সার্ভিস ২৪ ঘণ্টা চালু থাকুক, তারা নির্ভর করে কলসেন্টারের ওপর।

call-center

কলসেন্টার
যুক্তরাষ্ট্রের বড় কোনো এক করপোরেট প্রতিষ্ঠান তাদের কাছে আসা গ্রাহকদের ফোন নিজেরা রিসিভ না করে বাংলাদেশের কোনো এক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিলো। এখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানটিতে ফোন করলে সেটি তাদের কাছে না গিয়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে চলে আসবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানটিতে। এবার ফোনের এ প্রান্তে বসে থাকা বাংলাদেশের কর্মীরা ফোনকল রিসিভ করে গ্রাহকের সমস্যাটি শুনে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানটির সার্ভার ঘেঁটে তাৎক্ষণিক সমাধান দেবে অথবা সমাধান না দিতে পারলে সমস্যাটি টুকে রেখে পরে করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেবে। এই যে ফোন রিসিভ করার কাজটি যে প্রতিষ্ঠান করল, তারাই হলো কলসেন্টার।
কথা হলো যুক্তরাষ্ট্রে এত দক্ষ কর্মী থাকতে তারা আমাদের দেশে কেন সেবা নিতে আসবে? এর কারণ, আমাদের দেশের সহনশীল শ্রমমূল্য। তবে তাদের কাছে যেটা সহনশীল সেটা আমাদের কাছে পরিমাণে যথেষ্ট।

কাজের ক্ষেত্র
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের সভাপতি আহমাদুল হক জানিয়েছেন, বিটিআরসির নিবন্ধিত কলসেন্টারগুলোর বেশির ভাগই স্থানীয়পর্যায়ে গ্রাহকসেবা দিচ্ছে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান বিদেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সেবাও দিচ্ছে। এই খাতে দিন দিন কাজের চাহিদা বাড়ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই খাতে ৪০-৫০ হাজার নতুন কর্মী যুক্ত হবে।

কাজের ধরন
বর্তমানে বাংলাদেশের কলসেন্টারগুলোয় দুই ধরনের সেবা দেয়া হয়, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সেবা। স্থানীয়পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি এই সেবা দেয় টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলো। উন্নত দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কল ফরওয়ার্ডের মাধ্যমে তাদের গ্রাহকদের কলটি পাঠিয়ে দেয় নির্দিষ্ট কোনো কলসেন্টারের নম্বরে। কলসেন্টারে কর্মরতদের প্রধান কাজ হচ্ছে গ্রাহকের সঠিক সেবা নিশ্চিত করা। গ্রাহকদের ফোনের মাধ্যমে সেবা দেয়াই কলসেন্টারের প্রধান কাজ। গ্রাহকদের প্রতিটি কল একেক ধরনের হয়, তাই কাজটি একঘেয়ে হয় না। আমাদের দেশের কলসেন্টারে দুই ধরনের কাজ হয়। একটি হলো ‘ইনকলিং সার্ভিস’ বা ‘ইনবাউন্ড’, আরেকটি ‘আউটকলিং সার্ভিস’ বা ‘আউটবাউন্ড’। ইনবাউন্ড হচ্ছে পুরোটাই কাস্টমার সার্ভিস আর আউটবাউন্ড কিছুটা টেলিমার্কেটিংয়ের মতো, অর্থাৎ কলসেন্টার থেকে স্ব-উদ্যোগে ফোন করে কিংবা ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে নানা তথ্য পৌঁছে দেয়া।

যোগ্যতা
বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়ে যেকোনো বিষয়ে পড়লেই এই চাকরির জন্য আবেদন করা যায়। গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা শিক্ষানবিশ পদের জন্য স্নাতক পর্যায়ে পড়ছেন, এমন শিক্ষার্থী এবং এর ওপরের পদের জন্য স্নাতক পাস নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া তাকে অবশ্যই অফিসের কাজের জন্য মৌলিক কম্পিউটার জ্ঞান জানা থাকতে হবে। শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা ও উত্তর দেয়ার কাজে দক্ষ হতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ থেকে ৯ ঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন শিফট চালু আছে।

দক্ষতা
কলসেন্টারে কাজের জন্য প্রধান দক্ষতা হচ্ছে, গ্রাহকের কথা মন দিয়ে শোনা। কলসেন্টারে কাজ করার জন্য কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতা, ইতিবাচক মানসিকতা, সহযোগিতা করার মানসিকতা এবং একসাথে বিভিন্ন কাজ করার সামর্থ্য থাকতে হবে। এখানে কাজের যোগ্যতা হলো যোগাযোগের ভালো দক্ষতা। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই পেশায় যারা আগ্রহী তাদের ধৈর্যশীল হতে হবে। গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করতে হবে।

নিয়োগ
কলসেন্টারকর্মীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ওয়েবসাইটে ও চাকরির পোর্টালগুলোয় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে চাহিদা অনুযায়ী জীবনবৃত্তান্ত দেখে। পছন্দ হলে আবেদনকারীর মৌখিক যোগাযোগ দক্ষতা পরীক্ষার জন্য কথা বলার যোগ্যতা (ভয়েস) পরীক্ষা করা হয়। এরপর সাক্ষাৎকার ও কর্মভিত্তিক পরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে।

বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধা
বিভিন্ন কলসেন্টার ঘণ্টা অনুসারে বেতন দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মানের ওপর বেতন নির্ভর করে। সপ্তাহে দুই দিন ছুটি থাকে। তবে কেউ যদি ছুটির দিনেও অফিস করেন, সে ক্ষেত্রে বাড়তি বেতন দেয়া হয়। এই পদে থেকে ভালো দক্ষতা দেখাতে পারলে অনেক ওপরের পদে যাওয়া সম্ভব। অনেক সময় এসব পদের অভিজ্ঞতা বিভিন্ন চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
এ পেশায় ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা হবে আপনার, যা ভবিষ্যতে ক্যারিয়ারকে আরো সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে। কলসেন্টার পেশায় আপনার বিস্তর অভিজ্ঞতা আপনাকে বিদেশী কোনো করপোরেট কোম্পানির কর্মী হতে দারুণ সহযোগিতা করবে। ভাগ্য ভালো থাকলে চাকরির সুযোগ পেতে পারেন দেশের বাইরেও।

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top